সাম্প্রতিক সময়ে দেশের
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জননিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার সাময়িক
স্বস্তি এনে দিলেও তাদের কর্মকাণ্ডের ধরন এবং অন্য অপরাধীদের সক্রিয়তা
ইঙ্গিত দেয় যে অপরাধজগতের মূল শিকড় এখনো অনেক বিস্তৃত। শুধু তা-ই নয়,
বিভিন্ন স্থানে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি এবং সহিংসতা প্রতিনিয়ত ঘটছে,
যা সাধারণ মানুষের জীবনকে অনিরাপদ করে তুলেছে। বিশেষত গণ-অভ্যুত্থানের পর
কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আবারও অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে
তোলার চেষ্টা করছে।
তাদের ছত্রচ্ছায়ায় নতুন প্রজন্মের সন্ত্রাসীরা
সংগঠিত হচ্ছে এবং চাঁদাবাজি, জমি দখল, পশুর হাটের নিয়ন্ত্রণ, এমনকি সিটি
করপোরেশনের ময়লা বাণিজ্য ও ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসায়ও আধিপত্য বিস্তারের
চেষ্টা করছে। ঘটছে হত্যাকাণ্ড।
রাজধানীর পল্লবীতে গত বুধবার দুপুরে এক
দম্পতিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। জয়পুরহাটে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে
নিহত হয়েছেন এক ছাত্রদল নেতা।
এ ছাড়া দেশের চার জেলায় হত্যা করা হয়েছে
আরো চারজনকে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো
জনমনে আরো আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পল্লবীতে দম্পতিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা,
জয়পুরহাটে ছাত্রদল নেতাকে হত্যা, সিলেটের কানাইঘাটে শ্রমিক নেতা খুন,
সন্দ্বীপে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, ঝিনাইদহে জমিসংক্রান্ত বিরোধে কৃষক
হত্যা এবং কিশোরগঞ্জে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা-এগুলো
বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিরই ইঙ্গিত
বহন করে।
এসব ঘটনায় যেমন সামাজিক অস্থিরতার চিত্র উঠে আসে, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
সেই
সঙ্গে নির্বাচন ও অন্যান্য কারণে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বৃদ্ধির কারণে দেশে এক
ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা সেই অস্থিরতার সুযোগ
নেওয়ারও চেষ্টা করছে। আইন-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা দেশের অর্থনৈতিক
কর্মকাণ্ডেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মব সন্ত্রাস।
বিশ্লেষকদের ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে।
সরকার নানাভাবে চেষ্টা
করলেও ফলাফল আশানুরূপ নয়, বরং জনমনে শঙ্কা আরো বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই
পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ব্যবস্থায়
ফিরে যাওয়া প্রয়োজন।
আমরা মনে করি, সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে
অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেবল শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করাই
যথেষ্ট নয়, তাদের পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া এবং তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে
দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। পাশাপাশি ক্ষুদ্র পরিসরে ঘটে
যাওয়া অপরাধগুলোকেও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে এবং অপরাধীদের দ্রুত
আইনের আওতায় আনতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড়
চ্যালেঞ্জ।