ঘূর্ণিঝড়
রিমালের তা-বে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকা। কোথাও উপড়ে গেছে
বিদ্যুতের খুঁটি, কোথাও গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও
নিরাপত্তাজনিত কারণের বন্ধ আছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। সব মিলিয়ে পল্লী বিদ্যুতের
৬৫টি সমিতিতে গ্রাহক সংযোগ বন্ধ আছে। উপকূলীয় এলাকায় ২ কোটি ৭০ লাখ ৭৯
হাজার ৬৩১ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ,
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক হিসাবে এই তথ্য দেওয়া হয়।
ঝড়ে
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি সমিতির মোট ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪৭ হাজার
৭০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ২১
হাজার ১৫০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা গেছে। এখনও বিদ্যুৎবিহীন আছে ২
কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ গ্রাহক। আরইবির ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পোল নষ্ট হয়েছে
২ হাজার ৩৯২টি, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ৯৮২টি, স্প্যান (তার
ছেঁড়া) ৬২ হাজার ৪৫৪টি, ইন্সুলেটর ভেঙেছে ২১ হাজার ৮৪৮টি, মিটার নষ্ট হয়েছে
৪৬ হাজার ৩১৮টি। আরইবির দাবি, সার্বিকভাবে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি ৭৯ কোটি ২
লাখ টাকা।
এদিকে রিমালের প্রভাবে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন
কোম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পোল নষ্ট হয়েছে ২০টি, পোল
হেলে পড়েছে ১৩৫টি, বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে ২৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার, ১১
কেভি পোল ফিটিংস নষ্ট হয়েছে ১৪২ সেট, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১২টি, ১১
কেভি ইন্সুলেটর নষ্ট হয়েছে ১৩৪টি। প্রাথমিকভাবে এই কোম্পানির ক্ষতি ধরা
হয়েছে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য
অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎবিহীন গ্রাহক সংখ্যা ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১
জন।
এদিকে জ্বালানি বিভাগ থেকে জানায়, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী এলএনজি
টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে
স্থাপনাগুলোর কোনও ক্ষতি হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কমানো এলএনজি সরবরাহ
গতকাল বিকাল থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে বর্তমানে তা ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে
উন্নীত হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকেই তা ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা
সম্ভব হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় চলমান থাকায়
ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ সরেজমিন পরিদর্শন করে নির্ণয় সম্ভব হয়নি।
প্রাথমিকভাবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করে
ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ২৪
ঘণ্টাব্যাপী কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তদারকি করা হচ্ছে। জেলা পর্যায় ও
সমিতিভিত্তিক কন্ট্রোল রুম রয়েছে। পরিবহন ঠিকাদারকে স্ট্যান্ডবাই রাখা
হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন
কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এলাকায় সব কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে রক্ষণাবেক্ষণ
কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট
এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আরইবি ও ওজোপাডিকোর লোকজন
প্রয়োজনীয় মালামালসহ প্রস্তুত রয়েছে। ঝড় বা বাতাস কমার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ
সংযোগ স্বাভাবিক করা হবে।
আরইবির এক সদস্য জানান, ঝড় শুরুর পর থেকে
উপকূলীয় সব এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ
সরবরাহের বাইরে ছিল প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহক। সকাল থেকে কিছু কিছু
জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হচ্ছে। তিনি জানান,
আরইবি কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হলে লাইনগুলো আবার চালু
করা হবে। তবে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্যই তারা বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ
করে রেখেছেন বলে জানান তিনি।