উপাচার্য-শিক্ষক
সমিতির দ্বন্দ্বে প্রায় এক মাসের মত বন্ধ আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
(কুবি)। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে
শিক্ষকদের এই আন্দোলনের প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক
ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড.
হাসিনা খান।
শুক্রবার ( ২৪ মে) বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে
(বার্ড) একটি কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় এসব
কথা বলেন তারা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যে সমস্যা চলছে তা উত্তরণের কোন উপায় আছে কি না এমন প্রশ্নে
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, এভাবে
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়াটা দুঃখজনক। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে
শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের কারনে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অতীতে
আমি শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছি। তাতে আমার মনে হয়, এখানকার প্রশাসন এবং
শিক্ষক সমিতি অনতিবিলম্বে একসাথে বসে তারাই তাদের সমস্যার সমাধান করবে। আমি
সিন্ডিকেট সদস্য, সিন্ডিকেট থেকে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুইটি কমিটি
গঠিত হয়েছে একটি কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে আরেকটি কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু
করতে যাচ্ছে। কমিটি কমিটির মতো কাজ করবে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় খোলার
ব্যাপার কমিটির উপর নির্ভর করে না। এটি নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন
এবং শিক্ষক সমিতির উপরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং শিক্ষক সমিতি
দায়িত্বশীল আচরণ করবে এবং অনতিবিলম্বে দুইপক্ষ বসে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিবে
একজন শিক্ষক হিসেবে সেটাই আমি প্রত্যাশা করি। আমি কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং শিক্ষক সমিতিকে সেভাবেই অনুরোধ করবো।
তিনি
আরো বলেন, কমিটি দুটো যেটা হয়েছে এর মধ্যে একটা তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন
করেছে, আরেকটির কার্যক্রম শুরু করবে। তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে
বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে চলবে কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটা আরো দায়িত্বশীল
ব্যক্তিরা আছেন। সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এই ব্যাপারে অবগত
আছেন। সুতরাং পরবর্তীতে বসে সেই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া যাবে এবং নিকট
ভবিষ্যতেই সেই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া যাবে। সেই সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে
কোন জায়গায় রিফর্ম করা দরকার সেই রিফর্মটি হবে। কিন্তু ঐ পর্যন্ত
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রশাসন এবং শিক্ষক সমিতি স্বপ্রনোদিত হয়ে বসবেন এবং যদি দূরত্ব থাকে সেটা
কমিয়ে নিয়ে আসবে এটা পরস্পরের মধ্যে ইগোর কোন বিষয় নয়। এটা দায়িত্বশীলতার
বিষয় দ্বায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে দুই পক্ষ বসে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিবে এবং
শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম আবার শুরু হবে বলে আমি আশা করি।
সাম্প্রতিক
পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে অধ্যাপক
ড. এ এফ এম মাকসুদ কামাল বলেন, "আমি এখানে কোন পক্ষেই কথা বলবো না তবে
বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। যে কারনেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হোক সেটা শিক্ষকদের
কারনেই হোক বা প্রশাসনের কারনে হোক এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে যে একটা মাস চলে
গেছে এর দ্বায়িত্ব এই শিক্ষকদেরকেই নিতে হবে। এখন সেই শিক্ষক প্রশাসনের হোক
অথবা শিক্ষক সমিতির হোক। এবং ভবিষ্যতে যেনো এই ধরনের ঘটনা না ঘটে এর জন্য
সকল পক্ষকে সজাগ থাকতে হবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের
স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী কেয়া দাশ বলেন, ' শিক্ষকদের আন্দোলনে
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকতে কখনো দেখিনি। উপাচার্য ও শিক্ষকদের এই দ্বন্দ্বে
মূল ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরাই। আমরা পরীক্ষা পিছাতে বললে শিক্ষকরা সব সময়
বাঁধা দিতেন। কিন্তু এখন তারাই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আছে। প্রশাসনও
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। দ্রুত এর সমাধান হোক।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নিলয় সরকার বলেন,
'আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত খুলুক। ভর্তি হওয়ার পর এমন বন্ধ আমাদের উপর
সামাজিক প্রেসার তৈরি করেছে। আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অনেকগুলো মিড, এসাইনমেন্ট বন্ধ হয়ে আছে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন দাবি
দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করলে এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে পারে কী না এমন
প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন,
'এটা
খুব দুঃখজনক। আন্দোলন করতে হবে কেন? দেশে এখনো আইনের শাসন কার্যকর আছে।
শিক্ষার্থীদের কেন জিম্মি করা? শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটা মাস জীবন থেকে
নষ্ট হয়ে যাওয়া মানে অনেক কিছু। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি আন্দোলন করে
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার কোন মানে হয় না আজকালকার দিনে। আরো অনেক
প্রক্রিয়ায় নিজের অভিযোগ, মতামত স্থাপন করা যায়। কিন্তু আন্দোলন করে
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া কোন যৌক্তিকতা আমি দেখি না। যারা অন্যায়ভাবে
এসব করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া উচিত।'