
সিলেট
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠের অনুশীলনে বুধবার সকালে
দৃশ্যটা চোখে পড়ার মতোই ছিল। দূর থেকে হেঁটে আসছিলেন মোহাম্মদ আমির।
সান্দিপ লামিছানে সেখানে ছিলেন আগে থেকেই। মাঠে লামিছানেকে দেখেই ভেসে এল
আমিরের ডাক, “লামিৃ লামিৃ কেমন আছো?”
সেদিকে তাকিয়েই লামিছানের ঝলমলে হাসি খেলে গেল লামিছানের চোখে-মুখে। এগিয়ে গিয়ে হাত মেলালেন, পিঠ চাপড়ে দিলেন আমিরের।
দুজনের
গায়ে দুই দলের জার্সি, অনুশীলনের জায়গা আলাদা। আমির বিপিএলে এসেছেন সিলেট
টাইটান্সের হয়ে খেলতে, রাজশাহী ওয়ারিয়র্সে লামিছানে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি
ক্রিকেটে যেমন হয়, এই টুর্নামেন্টগুলো তো এক ধরনের মিলনমেলাও। আমির ও
লামিছানের দেখা হওয়ার মুহূর্তটেও যেমনটি ফুটে উঠল।
পুরোনো সম্পর্ক ঝালাই
তো হলোও, লামিছানের জন্য দিনটি পুরোনো দিনে ফিরে যাওয়ার উপলক্ষও। বিপিএল
তার চেনা মঞ্চ। এই আঙিনাতেও পা পড়েছে নেপালের প্রথম সত্যিকারের আন্তর্জাতিক
তারকার। তবে এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় সাত বছর।
২০১৮-১৯ বিপিএলে
খেলেছিলেন লামিছানে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে। তখন তিনি নেপালের উঠতি লেগ
স্পিনার। বয়স ছিল মোটে ১৮। তবে ততদিনে আইপিএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশের স্বাদ
পেয়ে গেছেন। বিপিএলে সুযোগ পেয়েছিলেন ছয়টি ম্যাচে। উইকেট মাত্র চারটি পেলেও
রান দিয়েছিলেন ওভারপ্রতি মাত্র ৫.৬৬।
পরের সময়টায় ক্রমেই আলো ছড়িয়েছেন
তিনি ক্রিকেট বিশ্বময়। বিভিন্ন লিগে খেলেছেন, নেপালের হয়ে গড়েছেন রেকর্ডের
পর রেকর্ড। রাশিদ খানকে ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১০০ উইকেটের বিশ্বরেকর্ডও
গড়েছেন। নেপাল এখনও উঠতি ক্রিকেট শক্তি, তবে লামিছানে ক্রিকেট বিশ্বের
পরিচিত মুখ।
সেই লামিছানে এতদিন পর আবার এসেছেন বিপিএলে। আগের দফায় ছয়
ম্যাচের তিনটি খেলেছিলেন সিলেটে। দীর্ঘদিন বিপিএল খেলতে এসে এবার তিনি আছেন
ভিন্ন দলে। তবে শুরুটা হচ্ছে সেই সিলেট থেকেই। সেবার যে হোটেলে থেকেছেন
তার দল, এবারের দলের আস্তানাও সেই একই হোটেল।
হোটেল লবিতে দেখা হতেই হাসিমুখে বললেন বললেন, তার মনে উঁকি দিচ্ছেন অনেক স্মৃতি।
“হ্যাঁ, এখানকার মানুষ, অনেক ক্রিকেটার সবই আমার পরিচিত। ব্যাপারটা দারুণ। আবার বিপিএলে খেলতে পেরে আমি সত্যিই রোমাঞ্চিত।”
তাকে
পেয়ে রোমাঞ্চিত থাকার কথা তার দলেরও। তার মতো বিশ্বমানের একজন লেগ স্পিনার
পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন একাই। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মেও আছেন তিনি।
কদিন আগেই শেষ হওয়া নেপাল প্রিমিয়ার লিগে ৯ ম্যাচে ওভারপ্রতি পাঁচের কম রান
দিয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন।
এবার রাজশাহী ওয়ারিয়র্সে
নাম লেখানোর গল্পটিও শোনালেন তিনি অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি
হয়ে। কোচ হান্নান সরকারের বার্তা পেয়েই নিজের করণীয় ঠিক করে ফেলেন ২৫ বছর
বয়সী লেগ স্পিনার।
“নেপাল প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল দেখছিলাম, তখনই তিনি
আমাকে টেক্সট করেন যে আমি রাজশাহী ওয়ারিয়র্সে যোগ দিতে চাই কি না। খুব অল্প
সময়ের মধ্যেই আমরা সবকিছু চূড়ান্ত করে ফেলি। আমি উনার প্রতি কৃতজ্ঞ যে
তিনি বিষয়টিকে খুব সহজ করে দিয়েছেন।”
বিপিএলে তার প্রথম আসর থেকে এবারের অভিযানের মাঝে দীর্ঘ সময়টার পার্থক্যও তুলে ধরলেন তিনি।
“২০১৯
সালের পর লম্বা একটা বিরতি হয়ে গেল। এর মধ্যে এখানকার ক্রিকেট সংস্কৃতি
আরও উন্নত হয়েছে, অবকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। আর ভক্তরা তো বরাবরের মতোই
দুর্দান্ত।” রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের শক্তিমত্তা নিয়েও বেশ আত্মবিশ্বাসী এই লেগ
স্পিনার। তার মতে, অভিজ্ঞ বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে শক্তিশালী স্থানীয়
খেলোয়াড়দের সমন্বয়ই তাদের বড় শক্তি। ‘‘আমাদের দলে টপ অর্ডার থেকে শুরু করে
নিচের সারির ব্যাটসম্যান, স্পিনার এবং ফাস্ট বোলার সব মিলিয়ে একটি দারুণ
ভারসাম্য আছে। আমাদের নাজমুল হোসেন আছেন যিনি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন,
মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছেন। এছাড়া বিদেশি খেলোয়াড়দেরও ভালো
অভিজ্ঞতা আছে। সব মিলিয়ে আমরা বেশ আত্মবিশ্বাসী।”
ক্রিকেটের ক্ষেত্রে
নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের দারুণ একটি মিল আছে। দুই দেশের মানুষই ক্রিকেট
পাগল। বাংলাদেশের মতো হিমালায় কন্যা দেশটিতেও ক্রিকেটের উন্মাদনা তীব্র।
বিপিএলের আগে সেই ভক্ত-সমর্থকদের প্রতি ভালোবাসাটুকু জানিয়ে রাখলেন
লামিছানে।
“ক্রিকেটে আমার শুরুর দিন থেকেই তারা আমাকে সমর্থন দিয়ে
আসছেন। আমি তাদের ভালোবাসার কাছে কৃতজ্ঞ। আশা করি তারা পাশে থাকবেন। আমরা
ট্রফি জেতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
