শুক্রবার ২৮ নভেম্বর ২০২৫
১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
তফসিলের দিন থেকেই কঠোর অবস্থান ইসির, ভোটে তিন স্তরের নিরাপত্তা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৩০ এএম আপডেট: ২৮.১১.২০২৫ ১:০৭ এএম |





  তফসিলের দিন থেকেই  কঠোর অবস্থান ইসির,  ভোটে তিন স্তরের নিরাপত্তাআইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল ও সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ে সাইবার সিকিউরিটি সেল করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় হলে কোনো ছাড় নয় বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা মোতায়েন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে এনেছে নির্বাচন কমিশন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোটকেন্দ্রে স্ট্যাটিক এবং নির্বাচনি এলাকায় মোবাইল ও রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। তফসিল ঘোষণা হলে প্রথম দিন থেকে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোরভাবে ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। এসময় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা/ বিভাগের প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে ‘আইনশৃঙ্খলা মোতায়েন পরিকল্পনা, সমন্বয়, দিকনির্দশনামূলক সভা’র সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, ইসির স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে- একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, সার্বিক উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনকে বাস্তবায়ন করার জন্য সবাইকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে এবং নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। (ব্যত্যয় হলে) কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
নির্বাচনি এলাকায় তিন ধরনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা তুলে ধরে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, আমাদের ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানে হচ্ছে তিনটা কম্পোনেন্ট। স্ট্যাটিক, মোবাইল কম্পোনেন্ট এবং সেন্ট্রাল রিজার্ভ। আমাদের গাইডলাইনটা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন রেসপেকটিভ বাহিনী থেকে এটা করবে। এর সঙ্গে প্রচলিত অর্থে যেটা স্ট্রাইকিং ফোর্স বলি সেটাও এই তিনটা ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
কবে তফসিল ঘোষণা করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার খবর যখনই আমি পাবো, তার পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনাদের জানিয়ে দেবো।
জানা যায়, এবারের নির্বাচনে পৌনে ১৩ কোটি ভোটার রয়েছেন। ৩০০ আসনে প্রায় ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রে দুই লাখের বেশি ভোটকক্ষ থাকবে। প্রাথমিক সভায় ভোটের আগে-পরে আট দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব আসে। ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩ থেকে ১৮ জন সদস্য রাখার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ লাখের বেশি সদস্য ভোটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের সংখ্যা হবে সাড়ে ৫ লাখের মতো। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি। এছাড়া পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড রয়েছে।
বৃহস্পতিবারের সভায় আইনশৃঙ্খলা মোতায়েনের সার্বিক বিষয় আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আখতার আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত এজেন্সিগুলোর সবার সঙ্গে আলোচনা অনুযায়ী মোটামুটিভাবে নির্বাচন প্রস্তুতির আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে। এর পরে প্রয়োজনে হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে বসবো। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মূল ভূমিকায় থাকলেও তদাররিক দায়িত্বে থাকবে ইসি।

ইসির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল ও সাইবার সিকিউরিটি সেল:
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও অপতথ্য, গুজব, মিথ্যা রোধে নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে সব বাহিনী ও সংস্থার প্রতিনিধিদের উচ্চ পযায়ের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল থাকবে বলে জানান ইসি সচিব। তিনি আরও বলেন, ওভারঅল মনিটরিং অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশনেরটা দেখা হবে নির্বাচন কমিশন থেকে। এখানে আমরা একটা মনিটরিং সেল করবো। পাশাপাশি আরেকটা সাইবার সিকিউরিটি সেল থাকবে।
ইসি সচিব বলেন, সাইবার সিকিউরিটি সেল সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মগুলো মনিটর করবে। ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্ম আছে, সেটা ব্যবহার করবো। ইসির নিজস্ব সক্ষমতা যেটা আছে তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি এবং অন্যান্য যে এজেন্সি- ফ্যাক্ট চেকের ব্যাপারে যেসব সক্ষমতা আছে সেগুলো আমরা কোঅর্ডিনেট করবো।

তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
নির্বাচনি এলাকা ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় বাহিনীর সদস্যদের কেন্দ্রে রাখার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করবে ইসি। আখতার আহমেদ বলেন, আমাদের ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানে মূলত তিনটা ভাগ রয়েছে। ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানটা হচ্ছে- একটা স্ট্যাটিক, যা কেন্দ্রভিত্তিক। কেন্দ্রে কিছু নিরাপত্তাকর্মী স্ট্যাটিক থাকবেন। এর সঙ্গে বিভিন্ন চেকপোস্টের মাধ্যমে স্ট্যাটিক চেকপোস্ট হতে পারে, মোবাইল চেকপোস্ট হতে পারে। মোবাইল চেকপোস্ট হলে হয়তো এক জায়গায় করা হলো, সেখান থেকে আবার দুই কিলোমিটার দূরে, সেটাও আবার স্ট্যাটিক ইন নেচার।
দ্বিতীয়টি ভ্রাম্যমাণ হিসেবে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ইসি সচিবের ভাষায়, মোবাইল কম্পোনেন্ট থাকবে, মোটামুটিভাবে তারা ঘুরে ঘুরে ঘুরে দেখবে। কেন্দ্রগুলোর ভৌগলিক অবস্থানসহ সার্বিক বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট বাহিনী তা ঠিক করবে। আর (তৃতীয়টি) আরেকটা থাকবে সেন্ট্রাল রিজার্ভ।

কন্টিনজেন্সি প্ল্যান ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ:
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, পূজার সময় একটা অ্যাপ ডেভেলপ করেছিল, সেটা আমরা ব্যবহার করবো। সাইবার সিকিউরিটির বিষয়টা নিয়ে স্ট্রাটেজিক প্ল্যান রয়েছে। সবসময় একটা কন্টিনজেন্সি প্ল্যান রাখার দরকার, যদি দুই-তিনটা জায়গায় ঝামেলা হয় তাহলে কন্টিনজেন্সি প্ল্যানটা কাজে দেবে। মোটামুটি ভাবে কন্টিনজেন্সি প্ল্যানটা থাকতে হবে যেন ব্যাকআপ আসপেক্টটা থাকে, টেকনোলজির ব্যবহার সর্বোত্তম ব্যবহারটা করা যেতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় মোবাইল অ্যাক্সেসে সীমাবদ্ধতা, ইন্টারনেট ফ্যাসিলিটির বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি রাখার জন্যও বলা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।
পোস্টাল ভোটিংয়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব জানান, ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যনের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। রিটার্নিং অফিসারের তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্রে থাকতে হবে। রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবেন নাকি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন এটা ওরা গ্রাজুয়ালি তৈরি করে নেবেন।
ইসি সচিব বলেন, রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীর আচরণবিধির প্রতিপালনের ব্যাপারে সবাইকে বলেছি- প্রথম দিন থেকেই আচরণবিধির সুষ্ঠু প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অবস্থানটা অত্যন্ত স্পষ্ট- প্রথম দিন থেকে আচরণবিধি প্রতিপালন যেন যথাযথভাবে হয় এবং সে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেন সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেন।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোনো বাহিনী নেই। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত সব বাহিনীর ওপরে নির্ভর করতে হয়। তারা সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা প্রথম দিন থেকেই মাঠে কাজ করবেন এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন। মাঠ পর্যায় থেকে চ্যালেঞ্জের কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। কাজেই যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা সদা প্রস্তুত থাকবেন। কোনো নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি যে এইটাই চ্যালেঞ্জ বা এইটা চ্যালেঞ্জ না। এটা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে তারা অনুসরণ করবেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র‌্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুল, সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ছিবগাত উল্ল্যাহ প্রমুখ।


















http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
প্লট দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনা ও দুই সন্তানের সাজা
বিশিষ্ট গাইনি চিকিৎসক ফাহমিদা আজিম কাকলির জানাজা সম্পন্ন
খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চেয়ে কাঁদলেন হাজী ইয়াছিন
আদালত ও কালিয়াজুরি এলাকায় মনিরুল হক চৌধুরীর গণসংযোগ
নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্তে অনুপ্রবেশে রোধে কঠোর থাকবে প্রশাসন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় অস্ত্রশস্ত্রসহ ডাকাত দলের ৫ সদস্য আটক
কুমিল্লায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
তারেক-ইউনুস ঐতিহাসিক বৈঠকই নির্বাচনের রোডম্যাপ নিশ্চিত করছে
কুমিল্লার নতুন পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান
কুমিল্লায় ইসলামী মহাসম্মেলন
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২