
কুমিল্লার
চান্দিনায় পুকুর ভরাট করতে ফসলি মাঠে ড্রেজিং করে মাটি উত্তোলন করছে একটি
প্রভাবশালী মহল। পুকুর ভরাটের চুক্তি নিয়ে সরকারি সড়ক কেটে ফেলারও অভিযোগ
উঠেছে। ড্রেজার ব্যবসায়ীর ক্ষমতার তোপের মুখে নিরুপায় স্থানীয় ইউনিয়ন
পরিষদ। ৭ ফুট প্রস্থের কাঁচা সড়কের উপরে ৩ ফুট প্রস্থে ও ২ ফুট উচ্চতায়
অন্তত একশ ফুট বাঁধ নির্মাণ করায় এবং সড়কের মাঝে কেটে ড্রেজারের পানি
নিস্কাশন করায় ওই সড়কটি দিয়ে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে
অন্তত কয়েক গ্রামের মানুষ।
উপজেলার শুহিলপুর ইউনিয়নের পিপুইয়া গ্রামের
বারেক মিয়ার ছেলে শরীফ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত থেকে ভূমি আইন উপেক্ষা করে
ফসলী জমি কেটে পুকুর ভরাট করছেন। আর ১৫ লক্ষ টাকায় ওই ভরাট কাজের চুক্তি
নিয়েছেন একই গ্রামের মৃত শফিক মিয়ার ছেলে ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি মো. আবুল
বাশার। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ব্যবহার
করে এ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন, আর তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যত কোন
ব্যবস্থা নেয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ-বড়াইয়া কৃষ্ণপুর
পাকা সড়ক থেকে পিপুইয়া হয়ে বিনোদমুড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ
সংযোগ কাঁচা সড়কের আব্দুল বারেক মিয়ার বাড়ির সামনে মাটি ফেলে একটি বাঁধ
তৈরি করা হয়েছে। ড্রেজারের জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে সড়কের একটি
অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে রিক্সা, সাইকেল বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা প্রায়
অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের মধ্যে আব্দুল আওয়াল, মো. জামাল সহ
একাধিক বাসিন্দা বলেন- এই সড়কটি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্স, বিনোদমুড়ি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ
প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে অন্তত পাঁচটি গ্রামের মানুষ। সরকারি নিয়মে পুকুর
ভরাট নিষিদ্ধ, ফসলী মাঠে ড্রেজিং করা নিষিদ্ধ এবং সরকারি রাস্তা কাটাও
নিষিদ্ধ। এখানে একসাথে ৩টি নিষিদ্ধ কাজ হচ্ছে কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে
কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। যিনি পুকুর ভরাট করছেন তিনি ভূমি অফিসের
সরকারি কর্মচারী আর যিনি ভরাটের চুক্তি নিয়েছেন তিনি যুবদলের সভাপতি। দুই
ক্ষমতার কাছে কি অবৈধ সব কিছু বৈধ হয়ে গেলো?
ওই সড়কে যাতায়াত করা দুলাল
হোসেন জানান- সড়কটির মাঝে কেটে এবং সড়ককে আইল হিসেবে ব্যবহার করে বাঁধ
নির্মাণ করা মোটেও ঠিক হয়নি। সড়কটি দিয়ে আমরা হেটে যাতায়াত করতে সমস্যা
হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সড়কটি যে কোন মুহুর্তে ভেঙে খালে বিলিন হয়ে যাবে।
ক্ষমতার অপব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর
দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. শরিফ মিয়া বলেন- পুকুর
ভরাটের কাজ আমি করছি ঠিকই, তবে ড্রেজার বসানো বা সড়ক কাটার সঙ্গে আমার
কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
ড্রেজার ব্যবসায়ী যুবদল নেতা মো. আবুল বাশার
বলেন- সবাই জানে আমি এই ব্যবসা করেই চলি। পুকুর ভরাটের কাজ নিয়েছি তবে
রাস্তা কাটার কাজ আমি করিনি।
শুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.
আবু বকর সিদ্দিক বলেন- আমি শারীরিক ভাবে বেশ কয়েকদিন যাবৎ অসুস্থ। আমাদের
সরকারি রাস্তা কেটে এবং পুকুর ভরাটের বিষয়টি জানার পর সেখানে আমার পরিষদের
দফাদার পাঠাই কিন্তু তারা কোন কথা কর্ণপাত করছে না।
এ বিষয়ে চান্দিনা
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন- বিষয়টি আমার
জানা ছিল না। এখন যেহেতু জেনেছি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।
