জুলাইয়ের
গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার
মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরও থামছে না শহীদ হামিদুর রহমান সাদমানের মা কাজী
শারমিন আক্তারের কান্না। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তার চোখেমুখে দেখা গেছে
সন্তান হারানোর হাকাকার।
আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা নগরীর
রাজগঞ্জের দেশওয়ালীপট্টির নিজ বাড়িতে ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে
দেখা যায় তাকে। রায় শুনে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় সাদমানের মা কাজী শারমিন
আক্তার বলেন “ হাসিনার রায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমার সন্তান তো আর ফিরে
আসবে না।” হাসিনাকে দেশে ফিরেয়ে এনে রায় কার্যকর করা না পর্যন্ত রায়ে
সন্তোষ প্রকাশ করলেও পুরোপুরি খুশি হতে পারব না।
শহীদ হামিদুর রহমান
সাদমানের মা কাজী শারমিন আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, হাসিনা বাংলাদেশে অনেক
মায়ের বুক খালি করেছে। সে আমার বুক খালি করছে, তাকে একবার ফাঁসি দিলেও তার
বিচার হবে না। তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে হবে। তা না
হলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে না। আমি তখনই পুরোপুরি খুশি হবো যখন শুনব
হাসিনাসহ তার পলাতক দোসরদের দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকর করা
হবে।
শহীদ সাদমানের স্মৃতিচারণ করে কাজী শারমিন আক্তার বলেন, ছেলের
বন্ধু রাফি আমাকে বলেছে, আমার ছেলের বুকে গুলি লাগার পর তিন বার মা মা বলে
ডাক দিয়েছে, এটাই ছিল আমার ছেলের শেষ ডাক। সাদমান যখন শহীদ হয় তার বাবা
প্রবাসে ছিলেন, আমি তো আমার ছেলের রক্তমাখা দেহ ধরতে পেরেছি মুখ দেখতে
পেরেছি কিন্তু তার বাবা তাও পারেনি।
তিনি আরও বলেন, গত ৪ আগষ্ট
আন্দোলন চলাকালে মাগরিবের পর সাদমান আমাকে কল করে বলেছিল ‘আম্মু আমাগো
দেশের মানুষ ভালো না, আমি আইএলটিএস করে দেশে থাকব না’ বিদেশ চলে যাব। আমি
জানতাম না এ দেশের মানুষ আমার সন্তানের জীবন কাইড়া নিবে, ছেলে হারিয়ে বুঝতে
পারলাম আসলেই দেশের মানুষ ভালো না।
শহীদ হামিদুর রহমান সাদমান
কুমিল্লা সিসিএন পলিটেকনিকের প্রকৌশল বিভাগের লেখা পড়া করতেন। কুমিল্লা
মডার্ন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেই প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে কুমিল্লা
সিসিএন কলেজে ভর্তি হয়। পরে জুলাই আন্দেলন চলাকালে ইন্টার্নি করার জন্য
ঢাকায় চলে যায়। শহীদ সাদমান গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণের দীঘলগাঁও
গ্রামে। তার বাবার ইকবাল মজুমদার বাহরাইন প্রবাস। দুই ভাইয়ের মধ্যে সাদমান
বড়।
প্রসঙ্গ, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর মিছিলে যোগ দিতে
কেরানীগঞ্জ থেকে গেঞ্জি পরে বন্ধু রাফিসহ সাদমান বংশাল থানার সামনে আসলে
পুলিশের গুলি সাদমানের বুকে লাগে এতে ঘটনাস্থলেই সাদমান মারা যায়।
