কুমিল্লা
মহানগরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন উদ্বেগজনক হয়ে
উঠছে। গত এক মাসে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা
প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল,
সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর
মাসের তুলনায় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর না থাকলেও
মার্চ থেকে ধীরে ধীরে তা বাড়তে শুরু করে, আর অক্টোবরের শেষভাগে এসে তা
আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
হাসপাতালের ভেতরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়
অনেক জায়গায় আলাদা ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে,
নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডের ভেতরে মশারি টানিয়ে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা চিকিৎসা
দেওয়া হচ্ছে। কিছু বেসরকারি হাসপাতালে একই পরিবারের তিন-চারজন রোগী পর্যন্ত
এক কক্ষে ভর্তি রয়েছেন।
কিছু হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের স্বজনদের সচেতনতা
বৃদ্ধির লক্ষ্যে নার্সদের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। নগরীর
রেইসকোর্স কেউ কেউ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন,আবার কেউ বে সরকারি হাসপাতালে
ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমনটা চোখে পড়ে আখন্দ জেনারেল হাসপাতালে। রেজাউল
করিম নামে এক পল্লী চিকিৎসকসহ তার পরিবারের তিন সদস্য ডেঙ্গু পজিটিভ নিয়ে
ভর্তি রয়েছে।
কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স ও কালিয়াজুরী এলাকায় খাল ও
ড্রেনগুলোর বেহাল অবস্থার কারণে মশার প্রজনন বেড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা
জানিয়েছেন। বিশেষ করে রেইসকোর্স বড় খালটি দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় নগরের
উত্তরাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়েছে। পরিবেশবিদদের
মতে, এই খাল ও আশপাশের ড্রেনগুলোই বর্তমানে ডেঙ্গুর অন্যতম উৎসস্থল।
কুমিল্লা
সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শাহ আলম বলেন, হাসপাতাল ও আশপাশের পরিবেশ
পরিচ্ছন্ন রাখতে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ড্রেন
পরিষ্কার ও কীটনাশক ছিটানো কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে
সচেতনতা তৈরির কাজও চলছে।”
এদিকে, হোমনা, মুরাদনগর, বুড়িচং ও চান্দিনা
উপজেলায়ও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা
জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেসব স্থানে ফগার মেশিনে
স্প্রে কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে।
উপজেলা পর্যায়ে ড্রেন
পরিষ্কার, মশার বংশবিস্তার রোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ এবং সোশ্যাল
মিডিয়া প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া ডেঙ্গু বিস্তারে দায়ী ব্যক্তি বা
প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লার
সিভিল সার্জন ডাঃ আলিনুর বশির বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা ও
উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করছে। আক্রান্ত এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয়
সবপ্রদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
