সদ্য
অনুমোদিত বাংলাদেশ শ্রম সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর কতিপয় বিধান দেশের
বাস্তবতা ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ধারাগুলো
কার্যকর হলে শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও উৎপাদন ব্যাহত হবে। একই সঙ্গে
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত
মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত জরুরি সংবাদ
সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। শ্রম আইন, চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল
বৃদ্ধি ও এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের
আয়োজন করে বিজিএমইএ। শিল্প মালিকদের দাবি, তাদের উপেক্ষা করে বিদেশিদের
পেসক্রিপশনে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। এতে একতরফাভাবে শিল্পে
অস্থিতিশীলতা বাড়বে।
এ ছাড়া বৈদেশিক বিনিয়োগ কমবে, দেশের রপ্তানি খাত
ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে। নতুন আইনে শিল্প
মালিক ও শ্রমিক কোনো পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়নি। উদ্যোক্তারা নতুন
প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনায় নিরুৎসাহিত হবেন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায়
বাংলাদেশের সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি
বলেন, পোশাকশিল্পসহ দেশের সমগ্র উৎপাদনমুখী শিল্প বর্তমানে জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি
প্রেক্ষাপটে, সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন অধ্যাদেশে নীতিগত ও চূড়ান্ত
অনুমোদন দিয়েছে। টিসিসি ও ওয়ার্কিং কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ট্রেড
ইউনিয়ন গঠনে ধাপে ধাপে শ্রমিকের সংখ্যা নির্ধারণে একটি ভারসাম্যপূর্ণ
প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। যেখানে প্রথম ধাপে ৫০ থেকে ৫০০ শ্রমিকের কারখানায়
ন্যূনতম ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ ছিল। পরে উপদেষ্টা
পরিষদের সভায় একতরফাভাবে সেটি পরিবর্তন করে ২০ থেকে ৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ
করা হয়েছে। ধাপ করা হয়েছে পাঁচটি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মোট শ্রমিকের ১০
শতাংশ বা ন্যূনতম ১০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের বিধান রয়েছে,
পাকিস্তানে যা ২০ শতাংশ। শিল্প মালিকরা মনে করেন, এ সিদ্ধান্ত
বাস্তবতাবিবর্জিত। কারণ মাত্র ২০ জন শ্রমিক দিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠন করা হলে
কারখানাগুলোতে এমন ব্যক্তিরা ট্রেড ইউনিয়ন করবেন, যারা ওই শিল্পের সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট নন। এটি অন্তর্দ্বন্দ্ব ও শিল্পে অস্থিরতা তৈরি করবে। তাই
ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বাস্তব সমস্যা উপলব্ধি করে সরকারের কাছে শ্রম আইন
পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
শ্রম অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, শিল্প, শ্রমিক ও অর্থনীতির
বাস্তব চাহিদা বিবেচনায় নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইন যেন শিল্পের
প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা নষ্ট না করে, বরং টেকসই উন্নয়নকে সমর্থন করে।
শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন হওয়া উচিত এবং উদ্দেশ্যই
হবে শ্রমিকদের কল্যাণ। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা আরও বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের
মাশুল বৃদ্ধি অযৌক্তিক। কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে গত ৪০ বছরে
টাকার অঙ্কে মাশুল এরই মধ্যে ৩০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বন্দরের মাশুল
না বাড়িয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ
করেন। বন্দরের সেবার বিপরীতে প্রায় ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধি শিল্পের পরিচালন
ব্যয় বাড়িয়ে দেবে।
এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পথকে গতিশীল ও মসৃণ করতে সরকারকে
কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের পরামর্শ ও মতামত
বিবেচনা করে একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা
যে শ্রমআইন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন, সরকারকে তা গুরুত্বের সঙ্গে
বিবেচনা করতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে এ দেশের অর্থনীতিকে তাল মেলাতে
হলে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সরকারের অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করি।
