দেশের
প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের চলতি বছরে ‘তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’
মুখে পড়ার আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের করা খাদ্য
নিরাপত্তা ও অপুষ্টি সংক্রান্ত জাতীয় এক বিশ্লেষণে।
এতে ১৬ লাখ শিশু ‘তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বা ভুগবে’ বলেও তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক কর্মশালায় এ বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়।
খাদ্য
মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ
এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপির সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন
এগেইনস্ট হাঙ্গার ও সেভ দ্য চিলড্রেনের অংশগ্রহণে এ কর্মশালার আয়োজন করা
হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ)
গবেষণা পরিচালক (খাদ্যের জৈবিক ব্যবহার ও পুষ্টি শাখা) মোস্তফা ফারুক আল
বান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন ‘সেকেন্ডারি’ উৎস থেকে
পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ জাতীয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পরে এ বিশ্লেষণে
বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর মতামত নিয়ে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
“খাদ্য
নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতির তীব্রতা ও ভৌগোলিক বিস্তৃতি বিশ্লেষণ করতে
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ
ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) ব্যবহার করা হয়েছে।”
২০২৪ সালের তীব্র খাদ্য
নিরাপত্তা ও তীব্র অপুষ্টি সংক্রান্ত জাতীয় বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ওই বছর দেশে ২
কোটি ৩৫ লাখ মানুষ ‘উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ মধ্যে ছিল। ২০২৫
সালে এ অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
তবে এই অগ্রগতি টেকসই করতে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন উন্নয়ন সহযোগীরা।
কর্মশালায়
২০২৫ সালের এপ্রিলে পরিচালিত বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, চলতি বছরে
মে থেকে ডিসেম্বর মেয়াদে বাংলাদেশের ৩৬টি জেলা ও রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ১
কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকট বা এর চেয়েও গুরুতর অবস্থার মুখোমুখি হবে বলে
অনুমান করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার মানুষ জরুরি অবস্থায়
রয়েছে, যাদের তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
বিশ্লেষণের তথ্য
অনুযায়ী, ২০২৫ সালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে উচ্চমাত্রা দেখা গেছে
কক্সবাজারে, যেখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীসহ প্রায় ৩০
শতাংশ মানুষ খাদ্য সংকটে আছে। আর কক্সবাজার ও ভাসানচরে বসবাসরত প্রায় ৪ লাখ
৪৫ হাজার ৬৯২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী খাদ্য সংকট বা তারও খারাপ অবস্থায়
রয়েছে।
কর্মশালায় ৬-৫৯ মাস বয়সী প্রায় ১৬ লাখ শিশু ২০২৫ সালে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বা ভুগবে বলে তুলে ধরা হয়েছে এ বিশ্লেষণে।
বিশ্লেষণের
তথ্য বলছে, এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার শিশু মারাত্মক তীব্র অপুষ্টিতে
আক্রান্ত এবং প্রায় ১৪ লাখ শিশু মাঝারি তীব্র অপুষ্টিতে রয়েছে।
এছাড়া ১ লাখ ১৭ হাজার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে পারেন বলে ধারণাও উঠে এসেছে এ বিশ্লেষণে।
জরুরি
অবস্থায় থাকা জনগোষ্ঠীকে জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দেওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ
জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণ, কৃষি ও পশুপালন খাতে
জরুরি সহায়তা দেওয়া এবং বন্যা-প্রভাবিত এলাকায় জীবিকা পুনরুদ্ধার সহায়তা
দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে এ বিশ্লেষণে।
কর্মশালায় খাদ্য সচিব মো.
মাসুদুল হাসান বলেন, “এ বিশ্লেষণ আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি
পরিস্থিতির একটি কঠিন চিত্র তুলে ধরেছে। ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্য
নিরাপত্তাহীনতায় এবং ১৬ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে, যা অবিলম্বে
পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
“আজকের কর্মশালা নিশ্চিত করবে
যে এই তথ্যগুলো শুধু আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব পদক্ষেপে রূপ নেয়।
সরকার জাতিসংঘ সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে মিলে এই তথ্য ব্যবহার করে
নীতি প্রণয়ন, প্রতিক্রিয়া জোরদার ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত
করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের
বলেন, বিশেষত গ্রামীণ ও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে যাদের জীবিকা কৃষি ও মৎস্য
নির্ভর, তাদের জন্য এই ফলাফল অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
“আমরা খাদ্যব্যবস্থা
শক্তিশালী করা, পুষ্টিকর খাদ্যে প্রবেশাধিকারের উন্নয়ন এবং জলবায়ু-জনিত
ঝুঁকির বিরুদ্ধে সহনশীলতা গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমাদের দ্রুত ও সমন্বিতভাবে কাজ করতেই হবে, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।”
খাদ্য
পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের মহাপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে
কর্মশালায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা অংশ নেন।
