কুমিল্লায়
সেপ্টেম্বর মাসে ১০টি খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় ১৬টি
এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ২৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর
মাসে জেলায় ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছে এবং ১৪ জন আহত হয়েছে।
১৯৩টি গ্রাম আদালতে ৫৫০টি মামলা দায়ের হযেছে এবং ৫৬৬টি মামলা নিষ্পত্তি
হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জেলা আ্ইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার কার্যপত্র বিবরণী থেকে
এসব তথ্য জানা গেছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক
আমিরুল কায়সারের সভাপতিত্বে সভার শুরুতে কার্যপত্র পাঠ করেন অতিরিক্ত জেলা
ম্যাজিস্ট্র্যাট মো: জাফর সাদিক চৌধুরী।
সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ
সুপার নজির আহমেদ খানসহ কমিটির সদস্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জেলা ও ইউনিট
প্রধান, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সকল উপজেলা নির্বাহী
অফিসারগন সহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলার
সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করা হয়। কুমিল্লা জেলার আইন-শৃঙ্খলা
পরিস্থিতি যেন ঠিক থাকে সে দিকে সভায় উপস্থিত সকলকে নজর রাখার জন্য জোর
তাগিদ দেয়া হয়। যেন জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে এবং কোন
কারণে তার অবনতি হয়ে জনসাধারণের জান-মালের ক্ষতি সাধন না হয়। এই বিষয়ে সভার
সকলকে সজাগ থাকার বিশেষ তাগাদা দেন জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি জেলা
প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আমিরুল কায়সার।
সভার কার্যপত্রে
জানানো হয়, কুমিল্লায় সেপ্টেম্বর মাসে চাঁদাবাজি, চুরি, নারী ও শিশু
নির্যাতন, মাদক ও অপমৃত্যু মতো অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে
ডাকাতির পরিমান বেড়েছে। স্থিতি রয়েছে ছিনতাই, খুন ও চোরাচালান। সেপ্টেম্বর
মাসে আগষ্ট মাসের তুলনায় মামলার সংখ্যা কমেছে। সেপ্টেম্বর মাসে মোট মামলার
সংখ্যা ৪৭৯টি। এর মধ্যে মাদকদ্রব্য আইনে মামলার সংখ্যা ১৯৭টি।
সভায়
কুমিল্লা নগরীতে যানজট নিরসনে অটোরিকশা ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রনে আনতে বিভিন্ন
উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের আওতায় লাইসেন্সের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত
নেয়া হয়। এপ্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আমিরুল কায়সার
বলেন, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন থেকে যে লাইসেন্স দেয়া হবে, যাকে
দেয়া হবে- সে ওই এলাকার বাসিন্দা হতে হবে। কোন এলাকার লাইসেন্স প্রাপ্ত
ইজিবাইক বা অটোরিকশা অন্য এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।
অপরদিকে জেলায়
মহাসড়ক ও সড়কের ভাঙ্গাচুড়া ও খানাখন্দ নিয়ে আলোচন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক
ব্যক্তিত্ব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাইওয়ে পুলিশ। সড়ক ও জনপথ
বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা কাজ করছি,
আগামী তিনদিনের মধ্যে মহাসড়কে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশা করছি।
মহাসড়কে ইউটার্নগুলো নিয়ে আমরা পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। ডিসেম্বরের মধ্যেই
সুফল আসবে বলে আশা করছি। উল্টোপথে গাড়ি চলাচল রোধে কাজ করছি, অনেকাংশে কমে
এসেছে। বর্ষায় মোটামুটি অনেক রাস্তাই বেহাল দশা। বর্ষায় মেরামত করলে টেকসই
হয় না। এখন বর্ষার মৌসুম শেষের দিকে, এখন অনেক রাস্তাই মেরামত শুরু হয়েছে।
কিছু রাস্তায় নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে।
সভায় কুমিল্লা সদর
উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা গোলাবাড়ি, বৌয়ারা বাজার এবং শহরের
বিভিন্ন এলাকায় মাদকে প্রবণতা বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন একাধিক
সদস্য।
বিজিবি কুমিল্লার সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে
মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত অপারেশন অব্যাহত আছে। গোমতী নদীকে ব্যবহার করে
অনেকে মাদক চোরাকারবার করছে। আমরা এমন কয়েকটি চালান সনাক্ত করে ধরতে
পেরেছি।
এছাড়া পরিবেশ দূষণরোধে জৈব বর্জ্য থেকে পলিথিন বর্জ্য আলাদা করে
নিষ্কাশনের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের বিষয়ে নজরে আনা হয়। এপ্রসঙ্গে সিটি
করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনউদ্দিন চিশতী বলেন, পলিথিন ব্যবহারে
সর্বত্র সয়লাব। আপাতত ব্যবহৃত পলিথিন সংগ্রহ করে ডাম্পিং করা হয়। কিন্তু
যেসব পলিথিন ড্রেনে বা খালে ফেলা হয় সেগুলো ডাম্পিংয়ের সুযোগ থাকে না।
সভায়
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নজির আহমেদ খান বলেন, কুমিল্লায় অবৈধ অস্ত্র
উদ্ধার ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম রোধে সচেষ্ট আছে পুলিশ। আসন্ন
নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে।
