শুক্রবার ২৪ অক্টোবর ২০২৫
৮ কার্তিক ১৪৩২
গণভোট নিয়ে ‘দলগুলো একমত’ : আলী রীয়াজ
প্রকাশ: সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১:২৪ এএম আপডেট: ০৬.১০.২০২৫ ১:৩৮ এএম |


  গণভোট নিয়ে  ‘দলগুলো একমত’ : আলী রীয়াজনিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে গণভোট আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘একমত’ হওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। রোববার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য দেন। এর আগে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দিনের মতো আলোচনায় বসে ঐকমত্য কমিশন।
আলী রীয়াজ বলেন, "জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের সম্মতির জন্য একটি গণভোট আয়োজনের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে। এটি জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম পদক্ষেপ।"
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে এই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েক দল চাইছে, নির্বাচনের আগেই এ সনদ বাস্তবায়ন হোক।
ম‚লত এ বিরোধ নিয়েই এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। এ অচলাবস্থা নিরসনে গণভোটের প্রস্তাব তোলে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো।
শুরুতে গণভোটের বিরোধিতা করলেও পরে সে অবস্থান থেকে সরে আসে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
এখন তারা বলছে, গণভোট হতে পারে, তবে সেটা হতে হবে সংসদ নির্বাচনের দিনেই; আলাদা ব্যালট পেপারে।
এমন প্রেক্ষাপটের মধ্যে গণভোট নিয়ে ঐকমত্যের খবর এলেও সেই গণভোট কবে হবে, তা আলী রীয়াজের ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট হয়নি।
তবে ‘অন্যান্য বিষয়েও’ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘এভাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কমিশন শিগগিরই সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা তৈরি করে সরকারের কাছে দিতে পারবে আশা প্রকাশ করে আলী রীয়াজ বলেন, "সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আওতায় সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। আজকের আলোচনায় সনদ বাস্তবায়নে ১০৬ অনুচ্ছেদের আওতায় সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে বলে মনে করছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।"
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে যে আইনসভা গঠিত হবে এবং সে আইনসভা জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে যে সব সংস্কার করবে, তা যেন টেকসই হয়, সে ব্যাপারেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যত ঐকমত্য রয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ।
বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া এবং ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
যা বলেছে বিএনপি:
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের রায় নেওয়ার জন্য সংসদ নির্বাচনের দিনে আলাদা ব্যালটের কথা বলেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, "আজ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার একটা ফাইনাল স্টেজে আমরা আছি। সর্বশেষ যে রিকমেন্ডেশন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে, সেই বিষয়ে আমরা একটা চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এ বিষয়ে আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে মোটামুটি চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে মনে হয় আমরা এগোতে পেরেছি।
"গণভোটের যে প্রশ্ন এসেছে, এটা ম‚লত আমাদের বিগত সভার প্রস্তাবের মধ্যে আমি একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। জনগণের কাছে আমরা যাই, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জনগণের সম্মতি আছে কিনা? আমরা সব রাজনৈতিক দল মিলে সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করি কিনা, এটা একটা প্রশ্ন।”
তিনি বলেন, “সমগ্র জনগণের কাছে আমরা যদি এই সম্মতিটা নিই যে, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো এভাবে জুলাই জাতীয় সনদে সই করেছি; জনগণ তার পক্ষে আছে কিনা। তখনই হবে জনগণের পক্ষ থেকে এই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটা চ‚ড়ান্ত অভিমত; সার্বভৌম ক্ষমতার একটা রায়।"
সালাহউদ্দিন বলেন, "জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সব সংসদ সদস্য বাধ্য থাকবেন, যদি জনগণ তার পক্ষে রায় দেয়। সেজন্য সংসদ নির্বাচনের দিনে আমরা আলাদা ব্যালটের মাধ্যমে জুলাই সনদের বিষয়ে জনরায় নেওয়ার কথা বলেছি। এই গণভোট আয়োজনে আমাদেরকে কনস্টিটিউশনের কোনো সংশোধনী আগেই আনতে হবে না।
"জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করতে তো মানা নাই। সেজন্য আমরা বলেছি, একটা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে, যেন ইলেকশন কমিশন এই গণভোট পরিচালনা করতে পারে। সেই অর্ডিনান্সের নাম হতে পারে, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের জন্য অধ্যাদেশ বা বাস্তবায়ন অধ্যাদেশ।"
তিনি বলেন, "জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে আলাদা ব্যালটের বিষয়টি অধ্যাদেশে থাকবে। আর জুলাই সনদটা জনগণের সামনে উন্মুক্ত থাকবে; ওয়েবসাইটে যাবে। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচন ইশতেহারে থাকবে। যেটা সই হবে, সরকার সেটা প্রকাশ করবে। নির্বাচন কমিশনও সেটা প্রকাশ করতে পারে। তখন জনগণ বুঝবে, এই জুলাই জাতীয় সনদ তারা গ্রহণ করবে কি করবে না।”
সাংবিধানিক আদেশ জারি করার ক্ষমতার জন্য এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, "আর্টিকেল ১০৬ অনুসারে এই সরকার গঠিত হয়েছে, সরকার পরিচালনার জন্য এবং বিদ্যমান সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনের জন্য। এখন সাংবিধানিক ক্ষমতা কার থাকে? থাকে জনগণের। সেই জনগণ যখন একটা সার্বভৌম অধিকার বলে গণপরিষদ গঠন করে, তখন তাদের পাওয়ার থাকে।
জামায়াতে ইসলামী চাইছে আগেই:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গণভোট করা যেতে পারে বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
গণভোট কবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "জনগণ গণভোটে অভ্যস্ত না। আমরা মনে করি এটা যেন জাতীয় নির্বাচনকে কোনো ধরনের সমস্যা করা ছাড়া, নভেম্বর অথবা ডিসেম্বর এটা করতে পারেন। তফসিলের আগেও করতে পারেন।
“গণভোট হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো ধরনের বাধা নাই। জনগণকে একটা জটিল অবস্থায় ফেলে না দিয়ে, মহাপরীক্ষায় না ফেলে সহজভাবে এগোলে আমরাও বাঁচি, জাতিও বাঁচে।”
তিনি বলেন, “জুলাই সনদের আইন ভিত্তি রচনার জন্য যদি গণভোটে যিই, তাহলে এটা হবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। এটা কখনো চ্যালেঞ্জ করতে গেল টিকবে না। পার্লামেন্টে এটাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না।"
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে দ‚রত্ব নেই মন্তব্য করে আযাদ বলেন, "গণভোটের ফল যদি আমাদের বিপক্ষেও যায়, আমরা এখানে ছাড় দেব।”
তিনি বলেন, "সংস্কারের বিষয়ে আমরা সব সময় সোচ্চার ছিলাম। সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের পক্ষে সবাই মত দিয়েছে।
"গণভোট আগে না পরে, এটা নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। সবাই গণভোটের পক্ষে একমত হয়েছে। গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। তার জন্য সরকারের তরফে নির্বাচন কমিশনকে একটা নির্দেশনা দিতে হবে। এরপরে কমিশন গণভোটের আয়োজন করতে পারবে।"
জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে চায় এনসিপি:
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলছেন, "এ সরকারের সময়েই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। কারণ পরবর্তী সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তা বাদ দিয়ে দিতে পারে। তাই জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী এ সরকারকেই বিষয়টি সমাধান করতে হবে।
"জাতীয় নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটের পাশাপাশি গণভোটের জন্য আলাদা ব্যালট থাকবে। যেখানে সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে জনগণ মতামত দেবে। এ বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে।"
তুষার বলেন, "ভাষাগত ভিন্নতা বাদ দিলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে দলগুলো মোটামুটি একমত। যেখানে সনদ বাস্তবায়নে জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেবে। যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে, সেগুলোকেও একমত বলে ধরে নিতে হবে। এক্ষেত্রে লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কের বিষয়টিও অনুসরণ করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, সব রাজনৈতিক দল একমত হলে জনগণ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পক্ষে রায় দেবে।"
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রোববারের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির পাশাপাশি গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি -সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।














http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
আরপিও সংশোধন- পলাতক আসামি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য
শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী মামলার শুনানি পর্ব সমাপ্ত
কুমিল্লার বাজারে এক শ’ টাকার নিচেসবজি নেই
একদিন আগে কেনা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো দুই বন্ধু
কুমিল্লায় মুফতি ফয়জুল করীম এমন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নেই যা দখল করা হয়নি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা নাভানা হসপিটালে দুই চিকিৎসককে সংবর্ধনা
কুমিল্লা সদরে এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী নাভিদ
কুমিল্লায় চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ব্যবসায়িদের বিক্ষোভ
৩১দফা বাস্তবায়নে ড. এ কে এম জাহাঙ্গীরের মতবিনিময় সভা।
শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী মামলার শুনানি পর্ব সমাপ্ত
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২