কিছুদিন ধরে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করছেন। অংশীজনরা এ ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী এ কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, এ কোটা বাতিল করতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এরই সূত্র ধরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতাহাতির ভিডিও মূলধারার গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে এর পক্ষে-বিপক্ষে যেমন আলোচনা হচ্ছে; তেমনি কীভাবে যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছানো যায়, তা নিয়েও অভিমত দিচ্ছেন কেউ কেউ।
পোষ্য কোটা নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম প্রচলিত আছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নেই। বিভিন্ন সময়ে এ কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি নানা অস্বচ্ছতাও সামনে এসেছে। কোটা দাবিদাররা বলছেন, বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য এ ধরনের সুবিধা রয়েছে।
সম্প্রতি পত্রিকান্তরে পোষ্য কোটা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, তিন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এ নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেছেন, কোটা নিয়ে যে কথা হচ্ছে, তার একদিকে আছেন কোটার দাবিদার শিক্ষক-কর্মকর্তারা, অন্যদিকে বিরোধী শিক্ষার্থীরা। উভয় পক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টির সমাধান করা প্রয়োজন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী আবার কোটার বিষয়টি বাতিল করে দেওয়ার পক্ষে। তিনি বলেছেন, জুলাই আন্দোলন শুরু হয়েছিল কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের সন্তানরা মধ্যবিত্ত। তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন, কিন্তু চা-বাগানের শ্রমিকের সন্তানরা পাচ্ছেন না। এ বৈষম্যের কারণে কোটা রাখাই উচিত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) সাবেক পরিচালক সিদ্দিকুর রহমানও বলেছেন, কোটা রাখাটা নীতিগতভাবে ঠিক নয়। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় চলে সরকারি অর্থে, সুতরাং মেধার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে। এখানে সবার সমান অধিকার থাকবে। কোটা না থাকাই বাঞ্ছনীয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা সরকারের অন্য কর্মকর্তাদের তুলনায় সে রকম সুযোগ-সুবিধা পান না। অন্যরা সুদমুক্ত গাড়ি কেনা, প্লট পাওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা কোটার ভিত্তিতে পেয়ে থাকেন। কোটা তুলে দিতে হলে রাষ্ট্রীয় পরিসর থেকে সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়া উচিত। আরেকজন অধ্যাপক বলেছেন, এটা একধরনের প্রণোদনা। ভালো শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ধরে রাখার জন্য তা থাকতে পারে। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের সন্তানদের এ সুযোগ দেওয়া হয়। এমনকি তাদের টিউশন ফি কম রাখারও নজির আছে।
বিষয়টি নিয়ে আর বাদানুবাদ নয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি দেখা দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। বিশেষ করে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। যেহেতু উভয় পক্ষই নানা কারণ এবং যুক্তি দেখিয়ে তাদের দাবির পক্ষে কথা বলছেন, ফলে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। তাতে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করা যাবে। শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখাই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষের লক্ষ্য।