পৃথিবীর
অষ্টম সর্বোচ্চ চূড়া ‘মানাসলু’ জয় করলেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী তৌফিক
আহমেদ তমাল। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় এই পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন
তিনি। এসময় মানাসলুর চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান তিনি।
এই অভিযানের আয়োজক আল্টিটুইড হান্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও এডমিন ফজলুর রহমান শামীম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
১
সেপ্টেম্বর পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম এই পর্বত জয়ের লক্ষ্যে রওনা দেন তিনি। এ
উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে আয়োজিত
অনুষ্ঠানে, তাকে জাতীয় পতাকা তুলে দেন বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্ট জয়ী
নিশাত মজুমদার।
এর আগে, তৌফিক আহমেদ তমাল গত ১৪ বছর ধরে দেশবিদেশে
নিয়মিত ট্রেকিং ও উচ্চ পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভারতের নেহেরু
ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে তিনি মৌলিক ও উচ্চতর পর্বতারোহণ
প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
পৃথিবীর
৮ম সর্বোচ্চ চূড়া ‘মানাসলু’ জয় করলেন কুমিল্লার তমালতিনি ৫ হাজার থেকে ৬
হাজার মিটারের সাতটি পর্বত এবং ৬৫০০ মিটার উঁচু দুটি পর্বত জয় করেন। তার
উল্লেখযোগ্য অভিযানের মধ্যে রয়েছে, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শীতকালীন
অভিযানে থার্পু চুল্লি জয়, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভাগীরথী-২ (৬৫১২ মিটার)
জয়। এ ছাড়াও গত বছর বিশ্বের অন্যতম কঠিন শৃঙ্গ মাউন্ট আমা দাবলাম (৬৮১৪
মিটার) জয় করেন তমাল।
এই অভিযানের বাংলাদেশ সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আল মুহিত
বলেন, "তমালের এই সাফল্য শুধু তার একার নয়, এটি পুরো বাংলাদেশের। তার
একাগ্রতা, সাহস এবং দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি আজ সার্থক হয়েছে। আমরা তার এই
ঐতিহাসিক অর্জনে অত্যন্ত গর্বিত এবং তার নিরাপদে ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা
করছি।"
তৌফিক আহমেদ তমাল পেশায় একজন দক্ষ পর্বতারোহী ও ট্যুরিস্ট গাইড।
তার বেড়ে উঠা কুমিল্লার চকবাজার গোধির পুকুরপাড় এলাকাতে। তিনি কুমিল্লা
ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করেন। তার বাবা শরিফ আহমেদ
অলি কুমিল্লার একজন নাট্য ব্যাক্তিত্ব, কবি ও গবেষক ছিলেন। মানাসলু তার
আরোহণ করা প্রথম আট-হাজারী শৃঙ্গ হলেও এর আগে তিনি বিশ্বের অন্যতম কঠিন ও
ট্যাকনিক্যাল পর্বত হিসেবে পরিচিত আমা দাবলাম, আইল্যান্ড পিক এবং ভারতের
বাঘিরথি-২ সহ বেশ কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গ সফলভাবে আরোহণ করেছেন।
এই অভিযানের
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তৌফিক আহমেদ তমাল সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে
এটি সম্পন্ন করেছেন, যা বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত।
নিজ উদ্যোগে ৮০০০ মিটার পর্বত আরোহণের এই সাফল্য দেশের তরুণ প্রজন্মকে বড়
স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করবে। অভিযানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল
'অল্টিচিউট হান্টার বিডি'।
পৃথিবীর ৮ম সর্বোচ্চ চূড়া ‘মানাসলু’ জয়
করলেন কুমিল্লার তমালউল্লেখ্য, ‘মানাসলু’ পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম
পর্বতশৃঙ্গ।এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,১৬৩ মিটার (২৬,৭৮১ ফুট)। এটি
পশ্চিম-মধ্য নেপালের নেপালি হিমালয়ের অংশ মানসিরি হিমালে অবস্থিত। ১৯৫৬
সালের ৯ মে এতে প্রথম আরোহণ করেন তোশিও ইমানিশি এবং গ্যালজেন নরবু। তারা
একটি জাপানি পর্বতারোহী দলের সদস্য ছিল। এরপর ১৫ বছর আর কোনো পর্বতারোহী
সেখানে পৌঁছাতে পারেননি।
১৯৭১ সালে আবারও জাপানি পর্বতারোহীদের একটি দল
মানাসলু পর্বত জয় করে। ১৯৯৭ সালে মার্কিন পর্বতারোহীরা মানাসলুর চূড়ায়
উঠতে সক্ষম হন। উচ্চতায় ৮ম হলেও, বিশ্বের প্রাণঘাতী পর্বতগুলোর মধ্যে এর
অবস্থান চতুর্থ।