এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতা ছাপিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের বড় আলোচনা জুড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও বিএনপিপন্থি ক্রীড়া সংগঠকরা বিসিবি নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছিলেন। আজ (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আন্তঃস্কুল জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিসিবি নির্বাচন নিয়ে ক্রীড়া সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
বিসিবি নির্বাচনে সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও তামিম ইকবাল। নানা কাণ্ডে বুলবুল সরকার ও তামিম ইকবাল বিএনপি সমর্থিত বলে আলোচনা চলছে নানা অঙ্গনে। বিসিবি নির্বাচনের এমন পরিবেশ কাম্য কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন মানেই তো মুখোমুখি অবস্থান। নির্বাচন যদি মনে করেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না এটা ঠিক না। দেখার বিষয় হচ্ছে পক্ষপাতহীন, অন্তর্ভূক্তিমূলক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে কিনা এবং সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত দেখছি ঠিক আছে। আপত্তিগুলোর মাধ্যমে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। আজ চূড়ান্ত তালিকার মাধ্যমেও সেটা সমাধান হয়েছে। এখন কাউন্সিলররা ভোট দেবেন। ভোটের মাধ্যমে যারা আসবে নির্বাচিত হবে তারা নেতৃত্বে আসবে।’
বিসিবি’র বিগত নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবার নির্বাচন ভিন্ন হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আগের নির্বাচনে কি হতো একজন সভাপতি হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন তার জন্যই সকল আয়োজন হতো। এবার তো সে রকম না। এবার সত্যিকার অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। দুই জনেরই পাল্লা যথেষ্ট ভারী। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে যিনি আসবেন তাকে মেনে নিতে কারো কোনো সমস্যা থাকা উচিত না। আমরা এই পরিবেশটা সামনেও চাই। কোনো প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান উপদেষ্টা, ক্রীড়া উপদেষ্টা ঠিক করে দেবে না- এ হবে, এর জন্য সব আয়োজন করা হবে, বাকিদের এলিমেনেট করা হবে। কাউকে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ফোন করা হবে আইসেন না। এবার তো আপনারা এ রকম কিছু দেখেন নাই।’
বিসিবি নির্বাচনে ২৫ পরিচালক পদের মধ্যে জেলা-বিভাগ ক্যাটাগরি থেকে ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হন। জেলা-বিভাগ ক্রীড়া সংস্থা থেকে কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে ক্রিকেটাঙ্গন দ্বিধাদ্বিভক্ত। এক পক্ষের দাবি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক জেলার মধ্যে থেকে যে কাউকে মনোনীত করতে পারেন। আবার আরেক পক্ষের দাবি জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিদ্যমান কমিটি থেকেই হতে হবে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত অ্যাডহক কমিটি থেকেই কাউন্সিলরশিপ গ্রহণ করেছে বিবিসি।
বিসিবির গঠনতন্ত্রে জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলরশিপে একটি শর্ত রয়েছে, সাবেক ক্রিকেটার ও সংগঠকদের অগ্রাধিকার দেয়ার। অ্যাডহক কমিটিতে সাবেক ক্রিকেটার ও সংগঠক থাকলেও অন্য ব্যক্তিরাও এসেছেন কাউন্সিলর হয়ে। এ নিয়ে উপদেষ্টার মন্তব্য,‘জেলা ক্রীড়া সংস্থা হইতে বলতে কি বোঝায় সেটা সবাই বুঝে। যদি আপনারা চান আমি পাপন ভাইয়ের মতো বোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয় চালাই তাহলে হয়তো আমি বলতে পারতাম কোনো জেলা থেকে বিএনপির সভাপতি, কোনো জেলা এনসিপি সভাপতি আবার কোথায় জামায়াতের আমির আসুক। আমি তো ওভাবে এলাউ করতে পারব না। কিছু জেলা ক্রীড়া অফিসার, ডিসি এসেছে কাউন্সিলর। আমি খোঁজ নিয়েছি। যেটা জানলাম অনেক জেলা ক্রীড়া সংস্থায় মিটিং করেছে। সেখানে এমনও হয়েছে পাঁচজন সদস্য পাঁচজনই ক্যান্ডিডেট (কাউন্সিলর হতে আগ্রহী)। পরবর্তীতে তারাই বলেছে ডিসি কিংবা ক্রীড়া অফিসারকে কাউন্সিলর হতে। এখানে কিন্তু তারা ডিসি বা ক্রীড়া অফিসার হিসেবে আসেনি। সেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি (সদস্য সচিব) হিসেবে এসেছে।’
জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায় মন্ত্রণালয় কিংবা তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করলে আপনারা প্যাটার্ন বুঝতে পারতেন। আমার কোনো আত্মীয় বা কেউ আসত তাহলে বলতে পারত। আসিফ আকবর ভাই এক জায়গা থেকে এসেছেন তাকে আমরা চিনি বিএনপিপন্থি হিসেবে আরেক জায়গা থেকে মীর হেলাল সাহেব এসেছেন। যদি এটা কন্ট্রোল হতো তাহলে তো আর তারা আসতে পারতেন না।’
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফের প্রিয় ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। তিনি ক্রীড়া উপদেষ্টা হওয়ার পর প্রথম যেদিন মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন। সেখানে তামিম বিসিবির কেউ না হয়েও সাথে ছিলেন। গত এক বছর বেশ সখ্যতাই ছিল উপদেষ্টার সঙ্গে তামিমের। বিসিবির নির্বাচন নিয়ে এখন সেই তামিম ও উপদেষ্টার মধ্যে দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে উপদেষ্টার মন্তব্য, ‘আমার প্রথম প্রিয় খেলোয়াড় আশরাফুল ভাই। এরপর তামিম ভাই। সম্পর্ক ব্যক্তিগত জায়গায়। বিষয়টা যেটা হয়েছে, বিভিন্ন গুজবের কারণে বিভিন্ন অনুমান। উনাকে গিয়ে কেউ হয়তো বলছে উনার কাউন্সিলরশিপ চলে যাচ্ছে। এজন্য হয়তো উনি একটা বক্তব্য দিয়েছে। এখন দেখেন আপনার সামনেই আছে (কাউন্সিলরশিপ), বা ১৫ ক্লাব নিয়ে যেগুলো হলো। আমাদের অ্যাকশনটা দেখা উচিত, কে কি বলল সেটা দিয়ে নয়।’
নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বা স্বচ্ছতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। ক্রীড়া উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট কারো অভিযোগ বা কারো নাম না নিয়ে সামগ্রিকভাবে বলেছেন, ‘আমি কারো নাম নিচ্ছি না। তবে এটা হারার কোনো সম্ভাবনা থাকলে কেউ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। আমরা দেখব সেটা মেরিট আছে কিনা।’ আইসিসি ও বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে নির্বাচনের পক্ষেই ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত ৫ আগস্টের পর আগের বিসিবির অনেক পরিচালক পালিয়ে গেছে। ভঙ্গুর অবস্থায় আমরা পেয়েছি বিসিবিকে। ফুল টিম কাজ না করলে উন্নতি সম্ভব না। এজন্য যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন প্রয়োজন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ বিতর্কমুক্ত রেখে নির্বাচন করতে চাই। বিসিবি ও আইসিসির গাইডলাই অনুযায়ী সব কিছু হচ্ছে।’