জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের অনেকে কেন এখন সামনে আসছেন না, সে বিষয়টি ভেবে দেখার তাগিদ দিয়েছেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেছেন, “যারা এত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করল, তারা কেন মুখ লুকিয়ে ফেলল-এটাও বোঝা প্রয়োজন।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার বিস্তারিত তুলে ধরতে সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, “অনেক আহত নারী যারা ঘর বন্ধ করে লুকিয়ে আছে, সামনে আসছে না, ডিপ্রেশনে আছে, তারা কেমন আছে, দেখার কিন্তু আমাদের দায?িত্ব।”
সামাজিকভাবে এবং সাইবার স্পেসে নারীদের যে ‘অবিরাম বুলিংয়ের’ শিকার হতে হচ্ছে, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেক আজেবাজে কথা বলা হয়। কিন্তু এই মেয়েরা তো বীর যোদ্ধা। আমি বিশ্বাস করি, তারা এটার থেকে বেরিয়ে আসবে এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।”
জুলাইয়ের নারী যোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ চিত্র এবং তালিকা করার জন্য মন্ত্রণালয় গবেষণার কাজে হাতে নিয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “সেটার মধ্য দিয়ে আমরা আশা করছি, প্রত্যেকটি নারীর চরিত্র, নারী যোদ্ধাকে আমরা খুঁজে পাব।”
এর মাধ্যমে তাদেরকে চিহ্নিত করা, কাউন্সেলিং দেওয়া, পাশে থাকা এবং কীর্তি সংরক্ষণের জন্য সেবা চালু করার কথা বলেন শারমীন মুরশিদ।
তিনি বলেন, "এত বড় পরিসরে (নারীদের অংশগ্রহণ) কনটেম্পোরারি হিস্ট্রিতে নেই, যেখানে এত নারী একসাথে আন্দোলনে নেমেছে। আন্দোলনকারীরা নিজেরাই আমাকে বলেছেন, প্রায় ৬৫ থেকে ৭৯ ভাগ মেয়ে ছিল, এবং এটা বিস্ময়কর। এর সূচনাও করে মেয়েরা-প্রথম স্লোগান, প্রথম ঘর থেকে বের হওয়া, প্রথম হোস্টেল থেকে বের হয়ে আসা-এটা যেমন আমাদের সকলের চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
“ঠিক তেমনি আরেকটা অপূর্ব আমরা লক্ষ করেছিলাম, সেটি হচ্ছে ছেলেদের উপরে যখন আক্রমণ হচ্ছিল, মেয়েরা কীভাবে ছুটে গিয়ে ছেলেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। ঠিক তেমনি আমরা এটাও দেখেছি যে, মেয়েদের উপরে যখন হামলা চালাচ্ছিল, ছেলেরা তখন দৌড়ে গেছে সেখানে মেয়েদেরকেও রক্ষা করার জন্য।”
জুলাইয়ের নারীরা বিভিন্ন রকমের বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে, তারা নিজেদের আড়ালে রেখেছে–এই অবস্থা থেকে তাদের বের করা যেত কিনা-এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “এই বিষয়গুলো আমাদের গোচরে আসতে সময় লেগেছে। ১০ মাস হয়েছে, কিন্তু এখনো কিন্তু আমরা প্রতিটি যোদ্ধার কাছে পৌঁছাতে পারিনি।
“কারণটা হচ্ছে, যত সহজে আমরা বলে ফেলি, বাস্তবায়ন তার চাইতে অনেক বেশি কঠিন। এই ১০ মাসে আমাদের নারী যোদ্ধা, নারী শহীদদের বিষয়ে খুব একটা কাজ করেছি বলতে পারিনি। এখানে আমার বলা প্রয়োজন যে, আমরা নারী শহীদদের উপরে কাজ হাতে নিয়েছি এবং একটা ছোট্ট ভিডিও আমরা তৈরি করেছি, যেটা আমাদের এই মূল অনুষ্ঠানের ভিতরে থাকবে।”
এর মধ্যে যে কাজগুলো হয়েছে, সেগুলো যথেষ্ট শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল জানিয়ে শারমীন মুরশিদ বলেন, “খুবই খুশি হতাম, যদি আমরা দ্রুতগতিতে পৌঁছে যেতে পারতাম, কিন্তু আমাদের সময় লেগেছে। কারণ এই মেয়েগুলো তারা নিজেরাও সামনে আসতে চায়নি। এখন আমরা যেটা করেছি, আমরা প্রায় ১০০ জন মেয়েকে নিয়োগ করেছি, তাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য।
“যে তথ্যগুলো আমি পাচ্ছি, সেই তথ্যটা সত্যি-আমি জানি, আমাদের সবারই কষ্ট লাগবে। অনেক মেয়ে ইতিমধ্যে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা সামনে আসতে রাজি নয়, তারা কথা বলতে রাজি নয়, এবং তারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেও রাজি নয়।”
উপদেষ্টা বলেন, “এখন এটা আমাদেরকে অ্যানালাইসিস করতে হবে যে, কেন আমার সমাজে মেয়েদের এই অবস্থাটা ঘটল। এবং আমাদের অবশ্যই দায?িত্ব আছে—তাদের পাশে গিয়ে, তাদেরকে কাউন্সেলিং করে, তাদেরকে নরমাল একটা জায়গায় আবার ফিরে আনা।