হাতে রজনী গন্ধা ও
গোলাপ ফুলের পাপড়ি নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। বিদায়
সংবর্ধনা শেষে মঞ্চ থেকে অতিথিদের সঙ্গে বাইরে এলেন তাদের প্রিয় শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে সুসজ্জিত একটি
প্রাইভেট কারে তুলে দিলেন শিক্ষার্থীরা। বিদায় বেলার এমন আয়োজনে
আবেগ-আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সকলের প্রিয় বিদায়ী শিক্ষক খন্দকার
শাহাদাৎ হোসেন।
রবিবার (১৩ জুলাই) কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর
ইউনিয়নের নুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী বিদায়ের নানা
আনুষ্ঠানিকতার শেষে সন্ধ্যায় সুসজ্জিত একটি প্রাইভেট কারে সকলের প্রিয় এই
শিক্ষককে বাড়ি পৌঁছিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিদায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেশ
গড়ার লক্ষ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি।
দীর্ঘ ৩২ বছর ৬ মাস কর্মজীবন শেষে
অবসরে গেলেন বিদ্যালয়ের একজন ভালো মানের শিক্ষক খন্দকার শাহাদাৎ হোসেন।
প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতেই এমন আয়োজন বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন
শিক্ষার্থীরা।
আয়োজকরা জানান, দীর্ঘ ২২ বছর নুরপুর সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ে
এই শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন তার কর্মজীবনে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এ
প্রথম কোনো বিদায়ী শিক্ষককে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া
হয়েছে। তার এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক ও
শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা
জানান, দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন
শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন শিক্ষার্থীদের হাতে। সেখানে আমরা আমাদের প্রাণ-প্রিয়
শিক্ষাগুরু শাহাদাৎ স্যারকে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদায় সংবর্ধনা
দিয়েছি। এ ছাড়া ফুলসজ্জা গাড়িতে করে স্যারকে আমরা তার বাড়িতে দিয়ে আসলাম।
মহান এ শিক্ষাগুরু আর কোনদিন শ্রেণী কক্ষে পাঠদানে উপস্থিত থাকবেন না। তার
শিক্ষায় আমরা আজ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি।
বিদায়ী
সংবর্ধিত শিক্ষক খন্দকার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আজ আমি নিজেকে সার্থক মনে
করি। ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে লাকসাম উপজেলার ইছাপুরা কেন্দ্রীয় সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করি। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আমার সকল
ছাত্র-ছাত্রী দেশের এ ক্লান্তি মুহূর্তে আমাকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে। এ
বিদ্যালয় থেকে এর-আগে আর কোনো শিক্ষক সংবর্ধিত হয়নি। তাদের প্রতি আমার
ভালোবাসা কখনও শোধ করা সম্ভব নয়। আমি সবসময় চেয়েছি তাদেরকে আদর্শ মানুষ
হিসেবে গড়ে তুলতে। আজ তারা আমাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজিত সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।
উপজেলা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মজুমদার
এর সভাপতিত্বে আয়োজিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে
বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাফর আল সাদেক, বিশেষ অতিথি
ছিলেন সহকারী শিক্ষা অফিসার আলমগীর হোসেন, আলীশ্বর সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক বিকাশ সিনহা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহুরুল
হক, কাপাসতলা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক
মঞ্জুমা সুলতানা, সমাজ সেবক আবদুল ওহাব ও রেহান উদ্দীনসহ প্রাক্তন শিক্ষক ও
শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।