প্রকাশ: সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ৪:৪৪ পিএম |
কুমিল্লায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে আক্রান্তের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী দাউদকান্দিতে। ভয়াবহ আকারে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় ইতোমধ্যে দাউদকান্দি পৌরসভাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গেল ২৪ ঘন্টায় দাউদকান্দিতে নতুন করে আরো ৯৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এনিয়ে উপজেলায় প্রায় ১৮শ ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫ জন। মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন নারী ও একজন পুরুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জানুয়ারি থেকে গেল ১৮ জুন পর্যন্ত এ উপজেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ছিল ৭শ জন। মৃত্যু ছিল ৩ নারীর। আর শুধুমাত্র ১৯ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত সবশেষ ৫ দিনে ১১ ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এতে করে মনে হচ্ছে দাউদকান্দির ডেঙ্গু সংক্রমণ ধীরে ধীরে মহামারির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখনই ডেঙ্গু মোকাবেলায় সচেতন হতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ শুরু হলেও ঈদ উল আজহার ছুটিতে তা ভয়াবহ আকারে রূপ নেয়। প্রতিদিনই উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগি।
স্থানীয়রা বলছেন, পৌর এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে। ঈদের ছুটিতেই পৌর প্রশাসনের উদাসীনতায় নিরবে ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করে। অপরিষ্কার ড্রেন ও নালায় এডিস মশা দ্রুত জন্ম নেয়। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু এবং পৌর এলাকার দোনারচর, সবজিকান্দিসহ আশপাশের এলাকাগুলোকে ডেঙ্গুর ইতোমধ্যে মহামারি আকার ধারণ করেছে।

দোনারচর এলাকার লিয়াকত আলী নামে এক বাসিন্দা জানান, পৌরসভা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দোনারচর এলাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে। এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তার পরিবারের ১০ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তিনিও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধ ডেঙ্গু আক্রান্ত নিয়ে খুবই দৌড়াদৌড়ি ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
লেয়াকতের অভিযোগ, ঈদের ছুটিতে তার দোনারচর ও পৌর এলাকাজুড়ে ডেঙ্গু দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যত কোন উদ্যোগ নেয় পৌর কর্তৃপক্ষের। মশক নিধনে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কর্মকাণ্ড চালালেও ফলপ্রসু কোন ফল আসছে না।
সাহা পাড়ার বাসিন্দা হেদায়েত উল্লাহ বলেন, প্রতিটি ঘরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে, মারাও যাচ্ছে মানুষ। অধিকাংশ মৃত্যু তালিকাভুক্ত হচ্ছে। আক্রান্তরা পৌর এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে গৌরীপুরে গিয়ে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ দূরের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের আর্থিক ভাবে হিমশিম খাচ্ছেন। আমার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই লক্ষণ উপসর্গ থাকে ডেঙ্গু শনাক্ত না করে বাড়িতে থাকছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা না নেয়ায় তাদের কাছ থেকে সংক্রমণের হার বাড়ছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই ১০০ ছুঁই ছুঁই রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিরোধে পৌরসভা হটস্পট এলাকায় ঘোষণা করে চালানো হচ্ছে নানান প্রচারাভিযান। মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্তের উদ্বুদ্ধকরণ ছাড়াও গঠন করা হয়েছে রেপিড রেসপন্স টিম।