স্পিনার
শোয়েব বাশিরের বল অফ সাইডে ঠেলেই দৌড় দিলেন রিশাভ পান্ত। রান পূর্ণ হতেই
শুরু করলেন কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি ছোঁয়ার উদযাপন। ম্যাচের প্রথম ইনিংসেও
শতকের স্বাদ পাওয়া ভারতীয় কিপার-ব্যাটসম্যান নিজেকে তুলে নিলেন টেস্ট
ইতিহাসের এমন এক পাতায়, যেখানে তিনি ছাড়া আছেন আর কেবল একজন।
ইংল্যান্ডের
বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৮ রান করেন পান্ত। তার ১৪০ বলের
ইনিংসটি সাজানো ৩ ছক্কা ও ১৫ চারে। প্রথম ইনিংসে ১৩৪ রান করেছিলেন তিনি ৬
ছক্কা ও ১২ চারে।
টেস্টের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এক ম্যাচে দুই ইনিংসেই
সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় কিপার-ব্যাটসম্যান পান্ত। প্রথমজন জিম্বাবুয়ের
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারারেতে ১৪২ ও
অপরাজিত ১৯৯ রান করেছিলেন এই ব্যাটিং গ্রেট।
লিডসে জোড়া সেঞ্চুরি করে
আরও কিছু রেকর্ড ও কীর্তির জন্ম দিয়েছেন পান্ত। ইংল্যান্ডের মাটিতে এক
টেস্টের দুই ইনিংসে শতক করা প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার তিনি।
টেস্টে জোড়া
সেঞ্চুরি করা ভারতের সপ্তম ব্যাটসম্যান পান্ত। সবচেয়ে বেশি তিনবার এই
কীর্তি গড়েছেন সুনিল গাভাস্কার। দুইবার রাহুল দ্রাবিড়। পান্তসহ একবার করে
এই স্বাদ পেয়েছেন ভিজায় হাজারে, ভিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানে ও রোহিত
শার্মা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পান্তের টেস্ট সেঞ্চুরি হলো পাঁচটি। টেস্ট
ইতিহাসে একটি নির্দিষ্ট দলের বিপক্ষে এত সেঞ্চুরি করতে পারেননি আর কোনো
কিপার-ব্যাটসম্যান।
প্রথম ইনিংসে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ভারতের উইকেটকিপার
হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডে মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে (৬)
ছাড়িয়ে যান পান্ত। সেই রেকর্ড তিনি আরও সমৃদ্ধ করলেন এবার অষ্টম সেঞ্চুরি
করে।
কিপার হিসেবে পান্তের চেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি আছে কেবল অ্যান্ডি
ফ্লাওয়ার (১২) ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের (১৭)। তার সমান ৮টি আছে ইংল্যান্ডের
লেস অ্যামিসের।
ইংল্যান্ডই যেন পান্তের ডেরা। তার ৮ টেস্ট সেঞ্চুরির
৪টিই এসেছে দেশটির মাটিতে। এখানে একটির বেশি সেঞ্চুরি নেই আরও কোনো সফরকারী
কিপার-ব্যাটসম্যানের।
টেস্ট ইতিহাসে ইংল্যান্ডে পান্তের চেয়ে বেশি
সেঞ্চুরি করতে পারেননি আর কোনো উইকেটকিপার। দেশটিতে তার সমান চারটি করে
সেঞ্চুরি আছে ম্যাট প্রায়র ও অ্যালেক স্টুয়ার্টের।
শুধু তাই নয়,
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পান্তের ভারতের চেয়েও বেশি সেঞ্চুরি ইংল্যান্ডের
মাটিতে, ২৭ ইনিংসে ৫টি। ভারতে ৬৩ ইনিংসে তার সেঞ্চুরি ২টি, দক্ষিণ আফ্রিকায়
৯ ইনিংসে একটি, অস্ট্রেলিয়ায় ২৫ ইনিংসে একটি।
তার একমাত্র ওয়ানডে সেঞ্চুরিটিও ইংল্যান্ডে, ২০২২ সালে ম্যানচেস্টারে ১১৩ বলে অপরাজিত ১২৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
৪৪
টেস্টে অষ্টম সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন পান্ত। তার এই সেঞ্চুরিসংখ্যা হতে
পারত দ্বিগুণ, কিন্তু নব্বইয়ের ঘরে আউট হন তিনি ৭ বার! একবার অপরাজিত রয়ে
যান ৮৯ রানে।
জোড়া সেঞ্চুরি করার ম্যাচে পান্ত মোট রান করেছেন ২৫২।
ইংল্যান্ডের মাটিতে এক টেস্টে এত রান করতে পারেননি আর কোনো
কিপার-ব্যাটসম্যান। আগের সর্বোচ্চ ছিল অ্যালেক স্টুয়ার্টের ২০৪, ১৯৯৮ সালে
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ৪০ ও ১৬৪ রান করেছিলেন তিনি।
প্রথম
ইনিংসে ৬টি পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৩টি ছক্কা মারেন পান্ত। ইংল্যান্ডে এক
টেস্টে ৯টি ছক্কা কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। পান্তের আগে ২০০৫ সালে
অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফ ও ২০২৩ সালে বেন স্টোকস ৯টি করে ছক্কা মেরেছিলেন।
হেডিংলিতে
সোমবার চতুর্থ দিনের সপ্তম বলেই ফিরে যান শুবমান গিল। ক্রিজে গিয়ে
মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে চার মেরে রানের খাতা খোলেন পান্ত। এরপর কিছুটা ধীরলয়ে
ইনিংস বড় করতে থাকেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
দিনের প্রথম সেশন শেষে
পান্তের রান ছিল ৫৯ বলে ৩১। পরে কিছুটা দ্রুত রান বাড়িয়ে ৮৩ বলে ফিফটিতে পা
রাখেন তিনি। পঞ্চাশ থেকে সেঞ্চুরি স্পর্শ করতে তার লাগে ৪৭ বল। নব্বইয়ের
ঘরে গিয়ে ২৬ বল খেলেন তিনি।
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর ডিগবাজি দিয়ে
উদযাপন করলেও, এবার তেমন কিছু তিনি করেননি। তবে চোখের পাশে হাত রেখে যেন
বোঝাতে চাইলেন কিছু একটা।
সেঞ্চুরির পর জো রুটকে টানা তিন বলে দুটি চার ও
একটি ছক্কা মারেন পান্ত। পরের ওভারে বাশিরের বলে ধরা পড়েন লং-অনে। শেষ হয়
তার চমৎকার ইনিংসের পথচলা।
পান্তের আগে এ দিন সেঞ্চুরি করেন লোকেশ
রাহুলও। এই টেস্টে এই নিয়ে পাঁচটি সেঞ্চুরি করলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।
দেশটির টেস্ট ইতিহাসে এক ম্যাচে যা সর্বোচ্চ।