সপ্তাহ
দুয়েক আগেই ২০২৬ বিশ্বকাপের কাউন্টডাউন শুরু করেছে ইভেন্টটির বিশ্ব
নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। আগামী বছরের ১১ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও
কানাডায় ফুটবলের সর্বোচ্চ এই প্রতিযোগিতা শুরু হবে। ইতোমধ্যে আসন্ন
বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে তিন আয়োজকসহ ১৩টি দেশ। সেই তালিকায় আছে
এশিয়ান দেশ ইরানও। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে
সংঘাত তাদের খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের
সঙ্গে ইরানের রাজনৈতিকভাবে বৈরি সম্পর্ক ছিল। ফলে দেশটির কেউ যুক্তরাষ্ট্র
ভ্রমণেও ছিল কড়াকড়ি। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবস্থাকে কেন্দ্র করে সেই
সম্পর্ক আরও চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ইরানের বিশ্বকাপ
খেলা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ফিফার নিয়ম অনুসারে দেশটিতে গিয়ে ইরানের
খেলায় কোনো সমস্যা নেই। তবে যুদ্ধরত অবস্থায় কোনো দেশের বিশ্বকাপে
নিষেধাজ্ঞায় পড়ার রীতি আগেও দেখা গিয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
প্রশাসন আগে থেকেই ইরানিয়ান নাগরিকদের তার দেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে
রেখেছে। যার অধীনে ২০২৬ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও
সংশ্লিষ্ট অন্যদের ভ্রমণও সীমিত হতে পারে। অবশ্য আরেকটি বিকল্প আছে ইরানের
সামনে। তিন দেশে টুর্নামেন্টটি আয়োজন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও রাখা
যেতে পারে তাদের ম্যাচ। একইভাবে গ্রুপপর্বের পর রাউন্ড অব থার্টি টু এবং
শেষ ষোলোর ম্যাচও হতে পারে মেক্সিকোয়। যদিও এখন পর্যন্ত ইরান কখনও
বিশ্বকাপের নকআউট রাউন্ডে উঠতে পারেনি।
এর আগে সর্বশেষ ২০২২ কাতার
বিশ্বকাপে একই গ্রুপে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। গত মার্চে এশিয়ান দেশটি
বাছাইয়ের মাধ্যমে টানা চতুর্থবার বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে। আসন্ন আসরে
তাদের যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ম্যাচ রাখতে হলে একটি স্লট খালি আছে, তা হচ্ছে
‘এ’ গ্রুপ। যেখানে থাকা দলগুলো গ্রুপপর্ব খেলবে মেক্সিকোয়। তাদের জন্য সেই
ব্যবস্থা করা হবে কি না তা জানতে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ থেকে যোগাযোগ
করলেও, ফিফা জবাব দেয়নি। ফলে আগামী ডিসেম্বরে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ ড্র
অনুষ্ঠানে ইরানকে গ্রুপ ‘এ’-তে রাখা হবে কি না তা এখনও অনিশ্চিত!
ফিফা
সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর জন্যও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রে
হতে যাওয়া বিশ্বকাপ আসরের জন্য যিনি ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে
যৌথভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন। এই মার্কিন প্রধানের নির্দেশে
সম্প্রতি ইরানের তিনটি নিউক্লিয়ার স্থাপনায় হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার
জবাব হিসেবে ইরাক ও কাতারে অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
চালায় ইরানও। তবে আজ (মঙ্গলবার) ট্রাম্পের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের
ঘোষণা এলে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এরপরও পরস্পর হামলা অব্যাহত রেখেছে
ইরান-ইসরায়েল।
ইনফান্তিনো এবঙ ফিফার কাউন্সিল শেষ পর্যন্ত ইরানের
বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ফিফা প্রতিযোগিতা আয়োজন কমিটির
সদস্য হিসেবে আছে কানাডা, মেক্সিকো ও ইরানের প্রতিনিধি। একই কমিটির সদস্য
উয়েফার সভাপতি আলেক্সান্ডার সেফরিন। যিনি ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেন ও
বেলারুশকে উয়েফার প্রতিযোগিতা থেকে বিরত রেখেছে। তারই দেখাদেখি ফিফাও
যুদ্ধরত ইরানকে বিশ্বকাপের বাইরে রাখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এর আগে
ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করে ফিফা ও
উয়েফা। ৯০ দশকে বলকান সংঘাতের সময় নিষিদ্ধ হয়েছিল যুগোস্লাভিয়াও।