রণবীর ঘোষ কিংকর।
কুমিল্লার
চান্দিনা উপজেলার কেরণখাল ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি রুহুল কুদ্দুস মাহিন এর
বিরুদ্ধে দুই বছর আগের সরকারি পরিত্যক্ত গাছের টুকরো আত্মসাতের অভিযোগের
ঘটনায় ফুসে উঠেছে ইউনিয়ন বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ওই
অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতির পক্ষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
সমাবেশ করেছে তারা।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে উপজেলার কেরণখাল ইউনিয়ন
পরিষদ প্রাঙ্গণে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ
সমাবেশে বক্তৃতা করেন নেতা-কর্মীরা। এর আগে চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি
সময়ে কেরণখাল ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ থেকে গাছের ৩টি টুকরো খোয়া যায়। প্রায় দুই
বছর পূর্বে সরকারি জায়গার গাছ কর্তনের অভিযোগে গাছগুলো জব্দ করে ইউনিয়ন
পরিষদের মাঠে রাখেন উপজেলা প্রশাসন।
ওই ইউনিয়ন বিএনপি’র অপর একটি গ্রুপ
অভিযোগ তোলেন ওই ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি রুহুল কুদ্দুস মাহিন লোক মারফত
গাছগুলো ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ থেকে নিয়ে যান। ওই অভিযোগের সূত্রধরে গণমাধ্যমে
প্রকাশিত হয় ‘৫টি গাছের ৮ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে ১৫টি টুকরো’ আত্মসাৎ করেন রুহুল
কুদ্দুস।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে
কেরণখাল ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি রুহুল কুদ্দুস মাহিন বলেন- সরকারি জায়গার ৩টি
রেইনট্রি গাছ কর্তন করেছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তৎসময়ের ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যান সুমন ভূইয়ার লোকজন। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কোরেরপাড়
গ্রামের ইব্রাহীম ভূইয়া সরকারি গাছ কর্তন ও আত্মসাতের অভিযোগ এনে দেলোয়ারা
বেগম নামে এক নারীর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ
করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন গাছের টুকরোগুলো জব্দ করে
ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে স্তুপ করে রাখে। গত ৫ আগস্টের পর আমি ও আমার
নেতা-কর্মীরাই এই ইউনিয়ন পরিষদ পাহারা দিয়েছি। যদি গাছগুলো আত্মসাৎ করার
কোন লোভ থাকতো তখনই আমি নিতে পারতাম। এগুলো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও
উদ্দেশ্য প্রনোদিত। আমার ইউনিয়নের কিছু নব্য বিএনপি নেতা বেশ কিছুদিন যাবৎ
গাছের টুকরোগুলো নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে এবং সংবাদ কর্মীদের
মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। এটি আমার ও আমার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার
অপচেষ্টা মাত্র।
মানববন্ধনে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের
নেতা-কর্মীরা দাবী করেন- আওয়ামী লীগ আমলে রুহুল কুদ্দুস মাহিন একজন
কারানির্যাতীত বিএনপি নেতা। তার বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা করে আওয়ামী লীগ সরকার
দলীয় লোকজন। তারপরও তিনি কখনও কারও কাছে মাথানত করেননি। গাছের ‘৮ইঞ্চি
টুকরো’ আত্মসাৎ বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও হাস্যকর। তার বিরুদ্ধে টিসিবি
কার্ডের অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু টিসিবি কার্ড বিতরণ সম্পূর্ণ
চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দায়িত্ব।
এসময় বক্তৃতা করেন- কেরণখাল ইউনিয়ন
বিএনপি সিনিয়র সহ-সভাপতি শামীম খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম মিয়া, সমাজ
কল্যাণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা ওলামা দল সভাপতি মাওলানা তাজুল
ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি নাছির মিয়াজী, উপজেলা জাসাস এর সদস্য সচিব
পল্লী চিকিৎসক ফখরুল ইসলাম, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকদল সদস্য সচিব আনিছুর রহমান
ভূইয়া প্রমুখ।
এ ব্যাপারে কেরণখাল ইউনিয়ন পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
সেলিম মিয়া জানান- প্রায় দুই বছর আগে গাছগুলো জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে
রাখে প্রশাসন। এখনও অনেকগুলো গাছের টুকরো পড়ে আছে। আগের চেয়ারম্যান ও সচিব
কেউ আমাকে দায়িত্ব বা পরিষদে কি কি আছে তা বুঝিয়ে দেয়নি। সেই হিসেবে এখানে
গাছের কয়টি টুকরো ছিল বা বর্তমানে কয়টি আছে তা আমার জানা নেই।
এ
ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান- এ
বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছি।
তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।