শেষের
বাঁশি বাজতে উল্লাসে মাতল সিঙ্গাপুর দল। মাঠও তারা ছাড়ল দ্রুত। কিন্তু
অন্য প্রান্তে ভিন্ন চিত্র। হামজা-শোমিত-রাকিবদের যেন পা নড়ছিল না! বেশ
কিছুক্ষণ তারা মাঠেই রইলেন। কেউ ঠাঁই দাঁড়িয়ে, কেউ বসে, শুয়ে মুখ ঢেকে
রাখলেন। রাজ্যের বিষণ্ণতার চাদর যেন মুড়িয়ে রেখেছিল দলকে। এক পর্যায়ে
গ্যালারির কাছে এসে সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে হোটেলে ফিরলেন তারা। টিম
হোটেলে মঙ্গলবার রাতটি হামজা-শোমিতদের কেটেছে উচ্ছ্বাসহীন, সুনসান নীরবতায়।
ঘরের
মাঠে ২-১ গোলের হার মেনে নিতে পারেননি খেলোয়াড়রা। টিম হোটেলে তাদের রাতটিও
বিষন্নতায় কেটেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে আলাপচারিতায়
জানালেন বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন। বিমর্ষ দলকে উজ্জীবিত
করতে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা টিম মিটিংয়ে অনেক উদ্দীপনামূলক কথাও বলেছেন,
বিশেষ করে মনে করিয়ে দিয়েছেন হংকংয়ের বিপক্ষে আসছে ম্যাচের কথা।
“(ম্যাচের
আগে) গত কয়েকদিন যে প্রাণোচ্ছল আবহ ছিল, হাসি-খুশি যে পরিবেশ ছিল, সেটা
কাল রাতে ছিল না। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে সমর্থকদের, আমাদেরও
প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি, কিন্তু কাঙিক্ষত ফল পাইনি আমরা। সেটা না পাওয়ায়
স্বাভাবিকভাবেই ছেলেরা হতাশ ছিল। ওরা খুব কষ্ট পেয়েছে। রাতে টিম হোটেলে
ফেরার পরও তারা ছিল বিমর্ষ। একসাথে ডিনার করেছি আমরা।”
“এরপর কোচ টিম
মিটিংয়ে ছেলেদের উদ্দীপ্ত করতে অনেক কথা বলেছেন। এ মুহূর্তে আমাদেরই
দায়িত্ব হতাশ খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করা। কোচ এবং আমরা যারা টিম স্টাফ আছি,
সবাই সেই চেষ্টা করেছি নানা কথা বলে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে। সামনে
হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ আছে, সেই ম্যাচে যেন আমরা ভালো করতে পারি, এজন্য
তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নিতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন কোচ।”
সবচেয়ে
বেশি হতাশ ছিলেন হামজা চৌধুরী। বাংলাদেশের জার্সিতে গত মার্চে শিলংয়ে
ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল তার। গোলশূন্য সেই ড্র ম্যাচে আলো ছড়িয়েছিলেন
হামজা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লেস্টার সিটির এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
গোল পেয়েছিলেন ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে, বাংলাদেশও ম্যাচটি জিতেছিল
২-০ ব্যবধানে। হামজাকে ঘিরে তাই সবার প্রত্যাশার পারদ চড়েছিল উঁচুতে।
এশিয়ান
কাপের বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে প্রথম জয় পেতে মুখিয়ে ছিলেন হামজাও। কিন্তু
দুই গোলে পিছিয়ে পড়া দলকে রাকিব হোসেন ম্যাচে ফেরার উপলক্ষ এনে দিলেও শেষ
পর্যন্ত সমতাসূচক গোলের দেখা পায়নি দল। হাসান আল মামুন বললেন, সিঙ্গাপুরের
বিপক্ষে ম্যাচটি খুব করে জিততে চেয়েছিলেন হামজা।
“এই ম্যাচ নিয়ে হামজার
প্রত্যাশা ছিল অনেক। দেশের মাঠে বাছাইয়ে প্রথম জয় পেতে সে খুব উন্মুখ ছিল।
ছেলেটা ভীষণ বিনয়ী, মিশুক। সবসময় হাসিখুশি থাকে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হারের
পর স্বাভাবিকভাবেই সে খুব হতাশ ছিল। তবে, সে ভীষণ পেশাদার; এই হারের
প্রভাবে মুষড়ে পড়বে না। আমার বিশ্বাস, হংকং ম্যাচের জন্য সে আরও শক্তিশালী
হয়ে ফিরে আসবে।”
সিঙ্গাপুর ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম খেলতে
নেমেছিলেন শোমিত সোম। কানাডার লিগে খেলা এই মিডফিল্ডারের অভিষেকটাও হয়নি
জয়ের রঙে রঙিন। ইতালির সেরি ডি’তে খেলা ফাহামিদুল ইসলামও জয়ের স্বপ্ন নিয়ে
নেমেছিলেন মাঠে, কিন্তু এই তরুণ ফরোয়ার্ডও পারেনি গোলের চাহিদা পূরণ করতে।
হামজার মতো তাদের রাতটি আনন্দহীন কেটেছে বলে জানালেন হাসান আল মামুন।
“আপনারাও
দেখেছেন, দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও কিন্তু ছেলেরা হাল ছাড়েনি।
দ্বিতীয়ার্ধে ছেলেরা ভালো খেলেছে, বিশেষ করে রাকিব ব্যবধান কমানোর পর সবাই
ভালো ফল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। শোমিত, ফাহামিদুলরা প্রেস করে
খেলেছে, হাল ছাড়েনি।”
“সবসময় আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার ছিল, ওদের চেপে
ধরেছিল ছেলেরা, দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের পেনাল্টিটা আমাদের প্রাপ্য
ছিল। আসলে ভাগ্যকেও কাল পাশে পাইনি আমরা। সব মিলিয়ে সবাই খুব হতাশ ছিল।
শোমিত, ফাহামিদুল সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে ভীষণ আশাবাদী ছিল, জয় না পাওয়ায়
ভীষণ কষ্ট পেয়েছে ওরাও।”
হতাশার বলয় ভেঙে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশ এখন
তাকিয়ে অক্টোবরে হংকংয়ের বিপক্ষের ম্যাচের দিকে। ৯ অক্টোবর ঘরের মাঠে, ১৪
অক্টোবর প্রতিপক্ষের ডেরায় খেলবে দল। বুধবার ছুটিতে যাবেন কাবরেরা। ছুটি
পাচ্ছেন খেলোয়াড়রাও। এই ছুটির মধ্যে সিঙ্গাপুর ম্যাচের চুলচেরা বিশ্লেষণও
চলবে। খতিয়ে দেখা হবে ভুল-ত্রুটিগুলো।
‘সি’ গ্রুপের টেবিলের হিসাব কষে
সাজাতে হবে ছক। এ মুহূর্তে ৪ করে পয়েন্ট সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের। বাংলাদেশ ও
ভারতের পয়েন্ট ১ করে। অবশ্য টেবিলে ভারতের ওপরেই আছে বাংলাদেশ। বাছাইয়ের
বাধা পেরিয়ে মূল পর্বে যেতে হলে হতে হবে গ্রুপ সেরা। পথটা কঠিন, তবে অসম্ভব
নয়। এই ছুটিতে তাই হামজা-রাকিবদের মাঝের সময়ের করণীয় বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে
বলে জানালেন হাসান আল মামুন। সাবেক এই ডিফেন্ডারের আশা, আরও শক্তিশালী হয়েই
হংকংয়ের বিপক্ষে নামবে দল।
“কাবরেরা আজ ছুটিতে যাবে। খেলোয়াড়দের অনেকে
রাতেই টিম হোটেল ছেড়েছে, কেউ সকালে গেছে। হামজা-শোমিতরা সকালে হোটেল
ছেড়েছে। তবে আমরা তাদের বলেছি, এই হারে সবকিছু শেষ না, আরও খেলা আছে।
ছুটিতে যাও, হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য সতেজ হয়ে ফিরে এসো।