
৩০
মে ১৯৮১ বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক অভিশপ্ত কালোরাত। মহান স্বাধীনতার
ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণা নিয়ে এই
স্বাধীন ভূখণ্ডের সকল জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে “বাংলাদেশী” হিসাবে বিশ^ দরবারে
বাঙালসহ সকল গোষ্ঠির জাতীয়তা সৃষ্টির ধারক বাহক, ইসলামি বিশে^র এককালীন
অবিসংবাদিত নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ দিবস হিসাবে ৩০ মে
আজও বাঙালির হৃদয়ে জেগে আছে।
১৯৮১ এর ২৯ মে তৎকালীন বাংলাদেশের
রাষ্ট্রপতি ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিশেষ
কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ৪৮ ঘন্টার নোটিশে চট্টগ্রাম সফরে যান। দলীয়
কর্মসূচী ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাত্রীযাপনের লক্ষ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন।
১৯৮০ সালের
অক্টোবরে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র-ছাত্রী সংসদ
(চাকসু) নির্বাচনে আমি সিরাজ-সেলিম পরিষদের হয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম বিধায় ব্যক্তিগতভাবে শহীদ জিয়া আমাকে একজন
ছাত্রনেতা হিসেবে চিনতেন। পরবর্তীকালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন
সংগ্রামে ঢাকা সহ বৃহত্তর কুমিল্লায় যুবদল ও বিএনপির একজন একনিষ্ঠ সংগঠক
হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আস্থা অর্জন করে তাঁর স্নেহধন্য কর্মী
হিসেবে আজও জাতীয়তাবাদী দলকে এগিয়ে নিয়ে শহীদ জিয়ার আদর্শকে সমুন্নত করে
স্বচ্ছ রাজনৈতিক ধারা ও সমসাময়িক কুমিল্লার জনগণের বিভিন্ন দাবী-দাওয়া
আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা রেখে চলেছি।

৩০ মে ১৯৮১ মধ্যরাতে চট্টগ্রামের
সার্কিট হাউজে ভোর ৪টার দিকে ঘুমন্ত জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম
সেনানিবাসের বিপথগামী একদল সামরিক অফিসারসহ অন্যরা সেনাবাহিনীর কয়েকটি
গাড়ি নিয়ে গুলি করতে করতে সার্কিট হাউজে প্রবেশ করে (তথ্য সূত্র- দুই
জেনারেল হত্যাকাণ্ড, ১৯৮১ ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান শিরোনামে বই, লেখক-
জিয়াউদ্দিন এম. চৌধুরী)। রাষ্ট্রপতিকে প্রহরারত সামরিক বাহিনীর প্রটোকল
অফিসার/পুলিশসহ অন্যদের প্রতিরোধ এই বিপথগামীদের পথরোধ করতে ব্যর্থ হলে
বর্ণনার আলোকে বিপথগামী সেনাদের কয়েকজন সিঁড়ি বেয়ে উপর উঠে প্রেসিডেন্টের
রুমের দিকে যায়। রাষ্ট্রপতিকে নির্মমভাবে হত্যা করে কিছুক্ষণের মধ্যেই
সার্কিট হাউজ ত্যাগ করে মর্মে সহকারী প্রটোকল অফিসার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে
উল্লেখ করে।
পরবর্তীতে শহীদ জিয়ার হত্যাকান্ডের বর্ণনায় জানা যায়
তৎকালীন রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের কর্ণেল আহসান ও এডিসি ক্যাপ্টেন
হাফিজ সহ কয়েকজন প্রতিরোধ করতে গিয়ে বিপথগামীদের হাতে শাহাদাৎ বরণ করেছেন
মর্মে দেশবাসী অবগত আছেন। শহীদ জিয়ার সফর সঙ্গীদের মধ্যে তৎকালীন বিএনপির
সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (পরবর্তীকালে
রাষ্ট্রপতি) সহ অন্যান্য কয়েকজন নেতৃবৃন্দ সার্কিট হাউজে অবস্থান করছিলেন।
এদিকে
৩০ মে ১৯৮১ শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দলের অঙ্গ সংগঠন
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মেলন ঢাকায় মিন্টুরোডস্থ গণভবনে
অনুষ্ঠিত হইবে মর্মে সারা দেশ থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রত্যুষ হতেই
জমায়েত হতে শুরু করেন। উক্ত সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি
ও দলীয় প্রধান জিয়াউর রহমান। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে জাতীয়তাবাদী
ছাত্রদলের সারা দেশের নেতাকর্মীরা ট্রেন, বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে ভোর হতেই
ঢাকার রাজপথে মিছিল সহকারে সমবেত হয়ে গণভবনের দিকে অগ্রসরমান।
আমি
তৎকালীন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় এর ছাত্র নেতা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সংগঠক
হিসাবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদল নেতাকর্মীদের
সংগঠিত করে ঢাকায় সম্মেলনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতিপর্ব শেষে ২৯ মে ১৯৮১ বিকাল
৩টায় চট্টগ্রাম রেল ষ্টেশন হইতে তৎকালীন সমতা এক্সপ্রেসে আমার নিজ
রাজনৈতিক ভূমি কুমিল্লার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের ঢাকায় সম্মেলনে
যোগদানের বিষয়ে একত্রে গমনের উদ্দেশ্যে রাত ৯টায় কুমিল্লায় পৌছে
কান্দিরপাড়স্থ তৎকালীন নূর ম্যানশনে বিএনপি যুবদল-ছাত্রদল কার্যালয়ে হাজির
হই। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন থানা ও শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কান্দিরপাড় চত্বর ছিল স্লোগান মুখর।
সেই সময়ের জেলা ছাত্রদলের সভাপতি বন্ধুবর সফিকুর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক
আবদুর রউফ চৌধুরী ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ সহ তৎকালীন
যুবদলের সভাপতি মোঃ শাহআলম (ভিপি শাহআলম), যুবদল সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক
আহমেদ (নাঙ্গলকোটের অধিবাসী) সহ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি আজও স্মৃতিপটে ভেসে
উঠে। আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি প্রয়াত ভিপি শাআলম, মোস্তাক, আব্দুর রউফ
চৌধুরী ফারুকসহ যে সমস্ত সাথীরা শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নে বিএনপির
পতাকাকে সমুন্নত করে ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
কুমিল্লা কান্দিরপাড় যুবদল
কার্যালয় হইতে প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী মিছিল সহকারে কুমিল্লা রেলষ্টেশনে
তৎকালীন সময়ের চট্টগ্রাম-ঢাকা মেইলে ঢাকায় ছাত্রদলের সম্মেলনে যোগদানের
লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হয়।
৩০ মে ১৯৮১ কুমিল্লা
রেলষ্টেশন হইতে রাত ২টা ৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে আমরা সকলেই ট্রেনের
ছাদসহ বিভিন্ন বগিতে আরোহন করে সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই।
উল্লেখ্য, উক্ত ট্রেনে চট্টগ্রাম হইতে আরও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সম্মেলনে
যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছিলেন। ঢাকা যাত্রাপথে প্রত্যেকটি
রেলষ্টেশনে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে সম্মেলনে
যোগদানের বিষয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল। ভোর ৬টা৩০ মিনিটে নাগাদ
সম্মেলনে আগত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ঢাকা কমলাপুর রেলষ্টেশনে পৌঁছে মিছিল
সহকারে গণভবনে সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় খন্ডখন্ড
মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন।
কুমিল্লার আগত নেতাকর্মীরা সকাল ৮টা নাগাদ
নাস্তা শেষ করে বর্তমান নয়াপল্টস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সম্মুখে উপস্থিত হলে
সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রেডিও বা টিভিতে তখনও শহীদ জিয়ার
হত্যাকাণ্ড বিষয়ে কোনো ঘোষণা প্রচারিত হয়নি। দলীয় কার্যালয় সম্মুখে
নেতাকর্মীরা কানাঘুষায় শহীদ জিয়ার হত্যাকাণ্ড বিষয়টি অবহিত হয়ে কান্নায়
ভেঙ্গে পড়েন। এক পর্যায়ে সকল নেতাকর্মীরা এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ জানাতে মিছিল সহকারে গণভবনে সকাল ৯/৯:৩০ টা নাগাদ পৌছালে আগত
প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক ছাত্রদল কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কেন্দ্রীয়
ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। উল্লেখ্য তৎকালীন সময়ের
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম চৌধুরী, ছাত্রনেতা শাহ্ আহমেদ বাদল, ওমর
ফারুক ভূঁইয়া, মাহাবুব উদ্দিন খোকন সহ আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ
সমেত শহীদ জিয়ার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গণভবন থেকে প্রতিবাদ মিছিল শহীদ
মিনার অভিমুখে যাত্রার ঘোষণা দিলে তৎকালীন ছাত্রদল সভাপতি গোলাম সরোয়ার
মিলনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হোটেল শেরাটন হয়ে তৎকালীন রেডিও বাংলাদেশ এর
সম্মুখে প্রতিবাদ মিছিলটি পৌছালে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। চট্টগ্রাম
বিভাগীয় প্রতিনিধি হিসাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রায় সকল উর্ধ্বতন
নেতৃবৃন্দ আমার বন্ধুসম ও পরিচিত ছিলেন। রেডিও বাংলাদেশের সামনে আমরা দূর
থেকে সামরিক বাহিনীর সুসজ্জিত সদস্যসহ কয়েকটি আর্মি ট্রাক এর অবস্থান দেখে
মিছিলে গুলি হবে আশংকা নিয়ে আমরা অগ্রসর হতে থাকি। মিছিলটি সামরিক বাহিনীর
ট্রাকের নিকট পৌছলে ‘আমি সিপাহি জনতা ভাই ভাইÑ জিয়া হত্যার বিচার চাই, শহীদ
জিয়ার রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, আমরা সবাই জিয়া হবো- জিয়া হত্যার বদলা
নেবো’ এই ধরনের স্লোগান নিয়ে অগ্রসর হতে থাকলে হঠাৎ করে আমাদের মিছিল দেখে
ট্রাকে অবস্থানরত সামরিক সদস্যরা হাততালি দিয়ে আমাদের সমর্থন জানান। এই
ঘটনা আশেপাশে রাস্তায় দন্ডায়মান উৎসুক জনতা অবলোকন করে মুহূর্তেই উক্ত
মিছিলে যোগদান করে মিছিলকে জনস্রোতে রূপান্তরিত করে আমরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
ক্যাম্পাস অভিমুখে রওয়ানা হই।
জাদুঘর হয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের
লাইব্রেরীর সম্মুখ দিয়ে মধুর কেন্টিন পেরিয়ে উক্ত ছাত্র-জনতার মিছিল
সূর্যসেন হল এর সামনে দিয়ে অতিক্রম করে বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের
একত্রিত করে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল ভিসি’র বাংলো পেরিয়ে ঢাকা মেডিকেল
সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। উক্ত প্রতিবাদ
সমাবেশে জিয়া হত্যার বদলার অঙ্গীকার ঘোষণা করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় কয়েকজন
ছাত্র নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। আমি কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে শহীদ মিনারে
প্রায় ২০ হাজার ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে বন্ধুবর কাশেম চৌধুরীর নির্দেশনায়
জিয়া হত্যার বদলা নেওয়ার বক্তব্যসহ শপথ বাক্য পাঠ করাই। বিভাগীয় পর্যায়ের
একজন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা হয়েও সেদিনে শপথ বাক্য পাঠে আমার ভূমিকা
আমার রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি বলে আজও শুকরিয়া জানাই। প্রতিবাদ
সভা শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সকলকে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে যেতে নির্দেশনা
দিয়ে প্রাথমিক প্রতিবাদ কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সমাবেশ শেষে
আমরা কুমিল্লার ছাত্র নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে ফিরে যাবার
সিদ্ধান্ত দিয়ে আমি বন্ধুবর সফিক, আলাউদ্দিন সহ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ বায়তুল
মোকাররম মসজিদের সামনে আসলে বেলা তখন ১১ টা প্রায়। জাতীয়তাবাদী যুবদল
কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতাকর্মী সমেত আরেকটি প্রতিবাদ মিছিল জিয়া
হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আমাদের সম্মুখে পৌছলে আমরা আবারও সেই মিছিলে সামিল
হয়ে শহীদ মিনার অভিমুখে মিছিলে অংশগ্রহণ করি। আমি চট্টগ্রাম
বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও বিএনপি সৃষ্টির শুরু থেকে জেলা যুবদলের প্রচার
সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করার সুবাদে যুবদল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে
আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ও বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ ছিলো। উল্লেখ্য,
তৎকালীন যুবদলের সভাপতি ছিলেন কুমিল্লার কৃতী সন্তান পরবর্তীতে যুবমন্ত্রী
জনাব আবুল কাশেম। যুবদলের সুসজ্জিত এই প্রতিবাদ মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন
তৎকালীন যুবনেতা সাইফুর রহমান, জিয়াউল হক ফারুক, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায় সহ
তৎকালীন ঢাকা মহানগর যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক
কামরুজ্জামান আয়াত আলী (প্রয়াত) সহ কেন্দ্রীয় এবং মহানগরের বিপুল সংখ্যক
নেতাকর্মী। মিছিলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর মাঝে ছিলো সামরিক বাহিনীর
আক্রমনের উদ্বিগ্নতা। উক্ত মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে পৌছে
একইভাবে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। যুবদল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য
পরবর্তী জিয়া হত্যার বদলা নিয়ে আবারও যুবদল সাথীদের শপথ বাক্য পাঠ করা হয়।
উক্ত শপথ বাক্যও আমি একজন জেলা পর্যায়ের নেতা হয়েও পরিচালনা করি।
এদিকে
দুপুর ১২ টা নাগাদ রেডিও ও টেলিভিশনে সর্বপ্রথমে জিয়া হত্যাকান্ডের বিষয়টি
প্রচার শুরু করে কিছুক্ষণের মধ্যেই মন্ত্রী পরিষদের সভা আহবানের ঘোষণা
প্রচারিত হতে থাকে। তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস ছাত্তারকে
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে অবিলম্বে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়
এনে চট্টগ্রামে বিপথগামী জিয়া হত্যার সাথে জড়িত জেনারেল মঞ্জুর সহ অন্যদের
আত্মসমর্পনের নির্দেশনা দিয়ে বারবার বুলেটিন প্রচারিত হতে থাকে। পরবর্তী
পর্যায়ে জিয়া হত্যাকান্ডের অদৃশ্য নায়ক হিসাবে তৎকালীন সেনাবাহিনীর অনেকের
সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমরা অবহিত হই। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সেনানিবাসের
তৎকালীন কমান্ডার জেনারেল মঞ্জুর জিয়া হত্যার ৩ দিনের মাথায় আরও কয়েকজন
উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারসহ সাধারণ সৈনিকদের রোশানলে পড়ে সৈনিকদের হাতে নিহত
হন।
৩০ মে ১৯৮১ শহীদ জিয়ার চট্টগ্রামে শাহাদাৎ পরবর্তী ঢাকার
ছাত্র-জনতার এই প্রতিবাদ মিছিল ও পরবর্তীতে সকল জেলা পর্যায়ে বিএনপি’র পক্ষ
থেকে প্রতিবাদ মিছিল জিয়া হত্যাকান্ডের পরেও ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমতার লোভ
স্তিমিত হয়ে সাময়িক লালসা থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য করে বলে আমরা মনে করি।
পরবর্তীতে
তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জিয়া পরবর্তী
নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বন্দুকের নলে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি
হিসাবে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। জিয়া হত্যাকান্ডের
বিচারে পরবর্তীকালে সামরিক আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলেও অনেকের বিষয়ে
আজও জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে।
শহীদ জিয়ার ৪৪ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ৩০
মে ২০২৫। এই দিনে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের
আদর্শের সকলকে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশ গঠনে নিজেদের উৎসর্গ করার আহবান
জানাই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ও দেশনায়ক তারেক জিয়ার
নির্দেশনায় জিয়ার অসমাপ্ত কর্মসূচী বাস্তবায়নসহ একটি গণতান্ত্রিক স্বনির্ভর
বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা জনগনকে সাথে নিয়ে শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নে
ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবো এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
পরিশেষে বলতে চাইÑ জিয়ার বাংলা নয়, বাংলার জিয়া নয়, জিয়াই বাংলাদেশ।
লেখক: প্রতিষ্ঠাকালীন বিএনপি’র ছাত্র-যুব সংগঠক
সাবেক ছাত্রনেতা, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়
সভাপতি, জাতীয়তাবাদী যুবদল, কুমিল্লা (১৯৮৬-১৯৯২)।
আহবায়ক, যুব সংগ্রাম পরিষদ, কুমিল্লা জেলা (১৯৮৮-১৯৯০)।
সাবেক সদস্য, জাতীয়তাবাদী যুবদল, কেন্দ্রীয় কমিটি।
সাংগঠনিক সম্পাদক (সাবেক), বিএনপি, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সাবেক), বিএনপি, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা।