মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশ
সচিবালয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন সচিবালয়ের
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র ও স্পর্শকাতর
সচিবালয়ের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রধান ফটকে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট এবং সামনে
মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি ও র্যাব। এ ছাড়া পুলিশের উপস্থিতি তো আছেই। ঢাকা
মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বাংলাদেশ
সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা এবং আশপাশের এলাকায়
সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। এ
নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল গত ১০ মে। এ রকম কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেই
সচিবালয়ের ভেতরে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দুপুর ১টা পর্যন্ত সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বিক্ষোভে
কার্যত অচল হয়ে গেছে সচিবালয়। সারা দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ
আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সংকটের
শুরু একটা অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে। গত ২২ মে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ
প্রচলিত সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করার প্রস্তাবে সায়
দেয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গত রবিবার ২৫ মে রাতে
অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। এর পর থেকেই সচিবালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও
কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেন, যা টানা চতুর্থ দিনে গড়ায়।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
অভিযোগ, জনপ্রশাসন সচিব তাদের অন্ধকারে রেখে নিজে আইন মন্ত্রণালয়ে বসে এমন
অধ্যাদেশ প্রস্তুত করেছেন। কয়েকজন উপদেষ্টা আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা
অধ্যাদেশ জারি করেই ছেড়েছেন।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি,
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ প্রত্যাহার করতে হবে। কর্মকর্তাদের
অনানুগত্য প্রকাশ পেলে, কেউ ছুটি ছাড়া কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকলে, কাউকে
কর্তব্যপালনে বাধা দিলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে নতুন অধ্যাদেশে।
এ ধরনের অপরাধের জন্য গ্রেড অবনতি, অপসারণ, এমনকি বরখাস্তের বিধান রাখা
হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাত দিনের নোটিশ দেওয়া হবে। জবাব পাওয়ার সাত
দিনের মধ্যে শাস্তি ঘোষণা করা হবে। ত্রিশ দিনের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রপতি
বরাবর আপিল করতে পারবেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, এটি একটি
‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’। সাতচল্লিশ বছর আগের বিধান নতুন করে ফিরিয়ে আনা
হয়েছে। এটি তারা মেনে নেবেন না। অধ্যাদেশটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাই
তাদের আন্দোলন চলবে।
পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, সংকট যেভাবে বাড়ছে,
সমস্যা সমাধানের জন্য সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে
সরকারের আলোচনা শুরু করা উচিত। স্বরাষ্ট্রসচিবও বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিন
আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। পরে আইন উপদেষ্টা আসিফ
নজরুলসহ কয়েকজন উপদেষ্টা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে
জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক হয়নি। এমনকি বিক্ষোভের মুখে
একবার যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং আইন উপদেষ্টা
আসিফ নজরুলসহ অনেকেই সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে গেছেন। নতুন
সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নানা দাবিতে অব্যাহতভাবে বিভিন্ন
আন্দোলন-বিক্ষোভ চলছে। বেশির ভাগ আন্দোলনই সরকার মেনে নিয়েছে কিংবা
পর্যালোচনা করে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে সরকার বিলম্ব করায় সমস্যা তীব্র হয়েছে।
জনজীবনে বেড়েছে সংকট। এ ক্ষেত্রেও সরকারি কর্মচারীদের টানা আন্দোলনের ফলে
সচিবালয় স্থবির হয়ে পড়েছে।
কর্মচারীদেরই একাংশ মনে করছেন, এ আন্দোলনের
নামে নাশকতা ঘটতে পারে। সচিবালয়ের বাইরে থেকেও উসকানির ইঙ্গিত মিলছে। এর
সবকিছুই সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা উচিত। এ জন্য আলোচনার
মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথে অগ্রসর হতে পারে সরকার। সরকারি কর্মচারীরা
বলছেন, তারা আলোচনার অপেক্ষায় আছেন। তাদের কী বক্তব্য, অনতিবিলম্বে সরকারের
তা শোনা এবং বিবেচনা করা উচিত। যদিও গতকাল কর্মচারীদের দাবি আজ বুধবার
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানানোর আশ্বাসে সচিবালয়ের কর্মচারীরা তাদের কর্মসূচি
শুধু আজকের জন্য স্থগিত করেছেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর সরকারি
প্রতিষ্ঠান, যেটি সরকারের প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডের
কেন্দ্রবিন্দু, সেই সচিবালয়ে বেশি দিন ধরে অস্থিরতা চলাটা বাঞ্ছনীয় নয়।
ইতোমধ্যে এতে যে জনদুর্ভোগ হয়েছে, তা আরও বৃদ্ধি পাক, কারোরই তা কাম্য হতে
পারে না। সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন এবং সমস্যার সমাধান খুঁজে
বের করুন।