
মাসুদ পারভেজ।।
কুমিল্লায়
দিনভর টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত জনজীবন। স্থবির হয়ে পড়েছে সড়কের স্বপ্ল আয়ের
মানুষের আয় রোজগারে। অফিসগামী কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী, দিনমজুর, দোকানি
প্রায় সবাইকে নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যদিয়ে পার করতে হয়েছে পুরো দিনটি।
এদিন
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ভোর থেকে শুরু হওয়া হালকা থেকে মাঝারি আবার কখনো ভারি
বৃষ্টিপাতে নগরীর অলিগলিতে পানি জমে সৃষ্টি হয় বেশকিছু সড়কে জলাবদ্ধতা।
এতে ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, অফিস-আদালতগামী মানুষ এবং
নগর বাসিন্দারা। খোড়াখুড়ি করে ফেলে রাখা সড়কের খানাখন্দে ও গর্তে জমা পানি
এবং কাঁচা মাড়িয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগের মানুষ। দীর্ঘ সময় রাস্তায় আটকে
থেকে কর্মস্থলে পৌঁছতে দেরি হয়েছে অনেকের।
জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্য
মতে, বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পযর্ন্ত ১২ ঘন্টায় কুমিল্লায়
৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেন আবহাওয়া অফিস। দিনভর হালকা থেকে মাঝারি
ও ভারি বর্ষণে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়ক এবং
ঠাকুরপাড়া-অশোকতলা ও ছায়া বিতানসহ নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে পানি জলাবদ্ধতার
সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় বাসিন্দারা বাসা থেকে বের হয়েই
পড়েন দুর্ভোগে।
বৃহস্পতিবার কুমিল্রা জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, নিম্ন
আয়ের মানুষের জন্য বৃষ্টি মানেই জীবিকা বন্ধ হয়ে যাওয়া। যারা রাস্তায় চা
বিক্রি করেন, ভ্যান চালান বা নির্মাণশ্রমিক তাদের অনেকেই কোনো কাজই পাননি।
বাসিন্দারা অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া বাসা থেকে বের হননি।
নির্মাণ
শ্রমিক আলী আজগর বলেন, শ্রমবিক্রির জন্য সকাল থেকে কান্দিরপাড় এসে অপক্ষোয়
রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, কেউ তো ডাকেনি। বাড়িতে টাকার প্রয়োজন আহে। তাই
বৃষ্টির মধ্যেও চেষ্টা করেছি শ্রমবিক্রি করতে।
রুস্তম আলী নামে এক
ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা জানান, বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই ভারি বৃষ্টির
মুখে পড়েছেন। কান্দিরপাড় শ্রম বিক্রির জন্য জমায়েত হওয়া শ্রমিকদের কাছে
পান,সুপারি, চা ও সিগারেট বিক্রি করেন হেঁটে হেঁটে। এ দিয়ে চলে তার সংসার।
নগরীর
মিশুক চালক মহন মিয়া জানান, দিনভর বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গাড়ি চালাচ্ছেন।
অন্যান্য দিনের মতো আজ সড়কে মানুষ নেই বললেই চলে। ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
তারপরও পেটের তাগিদে রিকশা নিয়ে সড়কে বের হয়েছেন। একদিন বসে থাকলে রিকশা
মালিককে পকেট থেকে টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে।
এদিকে, সড়কে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়া বাসিন্দারা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
রহমত
উল্লাহ নামে এক বাসিন্দা বলেন, বছরের প্রতিটি দিনই দেখি নগরীর পানি
নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন ও নালা তৈরিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন। অথচ
মওসুমের সামান্য বৃষ্টিতেই পানির নিচে ডুবে যায় সড়ক। এমনও দৃশ্য দেখা যায়
ড্রেনের পানি উল্টো সড়কে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা দৃষ্টি করছে। আমরা এ
ভোগান্তি আর দেখতে চাই না।
নগরীর বিসিক এলাকার বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস
পাটোয়ারী জানান, চেম্বার ও কমার্স ভবন থেকে অশোকতলা মোড় পর্যন্ত সড়কটি সারা
বছরই পানির নিচে তলিয়ে আছে। পানি নিষ্কাশনের কোন পথ বের করতে পারিনি সিটি
কর্পোরেশন। এ সড়কটুকু দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়ছে বাসিন্দারা। আর একটু
বৃষ্টি হলেও আর কথাই নেই। মুহুর্তের মধ্যে হাটু পানির নিচে তলিয়ে যায় সড়ক ও
আশপাশের এলাকা।
এদিকে, জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা ছৈয়দ আরিফুর রহমান
বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় ৪৬
মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ দিন হালকা থেকে মাঝারি আবার কখনও
ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে কুমিল্লাজুড়ে। সাথে ঝড়ো হাওয়াও ছিল কোথাও কোথাও। আজও
(৩০ মে) একই অবস্থায় বৃষ্টিপাত থাকার সম্ভাবনার কথা বলেন তিনি।