রাজধানীতে মেয়াদোত্তীর্ণ যানের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। পাশাপাশি মারাত্মক পরিবেশদূষণও করছে এ যানগুলো। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ গত ২ মে রাজধানীর সড়ক থেকে সব ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লেগুনা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে বিআরটিএর কোনো অভিযান দৃশ্যমান হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, পরিবহন মালিকদের চাপে বিআরটিএ এবারও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ বাস মালিকদের বিষয়ে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এমন বাস সড়কে পেলে জব্দ করা হবে।
সরকারের সিদ্ধান্তের কোনো ব্যত্যয় হবে না। বিআরটিএর হিসাবে ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচলকারী ৭৫ হাজারেরও বেশি বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকলরির আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। যা মেয়াদোত্তীর্ণ বা পরিত্যক্ত হিসেবে বিবেচিত। বিআরটিএর মতে, এসব পুরোনো যানবাহন দুর্ঘটনা বাড়ানোর পাশাপাশি মারাত্মক পরিবেশ দূষণ করছে। একের পর এক ঝরছে তাজা প্রাণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদুল আজহায় সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা আরও বাড়বে।
বিআরটিএর তথ্যমতে, সারা দেশে নিবন্ধিত বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৮১টি। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৭৬১টি বাস, মিনিবাসের বয়স ২০ বছরের বেশি। বিআরটিএর মতে, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বাস, মিনিবাসই আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। এ ছাড়া নিবন্ধিত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকলরির সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ১৭৪। এর মধ্যে ২৫ বছরের চেয়ে বেশি পুরোনো এ ধরনের যানবাহনের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৪৮১।
শুধু বাস-ট্রাক নয়, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে লেগুনার বেপরোয়া দৌরাত্ম্য দেখা যায়। শহরতলি ছাড়াও নগরীর প্রধান সড়কেও চলছে ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর লেগুনা। বিআরটিএর হিসাবে ঢাকায় ৬৫টি রুটে এখন ১০ হাজার লেগুনা চলাচল করছে। এর মধ্যে কেবল ২ হাজার ৪৭৮টি লেগুনার নিবন্ধন আছে। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার সোয়ারীঘাট, লালবাগ, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, বাংলাবাজার, গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার এলাকায় অধিকাংশ লেগুনা চলাচলের অনুপযোগী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আ্যক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শামছুল হক খবরের কাগজকে বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে সব অবকাঠামোতেই বড় পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বসে বাস রুট ঠিক করছি, কোন রুটে কোন গাড়ি চলবে, কীভাবে চলবে। কিন্তু বাস মালিকরা কখনো শৃঙ্খলায় আসতে চান না। একের পর এক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঐকমত্য যেমন দরকার, তেমনিভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ কাউকে লাগবে। আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিয়ে কখনো সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যান সড়ক থেকে সরাতে হলে চালকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন বা বিআরটিএ থেকে এসব যানবাহনের নিবন্ধন বাতিলে পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার আরও তৎপর হবে, এটাই প্রত্যাশা।