তানভীর দিপু: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৩দিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ে আয়োজনের তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শেষ হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় ও জেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে কুমিল্লায় তিনদিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত ২৫ মে রোববার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী। উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আব্দুল হাই শিকদার। অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনে মুরাদনগরের কবিতীর্থ দৌলতপুরের নজরুল মেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার ২৭ মে সমাপনী অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম।প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শান্তিরঞ্জন ভৌমিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর বশির আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী।
নজরুল জন্মজয়ন্তীর এবারের প্রতিপাদ্যে 'চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার' বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, প্রতিবাদে বিপ্লবে নজরুলের গান- কবিতা কেন বার বার কাজে লাগে? এর তিনটি বৈশিষ্ট্য জানলেই তা বোঝা যাবে। প্রথমত, নজরুল একজন রাজনৈতিক কবি। মানে মানুষ কেমন আছে, মানুষ ঠিকমতো বেঁচে বর্তে আছে কিনা, তার শাসকদের সাথে সম্পর্ক কেমন, শাসকরা শোষণ করছে কিনা, এই ব্যাপারটা নজরুলের লেখার মধ্যে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনবরত প্রধান হয়েছিলো। যখনই মানুষ শাসন শোষণ বিরোধী কোনকিছু ভাবে তখনই সে যেটা শুনতে চায়, সে যেটা বলতে চায় সেটা নজরুলের লেখার মধ্যে আছে।
দ্বিতীয়ত, নজরুল যখন কবিতা লিখা শুরু করেছিলো তখন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন চলছিলো। এই আন্দোলনের নাম ছিলো অসহযোগ আন্দোলন, এই আন্দোলনের নাম ছিলো খেলাফত আন্দোলন। সে সময় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে মুসলমান এবং হিন্দুরা একসাথে মিলে সবচেয়ে বড় আন্দোলন করেছিলো, যা নজরুলকে আনেক বেশি প্রভাবিত করেছে। এরই প্রেক্ষিতে নজরুল পরবর্তীতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাহিত্যিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই কারনে আমরা যখনই স্বৈরশাসকের বিরোধীতা করতে চাই তখনই নজরুলের কবিতা গান প্রবন্ধ কথা আমাদের কাজে লাগে।
তৃতীয়ত, নজরুলের অনেক গান- কবিতা মনে মনে পড়া কঠিন। এগুলো উচ্চস্বরে পড়তে হয়। নজরুলের গান কবিতা একা একা পড়ার চাইতে সমস্বরে পড়লে ভালো লাগে। ফলে যখনই আমরা স্লোগান দিতে চাই প্রতিবাদ করতে চাই তখন নজরুলের গান কবিতা কাজে লাগে।
আলোচনা সভা শেষে কুমিল্লা নজরুল ইন্সটিটিউট কেন্দ্র, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সংস্কৃত উপভোগ করেন অতিথি এবং উপস্থিত দর্শকরা। এছাড়াও দিবস উপলক্ষে নজরুল সঙ্গীতার পরিবেশন করেন কুমিল্লার বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীগণ।