গত দুই দিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পানি জমে দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে। তুমুল বৃষ্টিতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক-সাংগঠনিকসহ নানা দাবি আদায়ে ব্যস্ততম সড়ক আটকে আন্দোলন যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নগরবাসীকে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে বের হয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে। যানজটের এই অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায় প্রধান সড়কগুলো।
মানুষের স্বাভাবিক হাঁটাচলার কোনো উপায় থাকে না। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনগুলোতে জনপ্রতিনিধি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের স্বাভাবিক কাজ করতে পারছে না। সঠিক সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় রাজধানীর পয়োনিষ্কাশনের নালা ও ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই নোংরা পানি মানুষের বসতভিটা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে। লঘুচাপের প্রভাবে রাজধানীতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সামনে বর্ষা মৌসুম, এই সময়টায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলতে থাকে। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেশি হয়। একটু বৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যানজটের কবলে পড়ে। অনেক সময় যান উল্টো পথে চলাচল করতে দেখা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীতে ট্রাফিক সিস্টেমও অকার্যকর হয়ে পড়ে। যানজটের এই অসহনীয় পরিস্থিতিতে অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে একটু বৃষ্টিতেই এমন পরিস্থিতি হরহামেশাই ঘটছে। নিচু এলাকাগুলোতে পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া সড়ক অবরোধ করে দাবি-দাওয়া আদায় নিত্যঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবহন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানান, সড়ক অবরোধে গাড়ি চালাতে না পেরে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। কাজে এলেও দিন শেষে শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে। গাড়ির মালিককে দিনের খরচ দিতেও তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে রাস্তা আটকে দাবি-দাওয়া আদায়ে নেওয়া কর্মসূচির কারণে বিভিন্ন এলাকায় যানজটের পাশাপাশি জলজটের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মমুখী ও গন্তব্যগামী সাধারণ মানুষ।
গণপরিবহন খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বর্তমান সড়ক অবকাঠামোতে গণপরিবহন চলাচলের জন্য বিকল্প পদ্ধতি বের করা খুব কঠিন। কোনো একটি সড়ক বন্ধ রাখলে এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর অন্য সড়কগুলোতে। রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কর্মসূচি যা-ই থাকুক না কেন, জনদুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঢাকায় সড়ক বন্ধ করে, মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে কার কী লাভ কে জানে! আমরা সড়ক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার কথা বলছি। কিন্তু এখন সড়কে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছে, বিক্ষোভ চলছে, অবরোধ চলছে। আবার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশাও বন্ধ করা যাচ্ছে না। সড়কে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা।’
যানজট ও জলজটে নাকাল নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে সরকারকে দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জনজীবনকে স্বস্তি ও গতিশীল করতে সিটি করপোরেশনকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। নগরীর যানজট ও জলজট জীবনের গতিও কমিয়ে দিচ্ছে, এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এ ছাড়া মানুষের হাঁটাচলার জায়গা ফুটপাত, সেটা অবৈধভাবে দখল হয়েছে। এগুলো দখলমুক্ত করতে হবে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করতে হবে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই নালা-নর্দমা-ড্রেনগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে পরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। আশা করছি, অন্তর্র্বতী সরকার নগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা যানজট ও জলজটের সংকট নিরসনে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।