চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
দখলে-দূষণে
সংকুচিত হয়েছে মিতল্লা খাল। এবারের বর্ষায় ভোগান্তির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে
পৌরবাসী। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা কমপ্লেক্স ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মিতল্লা খাল দখল করে
নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসন নীরব ভুমিকায় রয়েছে বলে দীর্ঘদিনের
অভিযোগ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যে যার মতো ইচ্ছে খাল দখল করে স্থাপনা
নির্মাণ করেছে। ফলে ভারত থেকে আসা পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সরেজমিন
গিয়ে জানা গেছে, ভারত সীমান্তবর্তী ২১০৯ সাব পিলার ৪ ও ৫ এর মাঝামাঝি ভারত
থেকে আসা খালটি উপজেলা কমপ্লেক্সের দক্ষিণ পাশে দিয়ে পশ্চিম দিকে মিতল্লা
পর্যন্ত বয়ে গেছে। অনেকের কাছে খালটি ‘ট্রেনিং সেন্টার খাল’ হিসেবে পরিচিত।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে খালের একাংশ অবৈধভাবে দখল করে ঘরবাড়ি ও
স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। রামরায়গ্রামের বাসিন্দা আবদুল লতিফ ও তার
পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে খালের দক্ষিণ অংশ দখল করে টিনশেড
ঘর, টয়লেট নির্মাণ এবং গভীর নলকুপ স্থাপন করে ভোগদখল করে আসছে। এছাড়া আবুল
কালাম, মোঃ ইব্রাহিম, আবুল হাশেম, মাসুদ, কালাম মেম্বার, আবদুল কাদের, জাফর
আহমেদ, মকবুল আহমেদ, মাহবুবুল হক, সুলতান আহমেদ, জাকির হোসেন বাবু, আবদুল
গফুর, মোঃ ডালিম, আসাদ উল্যাহ, আলী আহমেদ, সোহেল গং খালের উপর ও পাশে
বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে খালকে সংকুচিত করেছে। খালের কয়েকটি স্থানে
ময়লা ও কচুরিপানা জমে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয়দের
অভিযোগ, রামরায়গ্রাম মজুমদার বাড়ীর আবদুল লতিফের ছেলে রসুল আহমদ চৌদ্দগ্রাম
পৌরসভার একজন কর্মকর্তা হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে দখল করেছে। ফলে
উচ্ছেদে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। খালের স্বাভাবিক
প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত বছর বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের অভাবে আশেপাশের
এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং বন্যার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
খালের আশেপাশের ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের
সাথে কথা বলে জানা গেছে, খালটি দখলমুক্ত ও পুনঃখনন করা না হলে ভবিষ্যতে
বন্যা ও জলাবদ্ধতায় তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারা আশা করছেন, উপজেলা প্রশাসন এবার কঠোর
ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে খালের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে
দেবে। এতে করে তারা আসন্ন বর্ষায় সম্ভাব্য বন্যা ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যা
থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগী জনগণ খালটি দ্রুত
দখলমুক্ত করে পুনঃখননের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন এর ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার
জন্য চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন।
এদিকে গত মাসে খাল-বিল নদী-নালা অবৈধ
দখলমুক্ত করতে মানববন্ধন করেছে চৌদ্দগ্রাম সম্মিলিত নাগরিক ও সাংস্কৃতিক
ঐক্য। নেতৃবৃন্দ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ইউএনও’র মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবরে
স্মারকলিপি প্রদান ও প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় করে। এতে উপজেলার বিভিন্ন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, কবি, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, শিক্ষক,
সাংবাদিক ও ছাত্রসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে।
খাল অবৈধভাবে দখলের
বিষয়ে পৌর কর্মকর্তা রসুল আহমেদ বলেন, ‘সরকারিভাবে মেজারমেন্ট করে বের
করবে, খাল কে দখল করেছে। আমার কাছে যদি সরকারি খালের জায়গা থাকে, আমি সেই
জায়গা ছেড়ে দেবো। একটি মহল অপপ্রচার করছে বলেও দাবি করেন তিনি’।
বুধবার
বিকেলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোঃ জামাল
হোসেন বলেন, ‘ইতোপূর্বে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে খালের সংস্কার কাজ করে পানি
নিঃস্কাশন ব্যবস্থা ঠিক করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্নস্থানে অবৈধ দখল উচ্ছেদ
অভিযান ও খাল-নদী পুনঃরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কেউ যদি সরকারি
খাল দখল করে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, শিগগিরই আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ
অভিযান পরিচালিত হবে’।