বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষাঙ্গন আবার
অস্থির হয়ে উঠেছে। লক্ষ করা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের চেয়ে আন্দোলন
কর্মসূচিতে বেশি মনোযোগী। সামান্য কোনো ইস্যু সামনে এলেই মাঠে নামছেন
তারা। শিক্ষাঙ্গনে এ সংস্কৃতি ভালো কোনো লক্ষণ নয়। দেশের পরিবর্তিত
পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্বার্থেও অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে দেশের কোথাও
কোথাও। সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং
ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যার ঘটনার বিচার চেয়ে আন্দোলন করছেন
শিক্ষার্থীরা।
আবাসিক হল না থাকায় শিক্ষার্থীদের আবাসন (বৃত্তি),
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ইস্যুতে আন্দোলনে নামেন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের টানা কর্মসূচির কারণে
অন্তর্বর্তী সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে স্বতন্ত্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ৫ আগস্টের পর
থেকে কয়েক দফায় আন্দোলনে নামেন। একই ধরনের দাবিতে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে
অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
বিভিন্ন সময়ে তারা আলটিমেটাম
দিয়েছেন। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ
দেওয়া হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। উপাচার্যের পক্ষ থেকে শিক্ষক সমিতি
এখনো কর্মবিরতি পালন করছে। ছয় দফা দাবিতে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ
সারা দেশে কর্মসূচি পালন করে। দাবি আদায়ে তারা এখনো নানা কর্মসূচি পালন
করছে। অস্থিরতা চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও।
এ ধরনের অস্থিরতা
শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করছে। যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জরুরি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি
হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক নেতারা যদি উন্নত চরিত্রের
হন, তাহলে তারা সমস্যা দ্রুত উপলব্ধি করতে পারেন এবং সমাধান করতে পারেন।
অরাজনৈতিকরা সেটা সহজে পারেন না। অনির্বাচিত সরকার দ্বারা একটা জাতি
সাময়িকভাবে ভালোর দিকে গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো করা কঠিন। বিশ্লেষকরা বলছেন,
দেশে যদি ভালো নির্বাচন হয়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ভালোর দিকে যেতে
হলে অবশ্যই ভালো রাজনৈতিক দল দরকার।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজতচিন্তক
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বহু বছর ধরে
নানা রকমভাবে নিয়মনীতির বাইরে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ার কারণে এ অবস্থা
তৈরি হয়েছে। ফলে যারা ন্যায় কাজ করতে চান, তাদের ওপর অনেকে অসন্তুষ্ট।
ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করেন। এ অবস্থাটা অস্বাভাবিক। একটার পর একটা
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ঘটনা ঘটছে। ফলে সরকার সেসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায়
পরিবর্তন আনছে। মবের মাধ্যমে আন্দোলন হলে তখন চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে
বাধ্য হয়। এসবের ফলে এক খারাপ থেকে অন্য খারাপের দিকে যাচ্ছে।
শিক্ষাঙ্গনের
সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রমে নিয়মিত
করার চেষ্টা করতে হবে। শিক্ষকদেরও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য
রয়েছে। অনেক সময় শিক্ষকরা ছাত্রদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিযুক্ত করে
বিভিন্নভাবে উসকে দেন। এ সংস্কৃতি থেকে ছাত্রদের বের করে আনতে হবে। কথায়
কথায় দাবি-দাওয়ার আন্দোলন কোনো শুভ ফল বয়ে আনে না। ছাত্রদের বৃহত্তর
কল্যাণের চিন্তা করা অভিভাবক, শিক্ষক এমনকি প্রত্যেক সুনাগরিকের
অবশ্যকর্তব্য। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার জাতির মেরুদণ্ডকে ঠিক রাখতে এবং
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।