দেশের শিল্প খাতে বাড়তি গ্যাস সরবরাহের সরকারি ঘোষণা কেবল প্রতিশ্রুতির বুদবুদ হয়েই থাকছে। বাস্তবে শিল্পের চাকা এখনো থেমে থেমে চলছে। গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যাওয়ায় পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা দিশাহারা। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে রপ্তানি আয় ও বিনিয়োগে।
শুধু তা-ই নয়, এর ফলস্বরূপ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, বরং শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা অহরহ ঘটছে।
শিল্প খাতে গ্যাসের সংকট কাটাতে গত ৭ মে সরকার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস সরবরাহের ঘোষণা দেয়। ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত শিল্প-কারখানায় প্রায় ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে। পত্রিকান্তরে প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাভার ও আশুলিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের ভয়াবহ সংকট উৎপাদনের স্বাভাবিক গতি স্তব্ধ করে দিয়েছে।
প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কম আবার যেটুকু গ্যাস মিলছে, তার চাপও এতই কম যে অনেক কারখানায় উৎপাদন কার্যত থেমে গেছে। এতে অনেক কারখানা ডিজেলনির্ভর হতে বাধ্য হচ্ছে, যা উৎপাদন ব্যয় দ্বিগুণ করে লোকসানের পাল্লা ভারী করছে।
দেশের কর্মসংস্থানের প্রায় ৯৫ শতাংশ জোগান দেওয়া বেসরকারি খাত বর্তমানে গভীর সংকটে। ব্যবসায়ীরা নতুন উদ্যোগে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
ফলে বিনিয়োগ তলানিতে। সম্প্রসারণ পরিকল্পনা নিতেও দ্বিধাগ্রস্ত। ফলে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। অন্যদিকে উৎপাদন কমে যাওয়ায় কিংবা লোকসানের কারণে বাড়ছে শ্রমিক ছাঁটাই। কর্মরত শ্রমিকরাও কর্মহীন বা বেকার হচ্ছেন।
ঋণ প্রবৃদ্ধি চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে বা ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ৩৪ শতাংশ কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয় কমছে, বিনিয়োগ থমকে গেছে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, বাড়ছে বেকারত্ব।
সম্প্রতি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে চাকরির বন্যা বইয়ে দেওয়ার অনেক প্রতিশ্রুতি শোনা গেলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে লাখ লাখ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে হাজারখানেক চাকরিও তৈরি হয়নি। অতীতেও এমনটি দেখেছি আমরা। একসময় পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে খুলনায় চাকরির বন্যার কথা বলা হলেও খুলনার খালিশপুর এখন বেকাররাজ্য। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজির গ্যারান্টি এক নম্বর শর্ত হলেও বিদেশি বিনিয়োগের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার বিপদ আমরা পার্শ্ববর্তী দেশে দেখেছি। ভারতের ‘কল সেন্টার’ শিল্পের ধসের কথা অনেকের মনে থাকার কথা।
সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক ঘোষণা এলেও সেসব ঘোষণা বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গতি নেই। শিল্পোদ্যোক্তাদের আশঙ্কা, দ্রুত গ্যাস সরবরাহ না বাড়ালে উৎপাদনে ধস নামবে। রপ্তানি আয় আরো কমবে। এতে ডলার সংকট আরো তীব্র হবে, যার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। তাই শিল্প খাতকে বাঁচাতে দ্রুত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।