রোববার ২৫ মে ২০২৫
১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন আজ
প্রকাশ: রোববার, ২৫ মে, ২০২৫, ১:১৭ এএম |


‎‎জাতীয় কবি কাজী নজরুল  ইসলামের জন্মদিন আজআজ ২৪ মে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের এই অসামান্য ব্যক্তিত্বশুধু শব্দের খেলোয়াড় ছিলেন না, তিনি ছিলেন স্বাধীনতা, বিদ্রোহ এবং মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার এক অনন্যপ্রেরণার স্রোত।
‎‎“বিদ্রোহী কবি” নামে খ্যাত নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতা ও গানের মাধ্যমে সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছেন। মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনে অসংখ্য কবিতা, গান, নাটক ও গল্প রচনা করে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি স্বর্ণালী অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন। তাঁর মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও অদম্য সাহস আজও বাংলাভাষী মানুষের হৃদয়ে জীবন্তপ্রেরণার উৎস।
‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানঃ কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লায় এবার জাতীয় পর্যায়ে নানা আয়োজনে পালিত হবে তিনদিন ব্যাপী ১২৬ তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। সম্পন্ন হয়েছে সকল প্রস্তুতি। এ নিয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে কুমিল্লায়।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা। কুমিল্লায় বিচরণের মধ্য দিয়ে নজরুল হয়ে উঠেছিলেন বিদ্রোহী কবি। কবির প্রেম, বিয়ে, সুরকার-গায়ক, অভিনয়শিল্পী হয়ে ওঠার অনেক কিছুর প্রথম এই কুমিল্লা। দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুল ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফায় ১১ মাস কুমিল্লায় অবস্থান করেছেন। এই দীর্ঘ অবস্থান ঘিরে নজরুলের জীবনের মোড় ঘুরার প্রেক্ষাপট এই কুমিল্লাতেই সৃষ্টি হয়েছিল।‎
‎কাজী নজরুলের কলম থেকে ঝরে পড়া বিদ্রোহ, প্রেম ও মানবতার গান আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে আজও গাঁথা। তিনি আমাদের জন্য এক অপরিমেয় অনুপ্রেরণা এবং আমাদের সংস্কৃতির এক অমর নক্ষত্র।
‎‎জন্ম ও শৈশব জীবন:
‎কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম কাজী ফকির আহম্মদ ও মাতার নাম জাহেদা খাতুন। দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্যেবেড়ে ওঠা নজরুল ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। শিক্ষা জীবনে নানা বাধা সত্ত্বেও তিনি কুরআন, ইসলাম ধর্ম ও দর্শন শিখে নিজেকে গড়ে তোলেন।
‎শৈশবে পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব সামলাতে মসজিদের মুয়াজ্জিন থেকে শুরু করে লেটো গানের দলে কাজ করেন তিনি। এসব কাজে তার সঙ্গীত ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়।
‎‎কর্মজীবন ও সৈনিক জীবন:
‎‎প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯১৭ সালে তিনি ৪৯তম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে (ইরাক ও মেসোপটেমিয়া) যুদ্ধ করেন। সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্য শিখতে থাকেন, যা পরে তার সাহিত্যকর্মে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।‎
‎সেনাবাহিনী থেকে ফেরার পর তিনি সাহিত্যচর্চায় মনোযোগী হন। ১৯২০ সালের দিকে তার সাহিত্য জীবন শুরু হয়। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ‘অগ্নিবীণা’, যা বাংলা সাহিত্যে নতুন বিদ্রোহী সুরের সূচনা করে। একই বছর ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশ পেয়ে তাকে ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে অভিহিত করে।
‎‎সাহিত্য কর্ম ও বিদ্রোহী ভাবনা:
‎‎কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম বিপ্লব, সাম্যবাদ, মানবতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনায় পূর্ণ। তার কবিতা, গান ও গল্পে শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, বঞ্চনার আর্তনাদ ও মুক্তির স্বপ্ন ফুটে ওঠে। ‘বিদ্রোহী’, ‘নিস্পৃহ’, ‘পল্লীবালক’, ‘বৈরাগী’সহ অসংখ্য কবিতা সামাজিক অন্যায়, অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে।
‎‎তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও নারীর মর্যাদার পক্ষে ছিলেন প্রবল সমর্থক। তাঁর গান ‘নজরুলগীতি’ পরবর্তীতে বাংলা সংগীতের এক অনন্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। তার গানে ইসলামি, হিন্দু, পারসিক ও লোকসঙ্গীতের অনন্য মিশ্রণ পাওয়া যায়, যা বাংলার সঙ্গীত জগতকে সমৃদ্ধ করেছে।
‎‎সাংবাদিকতা, নাটক ও চলচ্চিত্র:
‎‎কাজী নজরুল ইসলাম কেবল কবি ও গীতিকারই নন, তিনি ছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সমাজ সচেতন এক সম্পূর্ণ মানুষ। তিনি ‘ধূমকেতু’, ‘নবযুগ’, ‘কিরণ’ প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী অবস্থানের কারণে একাধিকবার কারাবরণও করেন।
‎‎নজরুল নাটক ও চলচ্চিত্রেও অবদান রেখেছেন। তিনি ‘ধূপছায়া’ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন এবং ‘পাতালপুরী’, ‘গোরা’, ‘নন্দিনী’, ‘সাপুড়ে’ প্রভৃতি ছবিতে গীতিকার ও সুরকার হিসেবে যুক্ত ছিলেন। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
‎‎অসুস্থতা ও পরবর্তী জীবন:
‎‎১৯৪২ সালে কাজী নজরুল ইসলাম স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হন, যার ফলে তিনি বাকশক্তি হারান ও সাহিত্যচর্চা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। দীর্ঘ অসুস্থতার পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার তাঁকে সপরিবারে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে এবং তাকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি প্রদান করে এবং ১৯৭৬ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।‎
‎মৃত্যু ও স্মৃতির স্থান:
‎‎১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে কাজী নজরুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সমাধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে অবস্থিত, যা বাঙালির শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক কেন্দ্ৰস্থল।
‎‎পুরস্কার ও সম্মাননা:
‎‎নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো — ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক (মৃত্যুর পর প্রাপ্ত) এবং জাতীয় কবির মর্যাদা।
‎‎উল্লেখ্য, কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বিদ্রোহী কবি নন, তিনি মানবতার, ভালোবাসার ও সাম্যের কবি। তাঁর বিদ্রোহ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, তার ভালোবাসা ছিল সকল মানুষের জন্য। বাংলার মানুষের হৃদয়ে তিনি আজও ‘মানুষের কবি’ এবং জাতীয় কবি হিসেবে চিরস্থায়ী অনুপ্রেরণার উৎস। তার সাহিত্য ও সংগীত বাংলার ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অমলিন দৃষ্টান্ত।
















সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন আজ
কুমিল্লায় ৩দিনব্যাপী অনুষ্ঠান উদ্বোধন আজ
কুমিল্লায় আ’লীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৮জনসহ গ্রেপ্তার ১১
কুমিল্লায় ৯ তলা ভবন থেকে পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
বাংলা একাডেমি ‘নজরুল পুরস্কার’ পাচ্ছেন আনোয়ারুল হক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় আ’লীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৮জনসহ গ্রেপ্তার ১১
আরব আমিরাতে ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন আজ
জাতীয় পর্যায়ে কুমিল্লায় উদযাপিত হবে কবি নজরুলের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী
পলাতক বাহার কন্যা সোনালী শারজায়, যাচ্ছেন সূচিও
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২