এবারের
কোরবানি ঘিরে পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ কুমিল্লা। যে পরিমাণ পশু উৎপাদন
হয়েছে জেলায়, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় ২৩ হাজারের বেশি
পশু। ভারত সীমান্তবর্তী এ জেলায় ছোট, বড় ৩৬ হাজার ৭৪ জন খামারি কোরবানিতে
বিক্রির উদ্দেশ্যে দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৫২ পশু লালনপালন করেছেন। তবে
প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং গোখাদ্যের সংকট মোকাবেলা করে মৌসুমজুড়ে পশু লালনপালন
করা খামারীদের একটাই শঙ্কা ভারতীয় গরুর অবৈধ অনুপ্রবেশ। তবে তাদের শঙ্কার
কথা বিবেচনা করে বিজিবি বলছে, সীমান্তে ইতোমধ্যে গরু চোরাচালানের সম্ভাব্য
পথগুলোতে বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি।
জেলা
প্রাণিসম্পদ অফিস বলছেন, আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষ্যে এবারের
কোরবানিতে কুমিল্লায় চাহিদার চেয়ে ২৩ হাজার ১৬৬টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে।
এতে ১৭ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত পশু পার্শ্ববর্তী
জেলাগুলোতেও সরবরাহ করা যাবে।
প্রাণিসম্পদ আরো সূত্র মতে, এ বছর
কুমিল্লার ১৭ উপজেলার প্রান্তিক ও বাণিজ্যিভাবে পশু মোটাতাজা করা খামারিরা
কোরবানির জন্য দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৫২টি গবাদি পশু প্রস্তুত করেছেন। এরমধ্যে
রয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৮২টি গরু, ৬০৮টি মহিষ, ৫৬ হাজার ৯৪০টি ছাগল, ১১
হাজার ৮০৫টি ভেড়া ও অন্যান্য পশু ৩১৭টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ২৩
হাজার ১৬৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
উপজেলা অনুসারে আদর্শ সদর উপজেলায় ১৬
হাজার ৭৬৩টি পশু, সদর দক্ষিণে ৯ হাজার ৬৪৯টি, চৌদ্দগ্রামে ১৩ হাজার ৩৯৯টি,
নাঙ্গলকোটে ২৭ হাজার ১৭৪ টি, লাকসামে ৩৩ হাজার ৮৬৭ টি, বরুড়ায় ২৩ হাজার
১২টি, চান্দিনায় ১৫ হাজার ২১০টি, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১১ হাজার ৯১১টি, লালমাই
উপজেলায় ১৯ হাজার ২৩৮টি, দাউদকান্দিতে ৯ হাজার ২৫০টি, দেবিদ্বারে ১৪ হাজার
৮৪২টি, মুরাদনগরে ১৯ হাজার ৪৯টি, বুড়িচংয়ে ৯ হাজার ৬৬৪টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৮
হাজার ৭৬৪টি, হোমনায় ১৩ হাজার ৩৬২টি, মেঘনায় ৮ হাজার ৭২৭টি ও তিতাস
উপজেলায় ৬ হাজার ৮৭১টি কোরবানির পশু রয়েছে।
পশুতে কুমিল্লা
স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার পরেও অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু আসার পথ বন্ধের অনুরোধ
জানিয়ে খামারিরা বলছেন, কোরবানির হাট শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগ থেকে সীমান্ত
দিয়ে অবৈধভাবে পশু অনুপ্রবেশ করান এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। সেটি এবার
চলতে থাকলে কুমিল্লা জেলার খামারি ও গৃহস্থরা পশুর ন্যায্যমূল্য থেকে
বঞ্চিত হবেন।
খামারিরা পড়বেন বড় ধরনের লোকসানে। তবে বিজিবি বলছেন, এবার
কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পশু চোরাইভাবে যাতে প্রবেশ করতে না পারে,
সেজন্য সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা।
কুমিল্লার সবচেয়ে বড় পশু
খামার জেলার বরুড়া উপজেলার হানিফ এগ্রো ফার্মের মালিক মো. হানিফ জানান, তার
খামারে ছোট বড় দেড়শটি গুরু রয়েছে দেশি, নেপালি, ফ্রিজিয়ান, বলদ, শাহী ও
গয়াল জাতের। মৌসুমের শুরুতে পশু লালনপালে বন্যার মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক
বিপর্যয়ে। এরপর গো-খাদ্যের সংকটে। অন্যান্য বছর তার খামারে আরও বেশি গরু
লালনপালন করতেন। কিন্তু এবছর বন্যায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার খামারে
আড়াইশ থেকে ৬শ কেজি উপরের গরু রয়েছে। এতোমধ্যে ৪০টির বেশি গরু বিক্রি
হয়েছে।
তিনি জানান, গরু ক্রয়ে প্রতিদিনই ক্রেতারা খামারে ভিড় করছেন।
আশা করছেন শেষ পর্যন্ত গরু ন্যায্য মূল্য পাবেন, যদি ভারতীয় গরু দেশে
প্রবেশ না করে।
কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি এলাকার নূরজাহান এগ্রোর
স্বত্তাধিকারী মনির হোসেন বলেন, এবার আমার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৫৮টি
গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি কোরবানির জন্য বিক্রি হয়েছে। আমার খামারে ৮ লাখ
টাকা দামের গরুর একটি বস গরু রয়েছে। এর ওজন হবে প্রায় ১ টন। খাদ্যের দাম
সহনীয় থাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা কম।
কুমিল্লা
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, কুমিল্লার ১৭
উপজেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার খামারি রয়েছেন। তাদের খামারের মোটা-তাজা
করা পশুসহ জেলায় কোরবানির চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু
রয়েছে। ফলে উদ্বৃত্ত এসব পশু জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলায়ও বিক্রি
করে যাবে। সব মিলিয়ে বলতে পারি এবার কুমিল্লায় কোরবানির পশুর সংকট হবে না।
কুমিল্লা
১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, কুমিল্লা সীমান্তের বেশ
কয়েকটি পথে পূর্বে গরু চোরাচালান হতো। তবে এখন অনেকাংশে কমেছে কারণ
কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। এরপরও শাহপুর, চৌদ্দগ্রাম ও শিবের বাজার
সীমান্ত এই তিনটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই এলাকায় বিজিবি সদস্যরা
নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এবার অন্তত চোরাই পথে
কুমিল্লার অংশে ভারতীয় পশু প্রবেশ করতে না পারবে না, সেজন্য আমরা জিরো
টলারেন্সে আছি।