রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক
হারে বাড়ছে অনুমোদনহীন বা অবৈধ যানবাহন। নছিমন, করিমন বা ইজিবাইকের
পাশাপাশি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত তিন থেকে চার চাকার ‘স্টিয়ারিং ট্রলি’ ও
লাটাহাম্বাও দাপটের সঙ্গে চলছে মহাসড়কে। আগে রাতের ঢাকায় চললেও এখন
দিবালোকে ট্রাফিক পুলিশের নাকের ডগায় বেপরোয়া গতিতে চলছে এসব অবৈধ
যানবাহন।
প্রধান সড়কেও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল বেড়েছে।
তুলনামূলক কম পরিশ্রম হওয়া প্যাডেলচালিত রিকশা বাদ দিয়ে ব্যাটারিচালিত
রিকশার দিকে ঝুঁকছে বৃদ্ধ থেকে কিশোররা। ট্রাফিক আইন না জানার পাশাপাশি
বেপরোয়া গতি, উল্টো পথে চলাসহ নানা কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। অকালে
ঝরছে বহু তাজা প্রাণ, সড়ক পরিণত হচ্ছে মৃত্যুকূপে। স্থানীয়ভাবে তৈরি অবৈধ
যানবাহন এখন সড়ক-মহাসড়কে ত্রাসে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ
বাস-মিনিবাসসহ বিভিন্ন পরিবহনও নির্বিঘ্নে চলছে সড়ক-মহাসড়কে।
বাংলাদেশ
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে ৮
হাজার ৫৪৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৬০৮ জন। সমীক্ষায় দেখা
গেছে, ২০ শতাংশ দুর্ঘটনা ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শহরের নারী ও শিশুরা। এগুলো কোনো নীতিমালা বা
যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি।
তথ্যমতে, সড়ক
পরিবহন নীতিমালায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিবন্ধনের সুযোগ তাদের নেই। বিষয়টি
স্থানীয় সরকার বিভাগে ন্যস্ত। গত ১৩ মে ঢাকা মহানগরীতে যানজট ও সড়ক
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটি
করপোরেশন (ডিএনসিসি) বুলডোজার দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইচিবাইক ভেঙে
সেগুলো জব্দ করে, শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা ডাম্পিংও করা হয়।
সংশ্লিষ্ট
শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, প্রায় ৩ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এগুলোর সঙ্গে
জড়িত। অথচ সরকার তাদের পুনর্বাসন, কোনো ক্ষতিপূরণ বা কর্মসংস্থানের বিকল্প
পরিকল্পনা করছে না। দফায় দফায় অটোরিকশা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে গাড়ি জব্দ ও
ডাম্পিং করে অসহায় মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। তাদের সংগঠন ব্যাটারিচালিত
যানবাহনকে আধুনিকায়ন করে লাইসেন্স ও রুট পারমিট দেওয়ার দাবি জানায়।
হাইওয়ে
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের চলাচল সম্পূর্ণভাবে
নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত যানবাহনও অবৈধ হিসেবে সেগুলো মহাসড়কে চলার
সুযোগ নেই। তার পরও চলছে, এটাই বাস্তবতা। বর্তমানে ৪০ লাখের বেশি
থ্রি-হুইলার চলছে সারা দেশে। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক বাটারিচালিত যানবাহন তো
আছেই। নানা বাস্তবতায় এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তার পরও
ফিটনেসবিহীন গাড়িসহ ওই সব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে মহাসড়কে নিয়মিত অভিযান
চালানো হচ্ছে। অচিরেই মহাসড়কে বিশেষ অভিযান চালানো হবে।
দেশজুড়ে
ব্যাটারিচালিত অবৈধ যান চলাচলের নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। এসব অবৈধ যান
থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে কিছু রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী
গোষ্ঠী। বিগত সরকারের সময়েও এগুলো দেখা গেছে। এখনো চলছে। সড়ক পরিবহন ও
মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাফ নির্দেশনা- এসব অবৈধ যানকে কোনোভাবে
নিবন্ধন দেওয়া যাবে না।
তার পরও বিদ্যমান সড়ক অবকাঠামোর কারণে এবং সড়কের
পাশে কোনো সার্ভিস লেন না থাকায় অবৈধ যানগুলো সহজেই সড়কে চলাচল করছে। এসব
যানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, রুট পারমিট ও লাইসেন্সের বিষয়ে
সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও এখানে
জড়িত। বিষয়টি মাথায় রেখে এসব অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট
নীতিমালা প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই কাম্য।