রোববার ১৮ মে ২০২৫
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেধাবী প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই
মাসুদ আহমেদ
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫, ১:৩২ এএম আপডেট: ১৭.০৫.২০২৫ ২:০৫ এএম |

 মেধাবী প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই
গত ৩০ এপ্রিল তিনজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী খবরের কাগজে বলেছেন যে, পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে চলে যাওয়া বাংলাদেশি মেধাবীদের দেশে ফিরিয়ে আনলে তারা দেশবাসীকে উন্নত সেবা দিতে পারবেন। এতে আমাদের কল্যাণ হবে। যদি গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান ধরি তাতে দেখা যায়, ৫২ হাজার করে এই সময়ে ৫ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোতে লেখাপড়া ও উচ্চশিক্ষার নামে পাড়ি দিয়েছেন। একজন বুদ্ধিজীবী বলেছেন, সরকার তাদের ফেরাতে চায়নি। 
কথা হলো সরকারের কোন শাখা এ কাজটি করবে? কোন পরিবার থেকে বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কে কে কোন কোর্সে কোন সেশনে ভর্তি হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য উন্নত দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছে তার ডাটাবেজ কে কীভাবে শনাক্ত করবে? আর জানাশোনার ভিত্তিতে কোনো পরিবারকে এ প্রশ্ন করলে এ তথ্য আদায় করা কোন আইনে এ চলে যাওয়া তরুণ-তরুণীর অভিভাবকদের বাধ্য করা যাবে? আর ঠিকানা, কোর্স ও বছর না জেনে জঙ্গলে হাঁস খোঁজার মতো বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কর্তৃপক্ষের কাছে এ প্রশ্ন করে নিশ্চিতভাবে উত্তর আদায় করা যাবে? আমাদের দক্ষতা এই যে, গত বছরের রাজনৈতিক হানাহানিতে ১ হাজার ৬০০ নিহত ও ৯৮ হাজার আহত হয়েছেন কিন্তু ৯ মাস সময়েও সেই হতাহতদের তালিকা সরকারের কোনো বিভাগ করতে পারেনি।
 সেই তারাই করবেন ৫ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশির তথ্য সংগ্রহ করে তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণের কাজটি? এই ৫ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী এই সময়ের মধ্যে পরিবার গঠন করে অন্তত একটি সন্তান গ্রহণ করে অনুমেয় ১১ লাখে পরিণত হয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে যদি ধরাও যায় তাদের ফিরিয়ে আনা হলো, তাদের কর্মসংস্থান কোথায় এবং কোন পদে কে করবেন? এ বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্যে এক পরম স্ববিরোধিতা রয়েছে। কারণ তারা বলেছেন, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্ব ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তো এই ১০ লাখ মানুষের সেই অবস্থায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কীভাবে হবে? কারণ তারাও উচ্চশিক্ষিত। বিদেশের উন্নত পরিবেশ, যানজট, মনুষ্যজট, বর্জ্যজট, মামলাজট ও দুর্গন্ধমুক্ত আবাসনে জীবন যাপনে অভ্যস্ত এসব মানুষ ফিরে এসে এ দেশের কোথায় বসবাস করবেন? তাদের অধিকাংশই ঢাকায় বসবাস করতে চাইবেন। যে ঢাকায় ইতোমধ্যে এর বহনক্ষমতা ৫০ লাখ মানুষের পরিবর্তে ২ কোটি ৬৫ লাখ মানুষ বসবাস করছে। এদের বিমান ভাড়া বহন করবে কে? বুদ্ধিজীবীদের একাংশ এবং বিজ্ঞানীরা এটাও বলছেন যে, ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরী। এই ২ কোটি ৬৫ লাখ লোকের সঙ্গে ১১ লাখ মানুষকে যোগ করার কাজটি কী শহরের পরিবেশকে উন্নত করবে? আর কে কোন পেশা গ্রহণ করবে সেটা সেই ব্যক্তির শিক্ষা ও রুচির ব্যাপার।
 কে কোথায় বসবাস করবে তাও তার সামর্থ্য ও স্বাধীন পছন্দের বিষয়। আমরা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র নই। এই ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কাজটি হবে একটি তুঘলকী জবরদস্তিমূলক কাজ। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যায়ের ৪ শতাধিক মর্যাদাশীল ব্যক্তি শিক্ষাছুটি ও ব্যক্তিগত ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে উন্নত জীবনের লক্ষ্যে পলাতক হিসেবে সেখানে রয়েছেন। এবং তাদের একজনকেও তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে আনতে পারেনি। সেখানে এ ধরনের পরিকল্পনা একান্ত আকাশকুসুম। দেশে গৃহস্থালি গ্যাস সংযোগহীনতা, তাপ, মনুষ্যজট, দূষিত জলাশয় ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ২২ লাখ করে। এই প্রবাসীরা ক্রমে তাদের আত্মীয়দেরও পারিবারিক ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোতে নিয়ে যেতে পারছেন। একজন বুদ্ধিজীবী এও বলেছেন- উদ্যোক্তা হওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। কেন? কোথায়? তারা তো বিদেশে বসেই চাকরিজীবী কিংবা উদ্যোক্তা হয়ে মাসে গড়ে অন্তত ৬ হাজার ডলার রোজগার করছেন।
 তাদের সেই প্রতিষ্ঠিত অবস্থা থেকে এই সার্বভৌম জটাবদ্ধ দেশে ফিরিয়ে এনে উদ্যোক্তা করার নতুন চেষ্টার যুক্তি কী? গবাদিপ্রাণীর মতো মর্যাদাহানিকর গায়ে গায়ে ধাক্কা দিয়ে সর্বত্র চলাচল করে এ জনপদ এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি হতে আর বাকি নেই। যেখানে জনসংখ্যাকে কমানো দরকার, সেখানে বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত এ জনসংখ্যাকে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ কেন? বুদ্ধিজীবীরা অবশ্য একথা বলেছেন যে, মেধাবী লোকের অভাবে দেশ ভালো নেতার সেবা পাচ্ছে না। যদি তাই হয় তাহলে গত ২০ বছরে গড় আয় ৩ হাজার ডলার, গড় আয়ু ৭৪ বছর, খাদ্য ও বস্ত্রহীন মানুষের সংখ্যা শূন্যে নেমে আসা, সারা দেশে চমৎকার রেল, সড়ক ও জলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইত্যাদি অগ্রগতিগুলো কী করে সম্ভব হলো? নিশ্চয় দেশে থাকা মেধাবী মানুষই এর নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখনই রান্নাঘরের বর্জ্যের দুর্গন্ধে মাতুয়াইল, গোদনাইল, কাজলা, হাজারীবাগ, শীতলক্ষ্মা ও বুড়িগঙ্গা নদী, বংশী নদী এলাকা এবং মহানগরের প্রায় সবগুলো মিউনিসিপাল বিনের অন্তত ৭ ঘণ্টা মনুষ্যনাসারন্ধ্রের অনুপযোগী দুর্গন্ধে ও জটে মানুষকে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
 তার মধ্যে এই ১১ লাখ ফিরিয়ে আনা মানুষের বর্জ্য রাখার স্থান কোথায় হবে? তারা সবাই অবস্থাপন্ন। যদি ৫ লাখ পরিবারও ধরি এবং তাদের ২ লাখও  ব্যক্তিগত মোটরগাড়ি ক্রয় করে, সেগুলোর তাপ ও ধোঁয়া শহরের আবহাওয়াকে কোথায় নিয়ে যাবে? আর বর্তমানে যানবাহনের গড়ে সাড়ে ৪ কিমি ঘণ্টার গতি কমতে কমতে কোথায় নিয়ে যাবে? 
এই পরিবারগুলোর সন্তানদের বয়স ধরা যাক ৬-৮ বছরও যদি হয় তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের চমৎকার স্কুলের পরিবেশ থেকে উঠিয়ে এনে এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার দায়িত্ব কে নেবে? অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই এখানেও সিট সংকট প্রকট। এই শিশুদের অন্তর্ভুক্তি সেই সংকটকে কোথায় নিয়ে যাবে? তাদের বাবা-মাকে দেশে রেখে দিলে তাদের দেখাশোনা ও খরচ বহন কে করবে?
এই পরিবারগুলোর মধ্যে বয়সের দিকে উচ্চতর অনেকেই বিদেশে হায়ার-পারচেজ পদ্ধতিতে বাড়িঘর ক্রয় করেছে। এদের দেশে ফিরতে বাধ্য করলে ওইসব গৃহসম্পত্তির ঋণ, অর্থ পরিশোধ বা বিক্রির বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করবে কে এবং কীভাবে? যেসব স্পাউজ ওখানে কর্মজীবী, তাদের ফিরিয়ে এনে কর্মহীন করে কষ্ট দেবেন কেন?
উঁচু শ্রেণির প্রায় এমন কোনো পরিবার নেই যাদের ছেলেমেয়েরা দেশ ত্যাগ করে পাশ্চাত্যে শিক্ষা গ্রহণ কিংবা পেশা গ্রহণের জন্য যাননি। এর প্রধান আকর্ষণ সেখানকার নিরাপদ, সচ্ছল এবং উদ্বেগমুক্ত জীবন ও জীবিকা। এগুলো এতটাই আকর্ষণীয় যে, অনেক বাংলাদেশি দেশ ভ্রমণের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভিসা ফরম পূরণের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছেন। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন আইনজীবীদের মাধ্যমে রাজনৈতিক আশ্রয় বা স্থায়ী বসবাসের আবেদন জমা দিয়ে সেই সব দেশে ক্রমে স্থায়ী হয়েছেন। বস্তুত এটি একটি দেশপ্রেমমূলক কাজ।
 আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রচণ্ড চাপে কর্মসংস্থানসহ জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে উপচে পড়া ভিড়। যারা বিদেশে চলে গেছেন তারা এ বিবেচনায় বাংলাদেশে থেকে যাওয়া ১৯ কোটি মানুষকে আরাম দিচ্ছেন। ভারতের জনসংখ্যার ঘনত্ব আমাদের থেকে অনেক কম। তার পরও সরকারিভাবে ওই দেশ তার নাগরিকদের দেশত্যাগে নানাবিধ উৎসাহ দিয়ে থাকে। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা প্রায় সবাই পাশ্চাত্যে নিরাপদ জীবনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। 
কাজেই উন্নত দেশগুলো থেকে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি কোনো মানুষকে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া কোনোভাবেই জনকল্যাণকর হতে পারে না। দেশের নানা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যে মাঝারি পর্যায়ের মেধার প্রয়োজন তা আমাদের পর্যাপ্ত রয়েছে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এসব বুদ্ধিজীবীর স্বপ্রণোদিত পরামর্শকে অগ্রাহ্য করবেন। মেধাবীরা রেজাল্টের দিকটায় ভালো করলেও বিদ্যুৎ, মোটরগাড়ি, অ্যারোপ্লেন, ওষুধ, কম্পিউটার, রেল ইঞ্জিনের মতো একটা কিছু উদ্ভাবন করতে পারেনি। ওসবকিছু পাশ্চাত্যের মেধাবীদের কৃতিত্ব। সমস্যার মূলোৎপাটনে এ বুদ্ধিজীবীরা বললেন না কেন, ঢাকায় অঁংঃৎধষরধহ, ইৎরঃরংয, অসবৎরপধহ, ঈধহধফরধহ ধহফ গধষধুধংরধহ শিক্ষা মেলা বন্ধ করা হোক। এর মাধ্যমেই তো ৫২ হাজার মেধাবী বিদেশ চলে যাচ্ছে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও প্রজাতন্ত্রের সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল













সর্বশেষ সংবাদ
সীমান্তে সর্তক বিজিবি
বুড়িচংয়ে ময়নামতিতে ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই চলছে আইদি পরিবহন
পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং- বি,৯৩৮) এর উদ্যোগে মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান
সিলভার ফাতেমা প্যালেসের ২য় বর্ষপূর্তি, আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সড়কে পড়েছিল ‘৪৫ লাখ’ টাকা
বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়
‘নির্বাচনের পূর্বেই কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে’
কুমিল্লায় ভিভো মোবাইল কোম্পানিতে বিনিয়োগকৃত প্রায় ৩ কোটি টাকা ফেরতের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন
দাউদকান্দিতে সালিশ বৈঠক শেষে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২