কুমিল্লার লাকসামে নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি জাদুঘর এখন দর্শনাথী মুখরিত।
প্রতিদিন ভ্রমণ পিপাসু, পর্যটক, শিক্ষার্থী ও নবাব ফয়জুন্নেছা ভক্তদের পদভারে ডাকাতিয়া নদী বেস্টিত এই ঐতিহাসিক বাড়িটি বৃহত্তম কুমিল্লায় অন্যতম বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
উদ্বোধনকৃত ৭টি গ্যালারীতে নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতিবিজড়িত ২১৫ টি নিদর্শন সাজানো হয়েছে।
'উম্মুক্ত করা হয় করা হয়ছে অতিথি শালা 'সামনী'।
যাতে নবাব পরিবারের সদস্যরা বিনা ফিতে ৩দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। পর্যটকদের জন্য সরকারি ফি পরিশোধ সাপেক্ষে অবস্থানের সুবিধা রাখা হবে। সেই সাথে শীঘ্রই নবাব ফয়জুন্নেছা হাউজের দ্বিতীয় তালায় গ্যালারী সংযুক্ত করার পদক্ষেপে নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, উপমহাদেশে প্রথম মুসলিম মহিল নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। তিনি নারী শিক্ষার অগ্রদূত। কারন বেগম রোকেয়ার জন্মের ৭বছর পূর্বে তিনি কুমিল্লায় গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তার জমিদারীর ১৪ টি মৌজায় স্হাপন করেছেন প্রথমিক বিদ্যালয়,মক্তব,মাদরাসা ও বালিকা বিদ্যালয়।কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সহ দেশের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় রয়েছে এই মহীয়সী নারীর অবদান।ভারতের নদীয়া জেলায় কৃষ্ণনগরে তিনি প্রতিষ্ঠা করন বালিকা বিদ্যালয়। পবিত্র হজ্জব্রত পালন করতে গিয়ে মক্কা শরীফে প্রতিষ্ঠা করেন মুসাফির খানা।
রক্ষনশীল ও ধার্মিক হওয়ার কারনে মিডিয়ায় এতোদিন নবাব ফয়জুন্নেছা নারী শিক্ষার অবদানের বিষয়টি যথায়থভাবে উপস্থাপিত হয়নি। ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে এই মহীয়সী নারীর অবদান কথা অজানাই রয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁয়ে জন্ম গ্রহন করেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে পিতার জমিদারি তিনি লাভ করেন। তিনি প্রজাহিতৈষী জমিদার। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কুমিল্লা উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। শিক্ষা বিস্তারে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে তিনি তার ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মরণোত্ত্ব ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। লাকসামের পশ্চিমগায়েঁ নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী বিগত ১২৯৮ বঙ্গাব্দ ৩০জ্যৈষ্ঠ তারিখে ওয়াকফ দলিলে জমিদার বাড়িটি ওয়াকফ লিল্লাহ করেন। উক্ত ওয়াকফ এস্টেটটি বিগত ১১.১২.১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তারিখে পাবলিক/ লিল্লাহ সম্পদ হিসেবে ই.সি.নং ৫৪৮ নথিতে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের তালিকাভুক্ত একটি ওয়াকফ এস্টেট।
ওয়াকফ দলিলে মোট জমির পরিমাণ ২১ ৬২৫.২৮ একর। তারমধ্যে ২১৩২৭.৯১ একর প্রজাবিলি সম্পদ।খাস ও নিজ দখলীয় ওয়াকফ সম্পদের পরিমাণ ২৯৭.৩৭ একর। আরএস খতিয়ানে এই জায়গার সঠিক পরমান জানা জায়নি। বিএস খতিয়ানে জায়গার পরিমান কমে প্রায় ১০একরে দাঁড়িয়েছে।
মুলত বিভিন্ন কারনে হারাতে বসেছিলো পশ্চিমগাও নবাব বাড়ির স্হাবর অস্হাবর সম্পদ। বাড়ির দরজা জানালা উধাও।
বাধ্য হয়ে সরকার ২০১৭ সালে গেজেটের মাধ্যমে নবাব ফয়জুন্নেছা বাড়ির ৪.৫৪ একর জায়গা প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।
দীর্ঘদিন বিভিন্ন জটিলতার কারনে সংস্কার, অযত্ন ও অবহেলার কারনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে নওয়াব ফয়জুন্নেসার স্মৃতিবিজড়িত পশ্চিমগাঁয়ের বাড়িটি। বেদখল হয়ে গেছে ওয়াকফ এস্টেটের অনেক জায়গা। লুটপাট হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও মুল্যবান নিদর্শন। ধীরে বাড়ির ইট বালু খুলে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিলো।
ত্যকালীন সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম.খালিদ গত ২জুন ২০২৩ নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ী পরির্দশন করেন এবং যাদুঘর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
২৮আগস্ট ২০২৩ তারিখ সাংস্কৃতি মন্ত্রনালয় জাদুঘরের শাখা চালুর সিদ্ধান্তের সুবাধে ২০.৯.২০২৩ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাথে জাতীয় জাদুঘরে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
গত ৬নভেম্বর ২০২৩ আনুষ্ঠানিক নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর বাড়িতে জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনকৃত ৩টি গ্যালারীতে ৭৪টি নিদর্শন ২০টাকা দর্শনার্থী ফির বিনিময়ে প্রদর্শিত হয়ে আসছে।
ত্যকালীন স্হানীয় সরকার মন্ত্রী, সাংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সচিব ও ওয়াকফ প্রশাসক সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ গত ২৭মে ২০২৪ তারিখে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে জাদুঘর পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন ও জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। যাতে ওয়াকফ প্রশাসনের ক্ষমতা অটুট রেখে জাদুঘর পরিচালনা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। শর্ত থাকে, জাদুঘরে দর্শনার্থী ফির ৫% প্রদান এবং ওয়াকফ এস্টেটের বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ জাতীয় জাদুঘর করবে। মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেমের বেতন ভাতা জাতীয় জাদুঘর দিবে।