কাঠফাঁটা রোদ আর তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে কুমিল্লা। একই সঙ্গে প্রকৃতিতে বিরাজ করছে ভ্যাপসা গরম। রবিবার দিনভর প্রখর রোদে পুড়েছে কুমিল্লার পথঘাট প্রান্তর।এতে ভোগান্তিতে পড়েন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। এছাড়াও এ তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে জনজীবন। হাঁসফাঁস করতে থাকে মানুষ ও অন্য প্রাণিকুল। মানুষ অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের দেখা যায়নি। কুমিল্লা আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ বলছেন গত শুক্রবার থেকে টানা তিনদিন কুমিল্লার উপর দিয়ে মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ সোমবারও এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়া অফিস জানায়,রবিবার কুমিল্লায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৫৫ শতাংশের উপরে। দিনের শুরু থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাপমাত্রা বেড়েছে কুমিল্লা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় এবং কমছে বাতাসের আদ্রতা। যার কারণে তাপমাত্রার চেয়েও অধিক গরম অনুভূত হয়েছে জনজীবনে।
এদিকে সোমবার কুমিল্লার কোথাও কোন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আজ ও আগামীকাল মঙ্গলবারও মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করবে। তবে এরপর বৃষ্টির হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
রবিবার কুমিল্লা শহর ঘুরে দেখা যায়, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে রাস্তা ঘাটে লোকজনের সংখ্যা খুব কম দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বের হয়নি নগরবাসী। বাইরে বের হওয়ার সময় অনেকেই ছাতা নিয়ে বের হয়েছেন। কেউ পান করছেন ঠাণ্ডা শরবত। তারা বলছেন, তাপদাহের কারণে সাধারণ মানুষের আনাগোনা কম। তাই ঠিক মতো কাজ পাচ্ছেন না তারা।
এদিকে অতিরিক্ত গরমের কারণে প্রতিদিন জ্বর, ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ গরমের নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কুমিল্লার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার তিনগুণ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এতে গাদাগাদি করে মেঝেতে বিছানা পেতেও চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা।
কুমিল্লা নগরীর প্রবীন রিকশা চালক ফারুক মিয়া বলেন, গত শুক্রবার থেকে অতিরিক্ত গরম পড়ছে। রোদের তাপে মনে হয় শরীর পুড়ে যাচ্ছে। রিকশা চালিয়েই সংসার চালাতে হচ্ছে, যার কারণে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রিকশা দিয়ে সকালে বের হয়েছি এ গরমের মধ্যে। তবে অন্যান্য দিনের মত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। অতিরিক্ত রোদ ও গরমের কারণে মানুষ রাস্তায় বের না হওয়ায় ভাড়া কম।
খোকন আলী নামে আরও এক শ্রমবীজী বলেন, শরীর পুড়ে যাওয়া মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। ভ্যাপসা গরমে অতিরিক্ত ঘাম ঝরার কারণে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ছে, এতে কিছু সময় পরপর হাঁপিয়ে উঠছি। একটু বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি। মনে হচ্ছে বৃষ্টিটা হলেই একটু স্বস্তি ফিরবে।
কুমিল্লা জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা ছৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, রবিবার কুমিল্লার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার ছিল মওসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সোমবার ও আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। তবে এরপর প্রকৃতিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।