শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২
বৈশাখী মেলায় হারিয়ে যাওয়া
জুবাইদা নূর খান
প্রকাশ: সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১:০২ এএম আপডেট: ১৪.০৪.২০২৫ ২:৩৫ এএম |


বৈশাখী মেলায় হারিয়ে যাওয়া  আজ দুপুরে গৃহকর্তা যখন অনেক গুলো কাঁচা আম নিয়ে বাসায় ফিরলেন মনটা তখন ভীষণ ভালো হয়ে গেল। কাঁচা আম কুচিকুচি করে কেটে তাতে লবন, কাঁচা মরিচ মিশিয়ে যে মিশ্রণটা তৈরি হয় তা যে কতটা উপাদেয় - সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার আব্বা আবার আম ভর্তায় দিতেন চিনি আর দুধ। আব্বার হাতের যে কোনো ভর্তা ছিল ব্যতিক্রমী স্বাদের। এবার আসি আম দিয়ে ডালের বিষয়ে। বৈশাখের ভর দুপুরে যখন আকাশ থেকে আগুন ঝরে, তপ্ত হাওয়ায় যখন শরীরে ফোস্কা পড়ার উপক্রম, সেই মুহূর্তে এক থালা ভাতে এক বাটি আম ডাল আর তার সাথে পেঁয়াজ, শুকনো মরিচ আর সর্ষে তেল মাখা আলু ভর্তা - রসনায় স্বস্তি আনে, মনের ক্ষিপ্রতার কিছুটা হলেও উপশম ঘটায়।
বাংলা বর্ষপঞ্জিকার শুরু বৈশাখ মাস দিয়ে। নানান উৎসব - অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৈশাখ মাস তথা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার বিষয়টি আমাদের আবহমান ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।  তবে আমরা যখন ছোট অর্থাৎ স্কুলে পড়তাম তখন এতো আয়োজন করে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের বিষয়টি অনুপস্থিত ছিল। বাসায় বাসায় সামর্থ্য অনুযায়ী একটু ভাল- মন্দ রান্না হতো; যেখানে প্রাধান্য পেতো দেশীয় মাছ সাথে নানারকম ভর্তা। তবে, বিভিন্ন স্হানে লোকজ মেলা হতো। নানান পসরা সাজিয়ে দোকানীরা ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতো। ঐসব মেলায় নাগরদোলার ব্যবস্হা থাকতো। বাচ্চারা বাবার হাত ধরে মেলায় যেতো, এটা সেটা কিনে দেবার জন্য বায়না করতো। মেলা থেকে বড় একটা তরমুজ কিনে বাড়ি ফেরা ছিলো খুবই সাধারণ দৃশ্য। একবার এরকম এক মেলায় আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। আব্বার সাথে আমরা ৩ বোন বৈশাখী  মেলায় যাওয়ার বায়না করাতে আব্বা আমাদের সবাইকে নিয়ে মেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। আমরা তখন অনেক ছোট।  এখন যেমন বৈশাখী  মেলায় নারী- পুরুষ  সবাই অংশ গ্রহণ করে, আমাদের শৈশবের দৃশ্যপট ছিল কিছুটা ভিন্ন। মেলায় তখন নারীরা তেমন যেতো না।  যাইহোক,  হারিয়ে যাওয়ার গল্পে ফিরে আসি। আব্বার দুই হাত ধরে আমার ছোট দুই বোন হাঁটছিল। আর আমি আব্বার ঠিক পেছন পেছন হাঁটছিলাম। বিশাল বড় মাঠ। লোকে লোকারন্য। হাঁটতে হাঁটতে আমরা এক জায়গায় দাঁড়ালাম যেখানে একজন লোক বড় ঝুড়িতে মাটির টেপা পুতুল নিয়ে বসে আছে। আমরা ৩ বোনই আব্বার কাছে পুতুল কিনে দেয়ার জন্য বায়না ধরলাম। আমি সবুজ শাড়ি পরা একটা মেয়ে পুতুল কিনলাম। কী মায়া কাড়া চেহারা ছিলো পুতুলটার। অনেক দিন পর্যন্ত আমি ঐ পুতুলটাকে পাশে নিয়ে ঘুমাতাম।
যাইহোক,  আব্বা যখন দোকানীকে টাকা দিচ্ছিলেন, আমার চোখ আটকে গেলো বেশ খানিকটা দূরে একটা বিশেষ জিনিসের দিকে। ঐখানে আবার বেশ জটলাও ছিল। আমি কোনো কিছু না ভেবেই ঐ দিকটাতে হাঁটা শুরু করলাম। অবুঝ উৎসুক মন। কেবলই জানার আগ্রহ আর দুচোখ ভরে দেখার বাসনা। হাঁটতে হাঁটতে আমি পৌঁছে গেলাম কাঙ্খিত স্হানে। পেছনে পড়ে থাকা আব্বা আর বোনদের কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। অদ্ভুত আনন্দ আর রোমাঞ্চে মনটা নেচে উঠল।
জটলা ঠেলে আমার নিজের জন্য একটু জায়গা করে নিলাম। এবার দেখার পালা। একজন মধ্য বয়স্ক লোক হাতে ডুগডুগি বাজিয়ে নানান স্বর আর সুরে ছন্দে ছন্দে কত কী বলে যাচ্ছিল। আর তার সাথে তাল মিলিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বিভিন্ন রকম ভঙ্গিতে খেলা দেখাচ্ছিল একটা ছোট্ট বানর। কী মায়া কাড়া চেহারা তার। মাঝে মাঝে দাঁত বের করে ভেঙচি কাটছিলো আমাদের দিকে। আমি বানরের নৃত্য পারদর্শিতায় এতটাই নিমজ্জিত হয়েছিলাম যে আব্বা আর বোনদের কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। বেশ কিছু সময় পর যখন বানরের খেলা দেখানো লোকটা সবার কাছ থেকে বখশিশ চাইছিলো তখন যেন আমার সম্বিত ফিরে এলো। আমি তো ছোট,  বখশিশ দেবার টাকা তো আমার কাছে নেই। বিনা পয়সায় খেলা দেখলাম বলে ভীষণ লজ্জা পেলাম। হঠাৎই মনে হলো,আব্বা কই? আমার বোনরা কই? আমি কিভাবে বাসায় ফিরে যাবো? আমাকে যদি ছেলেধরা ধরে নিয়ে বিক্রি করে দেয়! এইসব ভাবতে ভাবতে আমার দুচোখ বেয়ে কান্নার বাঁধ ভেঙে পড়ছিল। আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বয়স্ক মতন একজন লোক সব কিছু শুনে আমাকে নিয়ে গেল মেলার মূল মঞ্চে। ওখান থেকে মাইকে আমার কথা ঘোষণা দেয়া হলো। বেশ কিছু সময় পর আব্বাকে আসতে দেখলাম। প্রচন্ড গরম, টেনশন আর আমার জন্য খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে আব্বার তখন বিধ্বস্ত অবস্থা।  আমি এক দৌড়ে আব্বার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। আব্বার তখন সে কী কান্না।
সেদিন আব্বাকে কাঁদতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছিলাম। আর আজ মধ্য বয়সে সন্তান ধারণ করে বুঝতে পারছি সন্তানের প্রতি পিতা- মাতার  আবেগ- অনুভূতির নিঃস্বার্থ সমর্পণ কেমন জিনিস। প্রতিটি বাংলা নববর্ষ সকলের মতোই  আমার জন্য নিয়ে আসে আনন্দের বাঁধ ভাঙা জোয়ার; পাশাপাশি বহু বছর আগে বৈশাখী  মেলায় হারিয়ে যাওয়ার স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত হয়; স্বপ্নলোকে পাড়ি দেওয়া আব্বার কথা মনে পড়ে।













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লার তিতাসে রাস্তার পাশ থেকে যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনি প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফলে কেনো ধ্বস নামলো?
১১ জুলাই ‘প্রথম প্রতিরোধ দিবস -আসিফ মাহমুদ
বিচার-সংস্কার ছাড়া এদেশে নির্বাচন হতে দেব না : ছাত্রশিবির
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা বোর্ডে কমেছে পাশের হার ও জিপিএ-৫
কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফলে কেনো ধ্বস নামলো?
কুমিল্লায় এসএসসিতে অকৃতকার্য ২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
শতভাগ পাস মাত্র ২২টি প্রতিষ্ঠানে
বাড়ছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি, ভাসছে কৃষকের ফসল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২