
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে কুমিল্লায় একের পর এক বিপ্লবী ঘটনা ঘটেছিল। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেনসকে হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই, মাস্টারদা সূর্য সেনের বিপ্লবী দলের সদস্য শৈলেশ রায় ঘটালেন আরেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। তিনি গুলি করে হত্যা করলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এডউইন বিউমন্ট এলিসন (৩০)কে। বিপ্লবী শৈলেশ রায় ১৯৩২ সালের ২৯ জুলাই শুক্রবার বিকালে কুমিল্লার বর্তমান পার্ক রোডে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এলিসনকে পরপর ৫টি গুলি করেন। গুলি খেয়ে পড়ে যাওয়ার পর এলিসন বিপ্লবী শৈলেশ রায়কে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি ছুঁড়েন। একটি গুলি তাঁর হাতে লাগে। এলিসন সাইকেলে করে তার পিয়নকে নিয়ে পুলিশ অফিস থেকে বাঙলোতে ফিরছিলেন। এলিসন গুলিতে আহত হন। একটি গুলি তার পিঠ ভেদ করে পেটে আটকে যায়। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে সহকারি সার্জন প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন এবং তাকে সন্ধ্যায় একটি বিশেষ ট্রেনে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। গুলি চালানোর পর শৈলেশ রায় মোগলটুলি ও ইসলামপুর রোড দিয়ে পালিয়ে যান।

নিহত কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এলিসনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ৬ আগস্ট সকালে ঢাকায় পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয়। জেনারেল অফ পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর মি. জি.এইচ. মান্নুচ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রাসবি এবং স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কফিন বহন করেন। সে সময় উপিস্থিত ছিলেন মিসেস এলিসন, এলিসনের ভাই মি. ল্যাংলি, বিভাগীয় কমিশনার মি. নেলসন এবং মিসেস ল্যাংলি এবং মিসেস মান্নুচ। অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার ড্রেক ব্রকম্যান দ্বারা পরিচালিত এই অনুষ্ঠানে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের ইউরোপীয় এবং ভারতীয়রা উপস্থিত ছিলেন। ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস ডেড মার্চ বাজায় এবং ঢাকা সশস্ত্র পুলিশ ফায়ারিং পার্টির ব্যবস্থা করে, অন্যদিকে ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের বাগলাররা লাস্ট পোস্ট এবং রেভিলি বাজায়। এলিসনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৮ আগস্ট সোমবার সকল সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়। স্বামীর মৃত্যুর ৫ দিন পর ১১ আগস্ট এলিসনের স্ত্রী মিসেস এলিসন এবং তার দুই মেয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার জন্য মুম্বাইয়ে চলে যান।
বাংলার সরকার ত্রিপুরা তথা কুমিল্লা জেলার নিহত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ই. বি. এলিসনের হামলাকারীর গ্রেপ্তার ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য তথ্য প্রদানের জন্য ৫,০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল কিন্তু বিপ্লবী শৈলেশ রায়কে গ্রেপ্তার করতে পারে নি। স্বাধীনতা অর্জনের আগ পর্যন্ত তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে তিনি নিজেই তা প্রকাশ করেছিলেন। কুমিল্লার ব্রিটিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস জিওফ্রে বাকল্যান্ড স্টিভেনসকে হত্যার খবর যেভাবে ভারতবর্ষ ও ব্রিটিশ পত্রপত্রিকাগুলোতে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এডউইন বিউমন্ট এলিসনের খবরটি সেভাবে ফলাও করে প্রকাশ করা হয় নি। এর প্রধান কারন হতে পারে নিহত হওয়ার খবর আর আহত হওয়ার খবর সমান গুরুত্ব পায় নি। তবে বৈকালিক দৈনিক বেলফাস্ট টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ২৯ জুলাই খবরটি ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। এতে ‘ভারতীয় পুলিশ প্রধান গুলিবিদ্ধ’ শিরোনামে সংক্ষিপ্ত খবরে বলা হয় এটি ‘বাংলার সর্বশেষ নৃশংস ঘটনা। ভারতীয় পুলিশের অতিরিক্ত সুপারিনটেনডেন্ট মিঃ এডউইন বিউমন্ট এলিসন কুমিল্লায় গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন।’ ‘ম্যানচেস্টার ইভিনিং নিউজ’ও ২৯ জুলাইই প্রথম পাতায় খবরটি প্রকাশ করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এডউইন বিউমন্ট এলিসনের ছবিটি প্রকাশ করে একমাত্র ‘দ্য ইলেস্টেটেড লন্ডন নিউজ’ ১১ আগস্ট। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘ দৈনিক হেরাল্ড ’ ১৯৩২ সালের ৩০ জুলাই প্রথম পাতায় রয়টার্সের বরাতে এই খবরটি প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল: “ব্রিটিশ পুলিশ প্রধানের বাংলায় নিজের বাড়িতে সাইকেল চালানোর সময় গুলিবিদ্ধ”।

সংবাদটিতে বলা হয়, “ভারতীয় পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট মি. এডউইন বিউমন্ট এলিসন আজ (শুক্রবার) বিকেলে যখন সাইকেলে করে তার বাংলোতে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। তিনি সাইকেল থেকে লাফিয়ে নেমে পাল্টা গুলি চালান, কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বুলেটের আঘাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।”
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে এলিসনকে দ্রুত ঢাকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়, তবে তার অবস্থা তখন আশঙ্কাজনক ছিল না। আক্রমণকারীদের সংখ্যা সম্ভবত তিনজন ছিল। এই ঘটনায় সন্দেহভাজন একজন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিবেদনে এলিসনের কর্মজীবনের বিবরণও তুলে ধরা হয়। মি. এলিসন, যার বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর, তিনি ১৯২২ সালে বাংলার সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। পরে ১৯২৯ সালের মার্চ মাসে তিনি ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান।
শৈলেশ রায়ের এই সাহসী আক্রমণ ব্রিটিশ প্রশাসনের ভেতরে ব্যাপক আলোড়ন তোলে এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমেও তা যথেষ্ট গুরুত্ব পায়।
১৯৩২ সালের ৩০ জুলাই ‘ওয়েস্টার্ণ ডেইলী’ প্রেস পত্রিকায় ‘ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার গুলিবিদ্ধ’ শিরোনামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এলিসনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। বলা হয়-‘শুক্রবার বিকেলে এখানে একজন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার আক্রান্ত হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এডউইন বিউমন্ট এলিসন তার পিয়নকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলে করে বাংলোতে যাচ্ছিলেন, তখন পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয়। তিনি সাইকেল থেকে লাফিয়ে পড়ে পাল্টা গুলি চালান এবং তারপর অজ্ঞান হয়ে যান। তাকে ঢাকার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং সৌভাগ্যবশত তার অবস্থা গুরুতর নয়। তার হামলাকারীদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের সংখ্যা তিনজন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।’
১৯৩২ সালের ৩১ জুলাই লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘সিভিল ও মিলিটারি গেজেট’ পত্রিকায় ‘বেঙ্গল পুলিশ অফিসার গুলিবিদ্ধ ‘ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়-‘ শুক্রবার বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিঃ ই.বি. এলিসন অফিস থেকে বাংলোতে ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হন। জানা গেছে, একটি গুলি তার পেটে ঢুকেছে। সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্য দুজন পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মিঃ এলিসনের অবস্থা গুরুতর নয় বলে মনে করা হচ্ছে এবং আজ সন্ধ্যায় একটি বিশেষ ট্রেনে স্থানীয় সহকারী সার্জনের সাথে তাকে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যিনি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। বলা হয়েছে, মিঃ এলিসন যখন তার পিয়নকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলে করে বাংলোতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি একটি শব্দ শুনতে পান, যা তার কাছে আতশবাজি বলে মনে হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গেই পেছন থেকে একজন যুবক তাকে গুলি করে। মিঃ এলিসন সাইকেল থেকে লাফিয়ে পড়ে হামলাকারীকে লক্ষ্য করে গুলি চালান, কিন্তু সে পালিয়ে যায়। মিঃ এলিসন একটি গুলিতে আহত হন, যা তার পিঠ ভেদ করে পেটে আটকে যায়। পুলিশ রাস্তায় টহল দিচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে গত বছর ১৪ ডিসেম্বর কুমিল্লাতেই ত্রিপুরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ সি.জি.বি. স্টিভেনসকে দুই বাঙালি মেয়ে গুলি করে হত্যা করেছিল।’
১৯৩২ সালের ৭ আগস্টের সিভিল ও মিলিটারি গেজেট পত্রিকায় এলিসনের মারা যাওয়ার খবরটি আসে। ‘মি. এলিসন তার আঘাতে মারা গেছেন’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়- ‘কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মি. এলিসন, যিনি ২৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৬:৪০ মিনিটে মিটফোর্ড হাসপাতালে মারা যান। গতকাল সন্ধ্যা থেকে মি. এলিসনের অবস্থার হঠাৎ অবনতি ঘটে। গত শুক্রবার বিকেলে অফিস থেকে তার বাংলোতে ফেরার সময় মি. এলিসনকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। একটি গুলি তার পিঠ ভেদ করে পেটে আটকে যায়। তিনি তার সাইকেল থেকে লাফিয়ে পড়ে তার আক্রমণকারীকে লক্ষ্য করে গুলি চালান, কিন্তু সে পালিয়ে যায়। আহত অফিসারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চে এবং সেখান থেকে বিশেষ ট্রেনে এখানে (ঢাকায়) আনা হয়। কলকাতা মেডিকেল কলেজের সার্জারির ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ. আর. প্রক্টর, আই.এম.এস., অবিলম্বে তার অস্ত্রোপচার করেন এবং গুলি বের করেন। মি. এলিসনের অবস্থা খুব গুরুতর বলে মনে করা হয়নি এবং বুধবার তাকে স্পষ্টতই ভালো বলা হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার প্রদাহ শুরু হয় এবং তিনি দ্রুত আরও খারাপ হয়ে যান।’ ১৯৩২ সালের ৮ আগস্টের সিভিল ও মিলিটারি গেজেট পত্রিকায় ‘এলিসনের ঢাকায় সামরিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’র খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়-‘ মি. ই.বি. এলিসন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, যিনি একজন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন, তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আজ সকালে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয়। মি. জি.এইচ. মান্নুচ, ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল অফ পুলিশ, মি. গ্রাসবি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কফিন বহন করেন। প্রধান শোকাহতদের মধ্যে ছিলেন মিসেস এলিসন, মি. এলিসন (নিহতের ভাই), মি. ল্যাংলি, মি. নেলসন (বিভাগীয় কমিশনার), মি. এবং মিসেস ল্যাংলি এবং মি. এবং মিসেস মান্নুচ। অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার ড্রেক ব্রকম্যান দ্বারা পরিচালিত এই অনুষ্ঠানে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের ইউরোপীয় এবং ভারতীয়রা উপস্থিত ছিলেন। ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস ডেড মার্চ বাজায় এবং ঢাকা সশস্ত্র পুলিশ ফায়ারিং পার্টির ব্যবস্থা করে, অন্যদিকে ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের বাগলাররা লাস্ট পোস্ট এবং রেভিলি বাজায়। মি. এলিসনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার সমস্ত সরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। মি. এলিসন ১৯২২ সালে ভারতে আসেন এবং বাঁকুড়া ও যশোরে পুলিশ সুপার এবং ঢাকা ও কুমিল্লায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এ.এল.আর.ও-তে লেফটেন্যান্ট ছিলেন। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন। বাংলার গভর্নর ঢাকায় মিসেস এলিসনকে নিম্নলিখিত শোকবার্তা পাঠিয়েছেন: “আপনার স্বামীর জীবন বাঁচানোর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় গভীরভাবে দুঃখিত। আমি আপনাকে আপনার কঠিন পরীক্ষা এবং দুঃখজনক বিয়োগে আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করতে বলছি।” একই পত্রিকায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এলিসনের হামলাকারীকে ধরার জন্য ৫,০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণার একটি খবর প্রকাশিত হয়। বলা হয়-‘বাংলার সরকার ত্রিপুরা জেলার নিহত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিঃ ই.বি. এলিসনের হামলাকারীর গ্রেপ্তার ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য তথ্য প্রদানের জন্য ৫,০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে।’ আরেক খবরে এই পত্রিকা উল্লেখ করে-‘এলিসনের বিধবা স্ত্রী মিসেস এলিসন এবং তার মেয়ে আজ ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।’
১৯৩২ সালের ১১ আগস্টের সিভিল ও মিলিটারি গেজেট পত্রিকা ‘বঙ্গ পরিষদে জোরালো বক্তৃতায়- ‘মি. এলিসনকে শ্রদ্ধা নিবেদন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়-‘ত্রিপুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রয়াত মি. ই. বি. এলিসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতা, হাওড়া এবং আলিপুরের বাংলার সরকারের সমস্ত অফিস এবং কলকাতা হাইকোর্ট দুপুর ১টায় বন্ধ ছিল। আজ বঙ্গীয় পরিষদে মি. এলিসনের মৃত্যু এবং স্টেটসম্যানের সম্পাদক স্যার আলফ্রেড ওয়াটসনের উপর হামলার চেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়। স্বরাষ্ট্র সদস্য মি. আর. এন. রেইড বলেন, “আমরা একজন মূল্যবান সরকারি কর্মচারীকে হারিয়েছি এবং লজ্জাজনক দীর্ঘ তালিকায় আরও একটি অপরাধ যুক্ত হয়েছে।” তিনি পরিষদকে ব্যবসা শুরু করার আগে মি. এলিসনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশের আহ্বান জানান। পরিষদের সকল গোষ্ঠীর নেতারা এই ঘটনার নিন্দা জানান। সভাপতি পরিষদের পক্ষ থেকে মিসেস এলিসনকে শোকবার্তা এবং স্যার আলফ্রেড ওয়াটসনকে তার অলৌকিক পরিত্রাণের জন্য অভিনন্দন বার্তা পাঠানোর প্রস্তাব দেন। লিবারেল নেতা মি. জে. এন. বসু বলেন, “ভারতীয়দের মধ্যে সকল শ্রেণী এবং বর্ণের দায়িত্বশীল মতামত স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করে যে, একজন নিরীহ ব্যক্তির জীবন নেওয়ার মতো ঘৃণ্য কাজ ভারতীয়দের কাছে আর কিছুই নেই।” তিনি আরও বলেন, “গুপ্তহত্যার সংস্কৃতি হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সেরা এবং মহৎ আদর্শের উপর আক্রমণ।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, “ যারা গুপ্তহত্যার সংস্কৃতিতে ডুবে গেছে, তারা যেন সঠিক পথে ফিরে আসে এবং বুঝতে পারে যে, মানবতার চিরন্তন ইতিহাসে তাদের নাম সম্মানের তালিকায় নয়, বরং কলঙ্কের তালিকায় লেখা থাকবে।”
‘ইংল্যান্ডের জন্য প্রাণ দিলেন’ শিরোনামে আরেকটি খবরে বলা হয়-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মি. ডব্লিউ. এইচ. থম্পসন বলেন যে, মি. লোম্যান, কর্নেল সিম্পসন এবং মি. পেডি সভ্যতার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং মি. এলিসন ভারতের জন্য তার জীবন দিয়েছেন, কিন্তু ইউরোপীয় সদস্যদের মনে এবং মিসেস এলিসন ও অন্যদের মনে যে অনুভূতি সবচেয়ে বেশি ছিল তা হলো মি. এলিসন ইংল্যান্ডের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, ঠিক যেমন ট্রাফালগারের পরে নেলসন কর্তব্যপরায়ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।
টহল জোরদার
১৯৩২ সালের ১১ আগস্টের ‘সিভিল ও মিলিটারি গেজেট ’ পত্রিকা ‘এলিসন হত্যার পরিণতি, কুমিল্লাবাসীকে পৌর এলাকায় টহল দেওয়ার নির্দে ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়-‘ ত্রিপুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মি. ই.বি. এলিসনের হামলাকারী যে এলাকা দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে, সেই এলাকার ১৩ জন বাসিন্দা, যার মধ্যে মোক্তারও রয়েছে, তাদেরকে বিশেষ কনস্টেবল করা হয়েছে। তাদের সকালে ও সন্ধ্যায় থানায় হাজিরা দিতে এবং পুরো পৌর এলাকায় টহল দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মতামত জানাতে-+৮৮০১৭১১১৫২৪৪৩