রাওয়ালপিন্ডিতে
সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনটা ভেসে গেল বৃষ্টিতে। আজ দ্বিতীয়
দিন খেলতে নেমে দেখা গেল আগের ম্যাচের একই পিচ আচরণ করছে ভিন্নরকম। শান
মাসুদের স্বাগতিক পাকিস্তান যেন অনায়াসেই ব্যাটে বল পাচ্ছিল, আর রান উঠছিল
ওয়ানডে মেজাজে। সেখান থেকে ম্যাচটি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আনার মূল কারিগর
বোলাররা। বিশেষত মেহেদী হাসান মিরাজের ফাইফার (৫) ও তাসকিন আহমেদের তিন
উইকেটে স্বাগতিকদের অলআউট করে স্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করেছে টাইগাররা।
শেষ
বিকেলে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর আগে পাকিস্তান ২৭৪ রানে অলআউট হয়ে
যায়। এরপর টাইগাররা ব্যাটিং করেছে মোটে ২ ওভার। দিন শেষ করার ঘোষণাটা আসে
কিছুটা অবাক করার মতো। কারণ পাকিস্তান এর আগে খেলেছে ৮৫.১ ওভার, সবমিলিয়ে
ন্যূনতম আরও ৫-৭ ওভার চলতে পারে মনে হচ্ছিল। দিনের আলোও ছিল স্বাভাবিক।
প্রথম
ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য নড়বড়ে শুরু করেন বাংলাদেশি ওপেনার সাদমান
ইসলাম। মির হামজার লাফিয়ে ওঠা প্রথম ডেলিভারিতেই ক্যাচ তুলে দেন পঞ্চম
স্লিপে থাকা সৌদ শাকিলের হাতে। তবে সাদমানের সৌভাগ্য যে, সেটি হাত ফসকে
ফেলে দেন শাকিল। ওই ওভারের ষষ্ঠ বল আরেক ওপেনার জাকির হাসানের ব্যাট থেকে
স্টাম্পের দিকে যেতে যেতে ওপর দিয়ে পার হয়ে যায়। তবে স্বস্তির খবর– দিন
শেষে দুজনই অপরাজিত আছেন। কোনো উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১০ রান,
এখন পর্যন্ত পাকিস্তান এগিয়ে আছে ২৬৪ রানে।
এর আগে টস জিতে টাইগার
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ইনিংসের প্রথম
ওভারেই তাসকিন আহমেদের বুদ্ধিদীপ্ত সেটাপে ফেরান পাক ওপেনার আবদুল্লাহ
শফিককে। গত ১ বছরে তিনি নিজের ৪র্থ ডাক (শূন্য) নিয়ে ফিরেছেন সাজঘরে।
এরপরের গল্পটা সাইম আইয়ুব আর শান মাসুদের। দুজন মিলে পুরো সেশনে বাংলাদেশের
বোলারদের শাসন করেছেন। তাদের দলীয় খাতায়ও উঠেছে ৯৯ রান।
দ্বিতীয়
সেশনের প্রথম ওভারেই দলীয় সংগ্রহ একশ পার করে পাকিস্তান। কিন্তু বাংলাদেশ
ছন্দে ফিরেছে এরপরই। তৃতীয় ওভারে এসেছে প্রথম সাফল্য। মেহেদী হাসান মিরাজের
বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে যান ৫৭ রান করা পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ।
রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। সাইম আইয়ুব খেলছিলেন প্রপার টেস্ট
ক্রিকেট। তাকে বড় শট খেলতে একপ্রকার ফাঁদেই ফেলেছিলেন মিরাজ। ক্রিজ ছেড়ে
বেরিয়ে স্লগ করতে চেয়েছিলেন। তবে বাইরের দিকে বেরিয়ে যাওয়া বলটা ব্যাটে
আসেনি। বল উইকেটরক্ষক লিটনের হাতে যেতেই নিখুঁত স্ট্যাম্পিং। সাইম ফেরেন ৫৮
রানে।
সৌদ শাকিল ফিরতে পারতেন শূন্য রানেই। নাহিদ রানার বলে স্লিপে সহজ
একটি ক্যাচ যায়। তবে তা মিস করেন মিরাজ। ২৮ বলে ১৬ রান করে এগোচ্ছিলেন
প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটার। তবে সেটাকে বাড়তে দেননি তাসকিন।
ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় স্ট্যাম্পে। তাসকিনের দিনের দ্বিতীয় শিকার
হন এই ব্যাটার।
মাঝে সাকিব আল হাসান এসে চাপ বাড়িয়েছেন। আর উইকেট
নিয়েছেন মিরাজ। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের শেষ বিকেলে চিত্র ছিল ভিন্ন। মাঝে
মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট তুলে নিয়েছেন পেসার নাহিদ রানা। দুর্দান্ত এক
ডেলিভারিতে রিজওয়ানকে নাজমুল হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন এই গতি তারকা।
লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন আগের ম্যাচে দারুণ ছন্দে
থাকা রিজওয়ান। তার আউটে ষষ্ঠ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
২৪ রানের জুটির পর
মিরাজের বলে তুলে মারতে গিয়ে আউট হন খুররাম শেহজাদ। ক্যাচ দিয়েছেন মিড–অফে
দাঁড়িয়ে থাকা সাকিব আল হাসানকে। মিরাজ পেয়ে যান নিজের তৃতীয় উইকেট। এরপরই
সাকিব আল হাসানের বলে ক্যাচ মিস করেন মুমিনুল হক। জীবন পান মোহাম্মদ আলী।
তবে
সেটার সুবিধা পাকিস্তান নিতে পারেনি। মোহাম্মদ আলী বেশিক্ষণ টিকলেন না।
মিরাজের বলে স্লিপে সাদমান ইসলামের ক্যাচ হয়েছেন। মিরাজ নিলেন চতুর্থ
উইকেট, পাকিস্তান হারায় অষ্টম ব্যাটসম্যান।
সালমান আলী আগা এরপর মারমুখী
হয়েছেন। নতুন বলে তাসকিন আক্রমণে আসতেই উড়িয়ে খেলেছেন। তুলে নেন ফিফটি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই তাসকিনের বলেই ফিরতে হয় তাকে (৫৪)। বাউন্সার বলে
খেলতে চেয়েছেন ফাইন লেগে। সাকিব আল হাসান বাউন্ডারি লাইনে নিয়েছেন দারুণ এক
ক্যাচ।
আর ঠিক পরের বলেই আবরার এগিয়ে এসে খেলার চেষ্টা করেন মিরাজকে।
ব্যাটে-বলে হয়নি। বল লিটনের হাতে জমা পড়তেই ভেঙে দেন স্ট্যাম্প। পূর্ণ হয়
মিরাজের পাঁচ উইকেট। আর পাকিস্তান থামল ২৭৪ রানে। মিরাজের ৫, তাসকিনের ৩
এবং একটি করে উইকেট গেছে সাকিব-নাহিদের দখলে।