জাতীয়
পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের
বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের
দাবিতে আন্দোলন করছে। আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কোটা পদ্ধতি
বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থী।’
তিনি
বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন করে কোটাকে বৈধ করতে পারবে না সরকার। মৌলিক অধিকার
সম্পর্কিত ২৯-এর ১, ২, ৩ ধারা পরিবর্তন করার ক্ষমতা সংবিধানে দেওয়া হয়নি।
এদেশের মানুষ হাজার বছর ধরে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলনে বাঙালিরা ভূমিকা
রেখেছেন শুধু বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে। পরবর্তীতে পাকিস্তানিরাও আমাদের
সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানিরা আমাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকতে
বাধ্য করেছিল। ফলে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং পরবর্তীতে
স্বাধীনতা-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বর্তমানে
আওয়ামী লীগ আবার ডিভাইড অ্যান্ড রুলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বৈষম্য
সৃষ্টি করেছে।’
শনিবার (০৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে গাজীপুর মহানগরের
তেলিপাড়া এলাকায় সাগর-সৈকত কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।জাতীয় সংগীত পরিবেশনের
মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের
উদ্বোধন করেন দলের চেয়ারম্যান।
দেশের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়, সাধারণ
মানুষ অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছেন উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন,
‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, অথচ মানুষের আয় বাড়ছে না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে,
মজুরির দাম কমছে। ডলারের সঙ্গে আমাদেরও টাকার মানের অবমূল্যায়ন হচ্ছে। খালি
কর্মিবাহিনী জোগালেই সংগঠন শক্তিশালী হবে না। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হলে
আমাদের রাজনীতি দিতে হবে। জনগণ যে রাজনীতি চায়, তাদের সেই রাজনীতি দিতে
হবে। রাজনীতি করতে হলে কষ্ট করতে হয়, কষ্টের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই সংগঠন এগিয়ে যাবে।’
ডলার
সংকটের কারণে বিভিন্নভাবে আমদানি কমিয়ে এনেছে সরকার উল্লেখ করে জি এম কাদের
বলেন, ‘কারণ আমাদের রফতানি এবং প্রবাসী আয় কমেছে। যেহেতু আমদানি ব্যয়
বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। রিজার্ভ কমতে কমতে এমন একটা
অবস্থায় চলে আসছে, সারা বিশ্ব বলছে এদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাবে
না। যেহেতু এরা কোনও ডলার আমাকে দিতে পারে না। আমেরিকানরা বলছে তারা এখানে
ব্যবসা করছে, তাদের টাকা-পয়সা দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। তাহলে ব্যবসা করবে
কেন তারা।’
সরকারের উদ্দেশে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা আরও বলেন, ‘দেশের
অর্থনীতিকে ছিদ্র করে ফেলেছে এই সরকার। সেই ছিদ্র দিয়ে সব কিছু চলে যাচ্ছে।
রিজার্ভ কোনও সময় বাড়বে না। যেটা বাড়ছে সেটা দেড় থেকে দুই মাস পর আবার
আগের অবস্থায় চলে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক যে দুরবস্থা তার কারণ সরকারের
ভ্রান্তনীতি এবং দুর্নীতি। গ্যাস এবং বিদ্যুতের বেহাল অবস্থা। এর সম্পূর্ণ
দায় সরকারের। গ্যাস এবং বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি
টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। দেশের ব্যাংকগুলো খালি করে দিয়েছে। নিজেদের
লোককে লুটপাট করতে দিয়ে খেলাপি ঋণ বাড়িয়েছে। এখন ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে গেলে
টাকা পায় না। যার জন্য শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকজন ছাঁটাই করতে
হচ্ছে। তারা চালাতে পারছে না। আর বলা হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প করছি।
আসলে দুর্নীতির বটবৃক্ষ লালন করছে এই সরকার।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম
সদস্য ও গাজীপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার
মিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
সদস্যসচিব
কাউন্সিলর কামরুজ্জামান মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয়
পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া,
প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম, সিনিয়র
ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা
গোলাম মোহাম্মদ প্রমুখ।