শেষ
ওভারে ১৪ রানের সমীকরণ মেলাতে ব্যর্থ হয়ে সিরিজে টানা চতুর্থ টি-টোয়েন্টি
হারল তারা। এর আগে বাংলাদেশের ১৪৩ রান তাড়া করতে গিয়ে ভালো একটা লড়াই–ই
করতে পেরেছে সিকান্দার রাজার দল।
প্রথম ওভারেই ওপেনার ব্রায়ান
বেনেটকে হারিয়ে ইনিংস শুরু করা জিম্বাবুয়ে ৯৪ রানে হারিয়ে বসে ৬ উইকেট।
এরপরও জোনাথন ক্যাম্পবেল, ওয়েলিংটন মাসাকাদজাদের সৌজন্যে ওই লড়াই। কিন্তু
তীরে এসেও তাঁদের তরি বাঁচাতে দেননি ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে
ফেরা সাকিব আল হাসান। ৩.৪ ওভারে ৩৫ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এর আগে
আইপিএল–ফেরত মোস্তাফিজুর রহমান দলে ফিরেই ৪ ওভারে ১৯ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
২ উইকেট নিয়েছেন সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তাসকিন আহমেদ। তবে তিনটা
ক্যাচ না পড়লে বোলারদের পক্ষে আরও সহজ হতো ম্যাচটা জেতানো।
তবে টানা
চতুর্থ ম্যাচ জয়ের রাতেও ভোলা যাচ্ছিল না বাংলাদেশের বিভীষিকাময় ব্যাটিং।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি টইটম্বুর।
কিন্তু টি-টোয়েন্টির বিনোদন নিতে এসে এ কেমন ব্যাটিং দেখলেন দর্শকেরা!
চট্টগ্রামে
প্রথম তিন ম্যাচ জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ঢাকায় এসেছে
বাংলাদেশ দল। তবে সিরিজ জয়ের আনন্দেও একটা অতৃপ্তির কাঁটা ছিল। প্রতিপক্ষে
সহজতম প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে পেয়েও নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে না পারার
অতৃপ্তি। লক্ষ্য ছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের শেষ দুই ম্যাচে সেই
অতৃপ্তি দূর করা। কিন্তু আজকের ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ ব্যবধানটা এরই মধ্যে
৪-০ করে থাকলেও অতৃপ্তিটা নিশ্চয়ই এখন আরও বেড়েছে।
টসে জিতে
জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সাকিব
আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার দলে ঢোকায় বাংলাদেশ মাঠে নামে
তিন পরিবর্তন নিয়ে। মাহমুদউল্লাহ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বিশ্রামে, আগের তিন
ম্যাচের পারফরম্যান্স বিবেচনায় লিটন দাসের না থাকাটাকে ‘বাদ পড়া’ই বলতে
হবে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে অভিষেক টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে ৬৭ রান করা
তানজিদ হাসানের সঙ্গে ওপেনিংয়ে জুটি বাঁধেন সৌম্য। বলতে পারেন বিশ্বকাপের
আগমুহূর্তে ওপেনিং নিয়ে নতুন স্বপ্নই দেখালেন তাঁরা।
পাওয়ারপ্লের ৬
ওভারে এল বিনা উইকেটে ৫৭ রান, যেটা এই সিরিজেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
টি-টোয়েন্টিতে তানজিদ তাঁর দ্বিতীয় অর্ধশতক (৩৭ বলে ৫২) করে যখন লুক
জঙ্গুয়ের বলে জোনাথন ক্যাম্পবেলের ক্যাচ হলেন, সৌম্যের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে
১১.২ ওভারে হয়ে গেছে ১০১ রান। যদি খেলা দেখে থাকেন, আপনিও নিশ্চয়ই
ভেবেছিলেন এবার বাংলাদেশের রানটা ২০০–এর কাছাকাছি না হয়ে যায় না। কিন্তু
চমকের যে তখনো বাকি!
বিনা উইকেটে ১০১ রান থেকে আর মাত্র ৪২ রান যোগ
করতেই ২০তম ওভারের শেষ বলটি বাকি থাকতে অলআউট হয়ে যাওয়া চমক তো অবশ্যই।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়াটা এত ঘন ঘন হয়েছে যে শেষ
আট ব্যাটসম্যানই পাননি দুই অঙ্কের দেখা। তানজিদ, সৌম্য একই ওভারে ফেরার পর
ইনিংসে ১ ওভারে ২ উইকেট পড়ার ঘটনা ঘটেছে আরও দুবার।
বাংলাদেশের
ইনিংস দেখে মনে হলো তাদের ব্যাটিংয়ের কাঠামোটাই এমন যে টপ অর্ডার খারাপ
করলে মিডল অর্ডার কিছু করবে, টপ অর্ডার ভালো করলে মিডল অর্ডার পারবে না।
আগের তিন ম্যাচের দুটিতেই ম্যাচসেরা হওয়া তাওহিদ হৃদয় যেমন আর পারেননি।
পরের ওভারেই আউট ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ফেরা সাকিব আল হাসান,
সাকিবকে বোল্ড করা ব্রায়ান বেনেটের ওই ১৫তম ওভারে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনেরও
বোল্ড হয়ে যাওয়া এবং ১ ওভার বিরতি দিয়ে ১৭তম ওভারে জাকের আলীর ফিরে যাওয়া
মাত্র ৯ বলের ব্যবধানেই প্রায় মুড়ে দেয় বাংলাদেশের মিডল অর্ডার।
এরপর
আর একবারও ফিরে আসার লক্ষণ দেখায়নি বাংলাদেশের ব্যাটিং। অবশ্য টি-টোয়েন্টি
ক্রিকেটটাই এমন যে একবার পা হড়কালে আর ফিরে আসা যায় না। একদিকে
ব্যাটসম্যানদের অবিমৃষ্য ব্যাটিং, অন্যদিকে তাসকিন আহমেদের রানআউটের ফাঁদে
পড়া এবং শেষ উইকেট জুটিতে মোস্তাফিজুর রহমান আর তানভীর ইসলামের রানআউটের
সহজ সুযোগ দিয়েও জিম্বাবুয়ের ফিল্ডারদের হাস্যকর ভুলের সৌজন্যে বেঁচে
যাওয়া-সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধটা যেন হয়ে দাঁড়াল ট্র্যাজেডি
আর কমেডির যৌথ মঞ্চায়ন।
যে মঞ্চে শেষ পর্যন্ত জয় বাংলাদেশেরই। তবে
এই জয়ও তৃপ্তির পিঠে চড়ে বসা অতৃপ্তিটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারবে না; বরং ব্যাটিং
নিয়ে দুশ্চিন্তার বলিরেখাটাকেই আরও স্পষ্ট করে তুলবে। বিশ্বকাপের টিকিট না
পাওয়া জিম্বাবুয়েই যদি ঘরের মাঠে এমন পরীক্ষা নেয়, বিশ্বকাপে গিয়ে কী করবে
বাংলাদেশ!