টানা
চার জয়ে উড়তে থাকা লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে অল্প রানেই থামালেন নাসুম আহমেদ,
আসিফ হাসানরা। সেই রান তাড়ায় রনি তালুকদারের দুর্দান্ত ইনিংস ও মাহিদুল
ইসলামের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে অনায়াসে জিতল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
ঢাকা
প্রিমিয়ার লিগে একই দিনে ব্যাটসম্যানদের দারুণ পারফরম্যান্সে জয় পেয়েছে
ব্রাদার্স ইউনিয়ন। খালিদ হাসান ও ইরফান শুক্কুরের ফিফটির পর হাসান মুরাদ ও
জাওয়াদ রোয়েনের স্পিনে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে উড়িয়ে দিয়েছে শাইনপুকুর
ক্রিকেট ক্লাব।
রূপগঞ্জকে থামাল মোহামেডান
ফতুল্লার খান
সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে সোমবার রূপগঞ্জকে ৬ উইকেটে হারায় মোহামেডান।
১৭৯ রানের লক্ষ্য ৫০ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
পাঁচ ম্যাচে মোহামেডানের চতুর্থ জয় এটি। সমান ম্যাচে রূপগঞ্জ পেল প্রথম পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ।
প্রথম
রাউন্ডে ফিফটির পর টানা তিন ম্যাচে তেমন রান পাননি রনি। এবার রূপগঞ্জের
বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে এলো অপরাজিত ৯২ রান। ১১৪ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কার
ইনিংসে তিনিই ম্যাচ সেরা।
রনির সঙ্গে শতরানের জুটি গড়ে ৫৯ রানের
ইনিংস খেলেন মাহিদুল। চলতি লিগে পাঁচ ম্যাচে এটি তার চতুর্থ পঞ্চাশ ছোঁয়া
ইনিংস। সব মিলিয়ে ৭২ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে তার ২২তম ফিফটি এটি।
রান
তাড়ায় চার ওভারের মধ্যেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন ইমরুল কায়েস ও প্রান্তিক
নওরোজ। চতুর্থ রাউন্ডে সেঞ্চুরি ছাড়া বাকি চার ম্যাচে ১৫ রানও করতে পারেননি
ইমরুল।
শুরুর ধাক্কা সামলে তৃতীয় উইকেটে ১৫১ বলে ১৩০ রানের জুটি
গড়েন রনি ও মাহিদুল। ৬৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মাহিদুল।
আব্দুল হালিমের বলে ক্যাচ দিয়ে থামে তার ৭৮ বলে ৩টি করে চার-ছক্কার ইনিংস।
পরে আরিফুল ইসলামও দ্রুত ফিরে গেলে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন রনি। ৩২ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ।
এর
আগে টস হেরে ব্যাটিয়ে নেমে হতাশ করেন রূপগঞ্জের ওপরের সারির
ব্যাটসম্যানরা। পুরো ইনিংসে পঞ্চাশ রানের জুটি হয়নি একটিও। সপ্তম উইকেটে
সর্বোচ্চ ৪১ রান যোগ করেন শামীম হোসেন ও মাশরাফি বিন মুর্তজা।
৪
রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে দুইশর আগেই গুটিয়ে যায় রূপগঞ্জ। চৌধুরি মোহাম্মদ
রিজওয়ান, আমিনুল ইসলাম, শুভাগত হোমরা আশা জাগালেও ইনিংস বড় করতে পারেননি।
ছয়
নম্বরে নেমে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন শামীম। ৮০ বলে ৪
চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। মাশরাফির ব্যাট থেকে আসে
৩১ বলে ২১ রান।
মিতব্যয়ী বোলিংয়ে ৩টি করে উইকেট নেন মোহামেডানের দুই বাঁহাতি স্পিনার নাসুম ও আসিফ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
লেজেন্ডস
অব রূপগঞ্জ: ৪৭.১ ওভারে ১৭৮ (ফারদিন ৮, তৌফিক ৫, ইমরানউজ্জামান ৪, রিজওয়ান
২৫, আমিনুল ২৬, শামীম ৫৯, শুভাগত ১৬, মাশরাফি ২১, শহিদুল ২, হালিম ১, আল
আমিন ০*; আবু হায়দার ৮-০-৩৯-১, নাসুম ১০-১-৩০-৩, আসিফ ১০-০-৩০-৩, কামরুল
৮.১-০-৩২-২, আরিফুল ইসলাম ১০-১-৩৮-১, আরিফুল হক ১-০-৬-০)
মোহামেডান
স্পোর্টিং ক্লাব: ৪১.৪ ওভারে ১৭৯/৪ (ইমরুল ১, রনি ৯২*, প্রান্তিক ২,
মাহিদুল ৫৯, আরিফুল ইসলাম ৬, মাহমুদউল্লাহ ৯*; আল আমিন ১০-২-২০-১, শুভাগত
৮-০-৪৮-১, শহিদুল ৮.৪-০-৩৯-০, হালিম ৭-০-২৫-২, মাশরাফি ৩-০-১১-০, আমিনুল
১-০-১৩-০, শামীম ৪-০-২০-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রনি তালুকদার
অবশেষে ব্রাদার্সের জয়
বিকেএসপির
৩ নম্বর মাঠে রোমাঞ্চ ছড়ানো লড়াইয়ে গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমিকে ২
উইকেটে হারায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ২২৬ রানের লক্ষ্য ৪ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে
ফেলে তারা।
পাঁচ ম্যাচে ব্রাদার্সের প্রথম জয় এটি। সমানসংখ্যক ম্যাচে এখনও জয় পায়নি গাজী টায়ার্স।
জয়ের
জন্য ৪০ রান বাকি থাকতে অষ্টম উইকেট হারায় ব্রাদার্স। বল বাকি তখন ২৫টি।
সালাউদ্দিন সাকিলকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২১ বলে সেটি করে ফেলেন
মাহমুদুল।
৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৩ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। সাকিল করেন ১০ বলে ১৪ রান।
রান
তাড়ায় ব্রাদার্সের শুরুটা ছিল মন্থর। ১০০ ছুঁতে ২৭ ওভার লেগে যায় তাদের।
৩৯ রান করতে ৯৭ বল খেলেন ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেন। চার নম্বরে নামা রাহাতুল
ফেরদৌস ৩২ রান করেন ৫৭ বলে।
পরে আব্দুল মজিদ, আসিফ আহমেদ ও মনির
হোসেনরা দ্রুত ফিরে গেলে চাপে পড়ে যায় ব্রাদার্স। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে
দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন পাঁচ নম্বরে নামা মাহমুদুল।
ম্যাচের
প্রথমভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা গাজী টায়ার্সের পক্ষে একমাত্র পঞ্চাশ
ছোঁয়া ইনিংস খেলেন আশরাফুল আলম। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৯৮ বলে ৬৯ রান করেন
তিনি।
এছাড়া আট নম্বরে নেমে ৬১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন ইফতেখার সাজ্জাদ। সপ্তম উইকেটে আশরাফুল ও ইফতেখার সাজ্জাদ গড়েন ৬৬ রানের জুটি।
ব্রাদার্সের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রহমতউল্লাহ আলি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী
টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি: ৫০ ওভারে ২২৫/৯ (আশিকুর ১১, ইফতেখার হোসেন ২৯,
জুবারুল ৫, আশরাফুল ৬৯, তাহজিবুল ৮, শামিম ৬, মেহরাব ৪, ইফতেখার সাজ্জাদ
৪৭, আরিদুল ১৯*, তৌফিক ২; রাহাতুল ১০-০-২৯-১, আবু জায়েদ ৭-০-৪৭-১, নুর
৫-০-৩১-১, সালাউদ্দিন ৭-১-৩০-১, মনির ১০-০-৩৭-১, মাহমুদুল ১-০-৯-০,
রহমতউল্লাহ ১০-০-৩৯-৩)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড: ৪৯.২ ওভারে ২২৯/৮
(ইমতিয়াজ ৩৯, রহমতউল্লাহ ১৪, জাকিরুল ২৩, রাহাতুল ৩২, মাহমুদুল ৫৬*, মজিদ
৩, আসিফ ৬, মনির ৯, আবু জায়েদ ১০, সালাউদ্দিন ১৪*; মারুফ ৯-২-৪৩-২, তৌফিক
৯-০-৬৯-১, আরিদুল ১০-১-২৯-১, মেহরাব ৩-০-১৪-০, শামিম ৯.২-০-৩২-৩, ইফতেখার
সাজ্জাদ ৯-০-৩০-০)
ফল: ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদুল হাসান
খালিদ-ইরফানের ফিফটি, মুরাদের ৪ উইকেট
বিকেএসপির
৪ নম্বর মাঠে সেভাবে লড়াই করতেই পারেনি পারটেক্স। ১২৮ রানের জয় পায়
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। ২৫৮ রানের লক্ষ্যে পারটেক্স ১২৯ রানে গুটিয়ে যায়
১০ ওভার বাকি রেখেই।
শাইনপুকুরের আড়াইশ ছোঁয়া পুঁজির কারিগর খালিদ
হাসান ও ইরফান শুক্কুর। ওপেনিংয়ে নেমে ১১৪ বলে ৮৫ রান করেন খালিদ। তার
হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। শেষ দিকে ৬৬ রানের ঝোড়ো অপরাজিত ইনিংস
খেলেন ইরফান।
বল হাতে স্রেফ ২১ রানে ৪ উইকেট নেন হাসান মুরাদ। জাওয়াদ রোয়েন ৩১ রানে নেন ৩ উইকেট।
টস
হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই তানজিদ হাসানের উইকেট হারায় শাইনপুকুর। আগের
ম্যাচের মতো এদিনও তেমন কিছু করতে পারেননি জাতীয় দলের এই ওপেনার। পরে
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি জাওয়াদ, মার্শাল আইয়ুব, এসএম মেহেরবরা।
একপ্রান্তে
দায়িত্ব নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন খালিদ। ৭৬ বলে চলতি লিগে দ্বিতীয় পঞ্চাশ
ছোঁয়ার পর সেঞ্চুরির পথে এগোতে থাকেন ২১ বছর বয়সী ওপেনার। তবে কাঙ্ক্ষিত
মাইলফলক পর্যন্ত যেতে পারেননি। ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৮৫ রানে থামে তার ইনিংস।
দেড়শর
আগে ৬ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে শাইনপুকুর। সেখান থেকে দায়িত্ব নেন
ইরফান। শেষ দিকে দ্রুত রান তুলে দলকে আড়াইশ পার করান তিনি। ৪৮ বলের ইনিংসে ৭
চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
রান তাড়ায়
তেমন কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি পারটেক্স। শুরুতে জাওয়াদ ও শেষ দিকে
মুরাদের স্পিনে কোনোমতে একশ পেরিয়ে গুটিয়ে যায় তারা।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন জাহিদুজ্জামান। ৭০ বলে ৬টি চার মারেন ২৭ বছর বয়সী ওপেনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শাইনপুকুর
ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫৭/৯ (খালিদ ৮৫, তানজিদ ৪, জাওয়াদ ৪, মার্শাল ৩,
মেহেরব ১৩, আকবর ২৩, ইরফান ৬৬*, রিশাদ ২০, রবিউল ১৬, মুরাদ ২, আরাফাত ২*;
মোহর ১০-২-৫৬-১, মুক্তার ১০-১-৪৪-২, আসাদুজ্জামান ৮-০-৪২-২, মাইশুকুর
৩-০-২১-০, আজমির ১০-০-৪৫-২, রাকিবুল ৯-১-৪৭-১)
পারটেক্স স্পোর্টিং
ক্লাব: ৪০ ওভারে ১২৯ (আজমির ১৯, জাহিদুজ্জামান ৫৩, মাইশুকুর ০, রাকিব ১,
শামসুল ০, তানবির ৫, আহরার ১৪, মুক্তার ১৬, মোহর ৪, রাকিবুল ৪,
আসাদুজ্জামান ১*; রবিউল ৪-২-১৪-০, আরাফাত ৮-০-১৮-০, মুরাদ ৮-১-২১-৪, জাওয়াদ
১০-৩-৩১-৩, মেহেরব ৫-০-১৪-২, রিশাদ ৫-১-২২-১)
ফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ১২৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: খালিদ হাসান