
কুমিল্লার
চান্দিনা ও চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সংযোগ সড়কটির বেহাল দশা দীর্ঘ কয়েক
বছরের। গত এক বছরেরও বেশি সময় যাবৎ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সড়কটির বেহাল চিত্র
প্রচার ও প্রকাশিত হয়। সড়কটির কার্পেটিং উঠে গেছে বহু আগে, বড়-বড় গর্তে
বর্ষা মৌসুমে যান চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ওই দুর্ভোগের সড়কটির সংস্কার
কাজের শুরুতেই অনিয়মের চিত্র দেখে ফুসে উঠেছে এলাকার জনগণ। স্থানীয়দের
তোপের মুখে সড়কের পাশের এজিন ওয়ালের ইট সরাতে বাধ্য হয় ঠিকাদার। ইট
গাঁথুনিতে বালু-সিমেন্টের মিশ্রণের ঘাঁটতির কথা স্বীকার করেন ঠিকাদারী
প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
চলতি অর্থ বছরের শুরুতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের
চান্দিনার মাধাইয়া থেকে রাণীচর ইটভাটা পর্যন্ত ৯.৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে
দরপত্র আহবান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা
অর্থায়নে ওই সড়ক সংস্কারের কাজ পায় হাসান বি-বাড়ীয়া এন্টারপ্রাইজ নামের
একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
২৩ নভেম্বর থেকে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু
করে ঠিকাদার। প্রকল্পের দরপত্র অনুযায়ী রসুলপুর বাজার, মহিচাইল বাজার এই
দুইটি অংশে আরসিসি ঢালাই করার কথা। সেই অনুযায়ী ২৩ নভেম্বর রসুলপুর বাজার
অংশে আরসিসি ঢালাই করার প্রস্তুতির শুরুতে সড়কের ১০ ইঞ্চি এজিনে গাইড
দেয়ালের ইট গাথুনি শুরু করে। প্রথম দিনেই দেড় ফুট উচ্চতার ওই গাইড দেয়ালটি
প্রায় ৬০ মিটার ইটের গাথুনি সম্পন্ন করে। কিন্তু ওই এজিনের গাথুনিতে বালুর
সাথে সিমেন্টের পরিমাণ পর্যাপ্ত না থাকায় এবং একটি ইটের সাথে আরেকটি ইটির
দূরত্ব বেশি থাকায় দুইদিন পরই ওই ইট উঠে যায়। ক্ষোভে স্থানীয়রা হাতে ইট
খুলে ফেলে দেয়। এসময় স্থানীয়দের কেউ একজন ওই ভিডিও ধারণ করে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে সমালোচনার ঝড় উঠে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর)
বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়- গাইড দেয়ালের নিচের অংশে সলিং বা বেইস না করায়
এবং ইট গাথুনিতে পরিমিত সিমেন্ট না দেয়ায় ইট গাথুনির একদিন পর মানুষ হাতেই
তুলে ফেলছে গাইড দেয়ালের ইট। দীর্ঘ বছরের পর বছর দুর্ভোগে থাকা যাত্রী ও
চালকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ঠিকাদার ও তার শ্রমিকদের উপর।
রসুলপুর গ্রামের
সিএনজি চালক আব্দুল মালেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- বর্ষাকালে এই রাস্তায়
সিএনজি অটোরিক্সা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাস্তাটির কাজ হয়না বিধায় হাজার
হাজার চালক ও যাত্রীরা সরকারকে গালাগালি করে। এখন কাজ শুরু হইছে, আর ঠিকদার
শুরুতেই দুই নম্বরী শুরু করেছে।
রসুলপুর বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাইল
হোসেন বলেন- যখন গাইড দেয়ালে ইটের গাথুনি দেয় তখন বালু-সিমেন্টের মিশ্রণ
দেখেই আমরা মন্তব্য করেছি এই গাথুনি টিকবে না। ঠিকাদার ইটগাথুনিতে ৪ গুন ১
বালু-সিমেন্টের মিশ্রন এর স্থলে ৭ গুন ১ বালু-সিমেন্টের মিশ্রণ দেয়। সোমবার
বাজারের একজন রিক্সা চালক ইট ধরে টান দিতেই খুলে চলে আসছে। এ নিয়ে আরও
কয়েকজন এসে দেয়ালের কয়েক অংশের ইট সরিয়ে ভিডিওতে ভুল কাজটি দেখিয়ে দেন।
স্থানীয়
বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান- ইট গাঁথুনিতে সিমেন্ট নেই বললেই চলে। আমরা
শুরুতেই বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। প্রথম দিনেই প্রকৌশলী বা তদারকি কর্মকর্তাদের
উপস্থিতি পাওয়া যায়নি, শ্রমিকরা নিজেদের মতো করে কাজ করছিলেন। গাঁথুনির ৩০
ঘন্টা পর আমরা যাঁচাই করার জন্য আমরা ইট ধরে উপরের দিকে টান দেতেই ইট খুলে
হাতে চলে আসে। পরে স্থানীয়দের তোপের মুখে ঠিকাদার সবগুলো ইট খুলতে বাধ্য
হয়। বড় অঙ্কের প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও শুরুতেই এমন অনিয়ম দুঃখজনক।
সংশ্লিষ্টদের পরিদর্শন, অনিয়ম বন্ধ ও মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ
করতে হবে।
এদিকে, উপজেলার এলজিইডি সূত্র জানায়, গাইড ওয়াল আরসিসি
ঢালাইয়ের মূল ভিত্তি। এখানে মান বজায় না থাকলে পরবর্তীতে পুরো সড়কের
স্থায়িত্বই ঝুঁকির মুখে পড়বে।
এব্যাপারে হাসান বি-বাড়ীয়া এন্টারপ্রাইজ
এর সাইড ম্যানেজার মো. আনোয়ারুল করিম বলেন- রবিবার কাজ শুরু হয়েছে।
ব্যস্ততার কারণে তদারকি করতে পারিনি। মিস্ত্রিরা ভুল করে সিমেন্ট কম
দিয়েছে। এখন থেকে সব কিছু নিয়মানুয়ায়ী করা হবে।
এ বিষয়ে চান্দিনা উপজেলা
প্রকৌশলী মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন- বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রথম
দিনের কাজের শুরুতে আমাদের লোকজন ছিল না কিন্তু ওই প্রকল্পের নিজস্ব ২ জন
প্রকৌশলী রয়েছে। তারাও কি বিষয়টি খেয়াল করেনি? আজ থেকে আমরা ওই সড়কের
নির্মাণ কাজ শেষ পর্যন্ত যথাযথ ভাবে নজরদারীতে রাখবো।
