কুমিল্লার
লাকসাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট না পড়ায়
শিক্ষার্থীদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ
ঘটনায় শনিবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
কমিটিকে আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবিএম এনায়েত উল্লাহ বিষয়টি
নিশ্চিত করে বলেন, “ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জানা গেছে, লাকসাম
সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শাহজাহান কবির
বিদ্যালয়ের আশপাশে রুম ভাড়া নিয়ে ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ইংরেজি
বিষয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে আসছেন। যারা ওই শিক্ষকের নিকট প্রাইভেট পড়েন তাদের
পরীক্ষায় অধিক নম্বর দেওয়া হয়। আর যারা প্রাইভেট পড়েন না, তাদের সাথে
অসদাচরণ ও বিভিন্ন হয়রানি মূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। গত বৃহস্পতিবার
দুপুরে ওই শিক্ষক ৭ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের চুল বড়
রাখার অজুহাতে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর চুল ছেঁটে ন্যাড়া করে দেন। এ
ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও
অভিভাবকরা আরও জানান, লাকমাস এলাকার কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের
প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ নিয়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে
ওই নেতাদের প্রভাব দেখিয়ে চলেন শাহজাহান কবির। এছাড়াও তিনি পাঠদানে
অবহেলা, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা, প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায়
কম নম্বর দেওয়া এবং অপমানজনক আচরণের মতো অভিযোগ রয়েছে। অভিভাবকসহ সাধারণ
মানুষ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
জানান।
অভিযুক্ত শিক্ষক শাহজাহান কবির তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ
অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্টাইলে চুল কেটে বিদ্যালয়ে আসে।
এতে বিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ্গ হচ্ছে। তাই মাথার চুল ছোট করা হয়েছে। প্রাইভেটের
বিষয়টি ভিত্তিহীন। তিনি আরও বলেন আমি কোন রাজনৈতিক নেতার প্রভাব দেখায়নি,
অভিযোগটি মিথ্যা।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আবু হানিফ বলেন, তদন্ত কমিটির
চিঠি হাতে পেয়েছি। গতকাল আমরা তদন্ত করেছি। আজকে তদন্ত চলমান রয়েছে। দুই
কর্মদিবসের দিবসের পর আমরা লিখিতভাবে প্রতিবেদন দাখিল করব।
লাকসাম
সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ বিএমএনায়েত
উল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়ের ড্রেসকোড অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের চুল ছোট রাখার
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মাথা ন্যাড়া করতে বলা হয়নি। প্রাইভেটের
বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের
নির্দেশে আমরা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। যদি সত্যতা পাওয়া যায়
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
লাকসাম উপজেলা
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাসির উদ্দীন বলেন, বিদ্যালয়ের কোনো
শিক্ষার্থীর চুল কাটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে কমিটির অনুমোদন এবং সরকারি
বিধি অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। বিষয়টি তদন্তধীন রয়েছে।
লাকসাম
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নার্গিস সুলতানা বলেন, বিষয়টি জানার পর
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
