চৌদ্দগ্রাম
প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথদিঘীতে মাছ না থাকার
বিষয়টি গোপন করে শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য বড়শি প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় দীঘিটি
লিজ নেওয়া ‘চিওড়া মৎস্য চাষী সমবায় সমিতি লিঃ’ এর সাধারণ সম্পাদকের
নেতৃত্বে অপরাপর সদস্যদের বাঁধার মুখে বড়শি প্রতিযোগিতা হয়নি। মাছ
শিকারীদের টিকেটের পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় রোষানলের ভয়ে মূল আয়োজক সমিতির
সভাপতি ফখরুল ইসলাম প্রকাশ ফয়সাল অফিসের পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। ফলে
উত্তেজিত মাছ শিকারীরা বড়শি প্রতিযোগিতার জন্য তৈরীকৃত মাচায় আগুন ধরিয়ে
দেয়। খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি
শান্ত করে। সারাদিন অপেক্ষা শেষে সন্ধায় দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আগত মাছ
শিকারীরা হতাশায় বাড়ি ফিরে যায়।
চিওড়া মৎস্য চাষী সমবায় সমিতি লিঃএর
সাধারণ সম্পাদক সফিউল ইসলাম জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের
ফলে জগন্নাথদিঘীটি অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে। হামলা-মামলার ভয়ে তৎকালীন
জগন্নাথদিঘী লিজ নেওয়া চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আ’লীগের সদস্য মহিবুল আলম মজুমদার
কানন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সুবাধে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও সাধারণ
লোকজন দফায় দফায় জাল পেলে দিঘী থেকে মাছ লুটপাট করে নিয়ে যায়। এভাবে ২০২৫
সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত কোন ধরনের বাঁধা-বিপত্তি ছাড়াই যে যার মত করে
দিঘী থেকে মাছ ধরে। ফলে দীঘিটি মাছ শূন্য হয়ে পড়ে। চলতি বছরে এপ্রিল মাসের
১৬ তারিখে জগন্নাথদিঘীটি চিওড়া মৎস্য চাষী সমবায় সমিতি লিঃ৫ বছরের জন্য লিজ
পাওয়ার পর বিভিন্ন জাতের কিছু মাছের পোনা উম্মুক্ত করা হলেও এই ৪-৫ মাসের
ব্যবধানে সেই মাছগুলো খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়নি। কিন্তু জগন্নাথদিঘী
মানে বৃহত্তর কুমিল্লার বড় ও ঐতিহ্যবাহী দীঘি এমনটাকে পুঁজি করে মাছ শূণ্য
বিষয়টি আড়াল করে আমাদের সমিতির কোন সদস্যকে কিছু না জানিয়ে সমিতির সভাপতি
ফখরুল ইসলাম প্রকাশ ফয়সাল একটি লোভী ও কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দিঘীতে ২৮
হাজার টাকা হারে টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করে বড়শি প্রতিযোগীতার নামে সাধারণ
মাছ শিকারীদের সাথে প্রতারণা শুরু করে। বিষয়টি আমরা জানতে পেয়ে কুমিল্লা
জেলা প্রশাসক ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এমন প্রতারণামূলক
কার্যক্রম বন্ধের আবেদন জানিয়েছিলাম। বিভিন্ন তদবীরের ফলে জেলা প্রশাসন
থেকে তাকে বড়শি প্রতিযোগীতার অনুমোদন দিলেও সেখানে টাকা নিয়ে কোন টিকেট
বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তারপরও ফয়সাল একগুয়েমি করে মাছ শিকারীদের কাছ
থেকে ২৮ হাজার টাকা হারে শতাধিক ব্যক্তি থেকে ২৮ লাখ হাতিয়ে নেওয়ার
অপচেষ্টা চালালে আমরা সমিতির সকল সদস্য মিলে তা প্রতিরোধ করি এবং
দূর-দূরান্ত থেকে আগত কোন মাছ শিকারী যেন প্রতারিত না হোন সেজন্য বড়শি
প্রতিযোগীতা বন্ধ রাখা হয়। সকাল ঘনিয়ে দুপুর গড়ালে প্রতিযোগীতা শুরু না হলে
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মাছ শিকারীরা সমিতির সভাপতি ফখরুল ইসলাম
প্রকাশ ফয়সালের কাছে তাদের বুকিংকৃত টাকা ফেরত চাইলে সে নানান তালবাহানা
শুরু করে। এ সময়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সে সমিতি অফিসের পিছনের দরজা দিয়ে
পালিয়ে যায়। একপর্যায়ে উত্তেজিত মাছ শিকারীরা প্রতিযোগীতার জন্য তৈরীকৃত
মাচায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়লে খবর পেয়ে
চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের এসআই অভিজিৎ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে
পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
বড়শি প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে
আসা চট্টগ্রামের শাহাদাত হোসেন জানান, আমি অনেক আশা নিয়ে এখানে প্রায় ৫০
হাজার টাকা খরচ করে বড়শি প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে এসেছিলাম। দিঘীতে যে
পূর্বের কোন মাছ নেই তা আমাদের কোন ভাবেই বুঝতে দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছিল
এখানে অনেক বড় বড় মাছ রয়েছে। প্রতিযোগীতা না হওয়ায় আমি আমার টিকেট
বুকিংকৃত ৫ হাজার টাকা ফেরত চাইলেও তা না দিয়ে আয়োজক ফয়সাল পালিয়ে যায়।
ভাগ্য ভালো আমি পুরো টিকেটের টাকা পরিশোধ করিনি। সে কিন্তু আমাকে বার বার
ফোন দিয়েছিল পুরো টাকা পরিশোধের জন্য।
ফেনীর সোনাগাজী থেকে আসা আতা
উল্যাহ জানান, আমি পিকআপ রিজার্ভ করে ৩ হাজার টাকা হারে ভাড়া করে ৫ জন
অভিজ্ঞ মাছ শিকারী নিয়ে আসছিলাম এখানে মাছ ধরতে। গতকাল রাতেও আয়োজক ফয়সাল
ফোন করে বলেছিল সকাল সকাল যেন চলে আসি। কিন্তু এসেতো হতাশা ছাড়া কিছুই
পেলাম না। শূন্য হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে এখান থেকে।
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা
শাকিল জানায়, আমি পুরো ২৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে টিকেট কনফার্ম করে অনেক সখ
করে আমরা ৫ বন্ধু মাছ শিকার করতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে যে আমাদের সাথে
এমন প্রতারণা করা হচ্ছে তা জানতাম না। আমি দুপুর ১২ টার দিকে আমার টিকেটের
টাকা আয়োজক ফয়সালের কাছে ফেরত চাইলে সে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং কোন টাকা ফেরত
দিবে বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু আমিতো এখানে অচেনা মানুষ জোর করে তো আর আমার
টাকা আদায় করতে পারবো না। তাই মনের দু:খে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
চৌদ্দগ্রাম
থানার উপ-পরিদর্শক অভিজিৎ বলেন, জগন্নাথদিঘীর লিজ নেওয়া সমিতির দু’পক্ষের
উত্তেজনার খবর পেয়ে আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তাদের দ্ব›েদ্বর জেরে
বড়শি প্রতিযোগীতা হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত করাই ছিলো অপ্রীতিকর কোন
ঘটনা ঘটেনি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জামাল হোসেন জানান,
আমি সারাদিন ২ জন উপদেষ্টার সফরকৃত অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলাম। দুই পক্ষের
দ্ব›েদ্বর জেরে জগন্নাথদীঘিতে বড়শি প্রতিযোগীতা হয়নি বলে জানতে পেরেছি। তবে
আইন-শৃঙ্খলা বিঘœ হওয়ার মত কোন ঘটনা ঘটেনি।
