চৌদ্দগ্রাম
প্রতিনিধি: বড়শি দিয়ে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে মাছ শিকার করা মৎস্যপ্রেমিদের
পছন্দের। কিন্তু পানির নিচে সেই কাঙ্খিত মাছ আছে কিনা তা কেউই জানে না। আর
সেই অজানার মধ্যেই প্রতিযোগীতার নির্দিষ্ট সময় শেষে পেতে হবে হতাশা। আর
এমনই একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ঐতিহ্যবাহী
জগন্নাথদিঘীতে। মাছ শ‚ন্য এই দিঘীতে আগামী ১০ অক্টোবর (শুক্রবার) ২৪ ঘন্টা
ব্যাপী বড়শি প্রতিযোগীতার আয়োজন চলছে পুরোধমে। ইতিমধ্যে প্রতিটি টিকেটের
দাম ২৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে শতাধিক টিকেট বিক্রি করে ২৮ লাখ টাকা
হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের আমলাসহ প্রশাসনের
উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফ্রি টিকেট দেওয়া হয়েছে বলেও প্রচার করা হচ্ছে।
কিন্তু কেউই জানে না দিঘীটি যে মাছ শ‚ণ্য। দিঘী ইজারা নেওয়া “চিওড়া মৎস্য
চাষী সমবায় সমিতি লিঃ” এর সাধারণ সম্পাদক সফিউল ইসলাম মাছ শ‚ণ্য দিঘীতে
বড়শি প্রতিযোগীতার নামে মৎস্যপ্রেমিদের সাথে প্রতারণা ও মোটা অংকের টাকা
হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা বন্ধের দাবি জানিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ
স‚ত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তের ফলে জগন্নাথদিঘীটি
অভিভাবক শ‚ণ্য হয়ে পড়ে। হামলা-মামলার ভয়ে জগন্নাথদিঘী লিজ নেওয়া চৌদ্দগ্রাম
উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মহিবুল আলম কানন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার
সুবাধে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও সাধারণ লোকজন দফায় দফায় জাল পেলে দিঘী
থেকে মাছ লুটপাট করে নিয়ে যায়। এভাবে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত কোন
ধরনের বাঁধা-বিপত্তি ছাড়াই যে যার মত করে দিঘী থেকে মাছ ধরে। ফলে দিঘীটি
মাছ শ‚ন্য হয়ে পড়ে। চলতি বছরে এপ্রিল মাসের ১৬ তারিখে জগন্নাথদিঘীটি “চিওড়া
মৎস্য চাষী সমবায় সমিতি লিঃ” ৫ বছরের জন্য লিজ পাওয়ার পর বিভিন্ন জাতের
কিছু মাছের পোনা উম্মুক্ত করা হলেও এই ৪-৫ মাসের ব্যবধানে সেই মাছ গুলো
খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়নি। কিন্তু জগন্নাথদিঘী মানে বৃহত্তর কুমিল্লার
বড় ও ঐতিহ্যবাহী দিঘী এমনটাকে পুঁজি করে মাছ শ‚ণ্য বিষয়টি আড়াল করে তড়িঘড়ি
করে বড়শি প্রতিযোগীতার নামে মৎস্যপ্রেমিদের পকেট থেকে মোটা অংকের টাকা
হাতিয়ে নিতে এমন প্রতারণাম‚লক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে সমিতির সভাপতি ফখরুল
ইসলাম প্রকাশ ফয়সাল। সে চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট হ্যাচারী থেকে লোক দেখানো
স্বল্প পরিমাণে কিছু বড় মাছ এনে তা দিঘীতে উম্মুক্ত করে ভিডিওধারণ করে। এই
ভিডিও ধারণ ও চটকদার বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে মাছ শিকারীদের বিভিন্ন গ্রুপে তা
ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আকৃষ্ট করে ২৮ হাজার টাকা হারে টিকেট বিক্রি শুরু করে।
অতীতে কখনো এই দিঘীতে ৫ হাজার টাকার উপরে বড়শি প্রতিযোগিতার টিকেটের ম‚ল্য
ছিল না। এতে করে ফখরুল ইসলাম ফয়সাল প্রায় ২৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার
পাঁয়তারা করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, ৫ আগস্ট সরকার
পরিবর্তনের দিন থেকে টানা ৮-৯ মাস স্থানীয়রাসহ দ‚র-দ‚রান্তের শত শত মানুষ
দিঘীর মাছ লুটপাট করে নিয়ে যায়। বর্তমানে দিঘীর ইজারাদাররা এপ্রিল মাসে
দিঘী বুঝে পেয়ে কিছু মাছের পোনা উম্মুক্ত করে। কিন্তু বড়শি প্রতিযোগীতা
দেওয়ার মত মাছ দিঘীতে নেই।
দিঘীরপাড়ের বাসিন্দা সামছুল হক জানান,
চৌদ্দগ্রামসহ আশে-পাশের সবাই জানে দিঘীতে কোন মাছই নেই। তাই ঢাকা,
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী এলাকায় লিফলেট ছাপিয়ে তাদের আকৃষ্ট করে
উচ্চম‚ল্যে টিকেট বিক্রি করে বড়শি প্রতিযোগিতার নামে মাছ শিকারীদের সাথে
প্রতারণা করছে।
দিঘীর পাড়ের কেছকিমুড়া গ্রামের হানিফ মিয়া জানান, মাছ
শ‚ণ্য দিঘীতে বড়শি প্রতিযোগীতার বিষয়টি আয়োজক ফখরুল ইসলামের কাছে জানতে
চাইলে সে ধমকি দিয়ে বলেন, তোমাদের এত কথা বলার দরকার আছে। এখানে ফেনি,
কুমিল্লার ডিসি-এসপি, সচিবসহ অনেক উচ্চ পর্য়ায়ের লোক উপস্থিত থাকবে।
চিওড়া
মৎস্য চাষী সমবায় সমিতি লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক সফিউল ইসলাম জানান, দিঘীটি
লিজ নেওয়ার পর থেকেই আমাদের সমিতির সভাপতি ফখরুল ইসলাম ফয়সাল কিছু কুচক্রি
মহলের উন্ধনে নানান তালবাহানা শুরু করে। সে মানুষ ঠকানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে
যার ফলে তার সাথে আমাদের সমিতির অপরাপর সদস্যদের মতবিরোধ তৈরী হয়। এরই
মধ্যে দিঘী লিজ নেওয়ার মাত্র ৫ মাসের মাথায় ফখরুল ইসলাম একক মতামতে বড়শি
প্রতিযোগীতার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করে। আমি এমন
অন্যায় কাজ মেনে নিতে পারিনা বলে উক্ত বড়শি প্রতিযোগীতা বন্ধের জন্য
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন
করেছি। আশা করি, এটি বন্ধের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ
করবে।
মাছ শ‚ণ্য দিঘীতে বড়শি প্রতিযোগীতার বিষয়ে “চিওড়া মৎস্য চাষী
সমবায় সমিতি লিঃ” সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, আমার অন্য চাষকৃত দিঘী থেকে মাছ
এনে জগন্নাথদিঘীতে উম্মুক্ত করা হয়। লিজ নেওয়ার মাত্র ৫ মাসের মাথায় এমন
প্রতিযোগীতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে জানায়, আমরা ইতিমধ্যে দিঘীতে মোটা অংকের
টাকা বিনিয়োগ করেছি। তা তো এখান থেকে ব্যবসা করে তুলে নিতে হবে। আর এটাই
আমার বিজনেস।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জামাল
হোসেন জানান, দিঘীটি লিজ দেওয়া হয়েছে ভ‚মি মন্ত্রণালয় থেকে। আমরা মাছ শ‚ণ্য
দিঘীতে বড়শি প্রতিযোগীতার নামে মৎস্য শিকারীদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে
এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। সেই আলোকে উপজেলা সমবায় অফিসারকে বিষয়টি দেখার
জন্য বলা হয়েছে।
