কুমিল্লার
দেবিদ্বারে মারিয়া আক্তার মরিয়ম (২০) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু
নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারিয়ার মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে
প্রচার করা হলেও নিহতের পরিবার দাবি করেছে, তাকে নির্যাতন করে মুখে বিষ
ঢেলে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার উপজেলার মোহানপুর ইউনিয়নের কুরুইন গ্রামে এ
ঘটনা ঘটে। তবে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নিহত মারিয়ার পরিবার গণমাধ্যমের
কাছে এমন দাবি করেন।
নিহত মারিয়া আক্তার মরিয়ম দেবিদ্বার পৌর এলাকার
বারেরা চানগাজি বাড়ির মো.আবুল হাশেমের মেয়ে। দেড় বছর আগে উপজেলার মোহনপুর
ইউনিয়নের করুইন গ্রামের আবদুল বারেক মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে তাঁর
বিয়ে হয়। সে পেশায় সিএনজি চালক। মারজিয়া আক্তার নামে তাদের দেড় বছরের একটি
কন্যা সন্তান রয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে মারিয়া ভালোবেসে
মিজানকে বিয়ে করেন। প্রথমে বিয়েতে মারিয়ার পরিবার রাজী না হলেও পরে মারিয়ার
পীড়াপীড়িতে রাজি হয়। বিয়ের কয়েকদিন পর থেকেই মিজান ও তার পরিবার মারিয়াকে
তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের তিন লাখ টাকা নিতে চাপ দেয় এই টাকা দিতে
অস্বীকৃতি জানালে মারিয়াকে নির্যাতন চালায় মিজান ও তার পরিবার।
নিহত
মরিয়মের ছোট ভাই মো. শাকিল বলেন, মিজান দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ছিলেন। এ
নিয়ে তাদের সংসারে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো। সম্প্রতি মিজান তার বোনের বাড়ি
দেবিদ্বার উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের প্রতিবেশী এক ভাগনির সঙ্গে পরকীয়ায়
জড়িয়ে পড়েন। এটি ফোনে ছবি দেখার পর তার জানাজানি হয়। তিনমাস আগে তাদের
দুইজনকে ঢাকার একটি হোটেলে হাতে-নাতে ধরা হয়। পরে মিজানের বড় হারুণ
চট্টগ্রামের তার বাসায় নিয়ে একটি সালিশ বৈঠক করেন, সেখানে মিজান অনৈতিক
সম্পর্কের কথা স্বীকার করে আর এমন কাজ করবে না বলে অঙ্গীকার করেন।
মারিয়ার
ভাই মো. শাকিল অভিযোগ করে বলেন,“আমার বোনকে মাদকাসক্ত মিজান প্রায়ই মারধর
করত। এমনকি চট্টগ্রামে তার বোনের বেড়াতে নিয়ে গিয়ে তাকে দিয়ে গার্মেন্টসে
কাজ করিয়েছে। কিছুদিন আগে মারধর করে বোনকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে।
নিহতের
মারিয়ার বাবা আবুল হাশেম বলেন, চট্টগ্রাম থেকে আমার মেয়েকে বাড়িতে এনে
নির্যাতন করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে
না। তার দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মরিয়ম প্রায় সময় বলত, ‘বাবা,
আমার কিছু হলে আমার মেয়েকে কে দেখবে ?
আবুল হাশেম আরও বলেন, গত সোমবার
রাতে তার স্বামীর বাড়ির লোকজন মুমূর্ষ অবস্থায় মেয়েকে চান্দিনা উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়, সেখান থেকে আমাকে ফোনে খবর দেওয়া হয় যে
মরিয়ম বিষ খেয়েছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি মেয়েকে নিচে ফেলে রাখা হয়েছে,
আমাকে দেখে শেষবার শুধু বলছিল ‘বাবা, আমার মেয়েকে দেখে রাখিও। এরপর তাকে
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঢাকার ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে
নেওয়া হয়। সেখানে তিন দিন আইসিইউতে থাকার পর বুধবার রাতে আমার মেয়ে মারা
যায়। তার শরীরে নির্যাতনের দাগ ছিল। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার
দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে মিজানের ফোন নম্বরে কল করলে তার ব্যবহৃত ফোন
নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার বড় দুলাভাই হারুনুর রশিদ বলেন, মিজানের
সঙ্গে আমার বাড়ির এক মেয়ের পরকীয়া সম্পর্কে ছিল এটা আমরা পরে জানতে পারি।
তবে তাকে হত্যা করা হয়নি, সে বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে।
দেবিদ্বার
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সামছুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, এ ঘটনায়
থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো পায়নি,
নির্যাতন করে হত্যা করা হলে অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তর করা
হবে।