কুমিল্লা
ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে ফিরলেন অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার ভূঁইয়া।
বুধবার অধ্যক্ষ কলেজে ফিরেছেন এবং কলেজ আয়োজিত জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে
আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকে সভাপতিত্বের বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও এদিন গেল
সোমবার অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি তুলে প্রফেসর আবুল বাশার ভূঁইয়াকে লাঞ্ছিত
এবং নাজেহাল করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি
কলেজ শিক্ষক কাউন্সিল, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন শিক্ষর্থীরা কখনও তাদের কলেজ অধ্যক্ষকে
ঘন্টার পর ঘন্টা উচ্চমাধ্যমিক শাখার প্রশাসনিক ভবন এবং মসজিদে অবরুদ্ধ রেখে
লাঞ্ছিত করতে পারেন না। এর পিছনে অবশ্যই কোন ষড়যন্ত্রের চক্র লিপ্ত
রয়েছেন। তদন্ত করে চক্রান্তকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন
তারা।
মানববন্ধনে শিক্ষকরা আরও বলেন, কলেজ ক্যাম্পাস, আবাসিক হল এবং
ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেলের জলাবদ্ধতা নিরসন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও
ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ শিক্ষার্থীদের যে ৯ দফা দাবি, সেগুলো সময়
স্বল্পতার বিষয়। তারপরও অধ্যক্ষ তাদের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন এবং দ্রুত
সময়ের মধ্যে গুরুত্ব বুঝে সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু তারপরও অধ্যক্ষকে
সেই সুয়োগটা না দিয়ে ইন্ধনদাতা ও ষড়যন্ত্রকারীদের পাদে পা দিয়ে সুযোগ
সন্ধানী ছাত্র নামদারী কিছু সংখ্যক ব্যক্তি অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করেন।
পরবর্তীতে অবরুদ্ধ অবস্থায় উচ্চমাধ্যমিক শাখা মসজিদে একপ্রকার আটক রেখে
পদত্যাগের জন্য চাপপ্রয়োগ করা হয়। এটি ছিল একটি নজিরবিহীন কাণ্ড। এ
কর্মকাণ্ড কোন শিক্ষার্থীর ধারায় সম্ভব নয়। ওই দিনের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল
বাশার ভূঁইয়ার সাথে ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন কর্মকাণ্ডে পুরো শিক্ষক সমাজ
অপমানিত হয়েছেন।
ভিক্টোরিয়ার অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার ভূঁইয়া
ক্যাম্পাসে ফিরেছেন এ বিষয়ে কলেজ শিক্ষক ও বিসিএস-জেনারেল এডুকেশন
এসোসিয়েশন কেন্ত্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর জহিরুল হক স্বপন বলেন,
সোমবার প্রায় ৭ ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখা হয় অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার
ভূঁইয়াকে। এসময় ষড়যন্ত্রকারীরা অধ্যক্ষকে অন্যায়ভাবে পদত্যাগের জন্য
লাঞ্ছিত ও নাজেহাল করেন। ওই কর্মকাণ্ড শুধু ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষকবৃন্দ
নয়, পুরো শিক্ষক সমাজ অপমানিত হয়েছে। পরে সোমবার রাত ১১টায় শিক্ষা
মন্ত্রনালয়ের সচিব, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপের
মাধ্যমে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া অধ্যক্ষকে উদ্ধার করেন প্রশাসন। পরে অধ্যক্ষ
ক্যাম্পাসে আর না ফেরার কথা বললেও কলেজের স্বার্থে শিক্ষক সমিতি, কর্মচারী
সমিতির অনেক অনুরোধের পর তিনি ক্যাম্পাসে ফিরেন। ক্যাম্পাসে ফিরে বুধবার
অধ্যক্ষ কলেজ আয়োজিত জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকে
সভাপতিত্বের বক্তব্য রাখেন।
এর আগে গেল ১৪ জুলাই অধ্যক্ষ পদত্যাগের
একদফা দাবিতে প্রায় ৭ ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া
সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভুঁইয়াকে। বেলা ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা
পর্যন্ত কিছুক্ষণ পরীক্ষা ভবনে ও পরে মসজিদের ভেতরেই অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে
রাখে শিক্ষার্থীরা। এদিকে কলেজের হল গুলো থেকেও শিক্ষার্থীদের পদত্যাগ
আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা গেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে
শিক্ষার্থীরা ৯ দফা জানায় এবং দুই কার্যদিবস সময় দেয়। সোমবার (১৪ জুলাই)
কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে তারা বিভিন্ন স্লোগানে অধ্যক্ষের পদত্যাগ
দাবি করে আন্দোলন চালায়। শিক্ষার্থীদের দেয়া ৯ দফা দাবি হলো, কলেজে
গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন, ডিগ্রি
শাখার জন্য পৃথক ও আধুনিক ক্যাম্পাস স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত
লাইটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার, বহিরাগত, মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের
দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে
বাস ও মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু, আবাসিক হল ও আশপাশের হোটেল এলাকায়
জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানি, আধুনিক ওয়াশরুম এবং যুগোপযোগী শিক্ষার পরিবেশ
নিশ্চিত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আলাদা ফান্ড গঠন,
কলেজের সব ধরনের আয়-ব্যয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।