বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২
এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে
গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্র
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ১:১২ এএম |


গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্রজাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। হাতবোমা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের বিকট শব্দ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ এবং মানুষের চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে।
এই অবস্থায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধরা জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, “জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।”
গোটা শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সবশেষ চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এসব হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছেন। তবে সেই সংখ্যা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।
এনসিপির এই পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলানো হয়।
বুধবার সকালে এনসিপি নেতারা গাড়িবহর নিয়ে শহরে ঢোকার আগেই পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে ইউএনওর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
এসবের মধ্যে বুধবার বেলা দেড়টার দিকে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে এসে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায় বলে এনসিপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নেতারা পুলিশি নিরাপত্তায় টেকেহাট হয়ে মাদারীপুর যাওয়ার পথে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার মুখে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জে আটকা পড়েছেন। তারা এখন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আছে বলে বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের খবরে বলা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে এনসিপির একজন নেতাকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা গেছে।
এ সময় শহরের পৌর পার্কের পাশেই জেলা প্রশাসকের বাসভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করা হয় বলে সেখানে দায়িত্বরত একজন সাংবাদিক জানান।
আরেকজন সংবাদকর্মী জেলা কারাগারে হামলার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ৪টার দিকে কারাগারের ফটকে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। কবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে হামলাকারীরা কারাগারের ভেতর যেতে পারেননি; কারাগারের কোনো আসামিও বাইরে আসতে পারেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশস্থলের চেয়ারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম রাস্তায় এনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে প্রচুর গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সমাবেশ এলাকায় আগুন দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারা চৌরঙ্গী মোড়ে রয়েছেন। সেখানে প্রচুর লোকজন। তাদের হাতে লাঠি দেখা গেছে।
তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করছেন। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তাদের পিছু হটানোর চেষ্টা করে। শহরে থমথমে পরিস্থিতি দেখা গেছে।
এদিকে বিকালে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে এনসিপি নেতাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
বিকালে অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম) খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, “এনসিপির নেতা কর্মীরা গোপালগঞ্জ এসপি অফিসে আটকা ছিলেন। পরে সোয়া ৫টার দিকে ‘ক্লিয়ার’ হলে তারা চলে যান।”

হাসপাতালে ৪ লাশ:
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত গোপালগঞ্জ শহরে অন্তত চারজন নিহত হওয়ার খবর এসেছে।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বুধবার রাত ৮টায় বলেন, “আমাদের এখানে চারজনের মরদেহ আনা হয়েছে।”
নিহতরা হলেন– শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রজমান কাজী (১৯), শহরের শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম) খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা তিনজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে এই সংখ্যা বাড়তে পারে।
দুপুর থেকে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘাতে বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
এনসিপির এই পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলানো হয়।
বুধবার সকালে এনসিপি নেতারা গাড়িবহর নিয়ে শহরে ঢোকার আগেই পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে ইউএনওর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
এসবের মধ্যে বেলা দেড়টার দিকে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে এসে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নেতারা পুলিশি নিরাপত্তায় টেকেহাট হয়ে মাদারীপুর যাওয়ার পথে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে ফের হামলা হয়।
এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ পরিস্থিতিতে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। দুপুরে জেলা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। পরে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারির কথা জানায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

















http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্র
কারফিউয়ের গোপালগঞ্জে থমথমে রাত
কুমিল্লায় চোর সন্দেহে ‘গণপিটুনিতে’ আহত যুবকের মৃত্যু
গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লায় মহাসড়ক অবরোধ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় চোর সন্দেহে ‘গণপিটুনিতে’ আহত যুবকের মৃত্যু
কুমিল্লার- লালমাই ৪০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোতেই পারাপার
চান্দিনার পৌরসভার সাবেক মেয়র মফিজ গ্রেফতার
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও আগুন
কুমিল্লায় ডিম চোর আটক
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২